পবিত্র কোরআনের আলো-যারা আন্তরিক সৎ লোক ও শ্রমজীবীদের বিদ্রূপ করে তারা ক্ষমা পাবে না
৭৮. আলাম ইয়া'লামূ আন্না ল্লা-হা ইয়া'লামু ছির্রাহুম ওয়ানাজওয়া-হুম ওয়া আন্নাল্লাহা আ'ল্লা-মুল গুইঊব।৭৯. আল্লাযীনা ইয়াল্মিযূনাল মুত্ত্বাওয়্যীইনা মিনাল মু'মিনীনা ফি চ্ছা-দাক্বা-তি ওয়াল্লাযীনা লা-ইয়াজিদূনা ইল্লা- জুহদাহুম ফাইয়াছ্খারূনা মিনহুম; ছাখিরা ল্লা-হু মিনহুম; ওয়ালাহুম আ'যা-বুন আলীম।
৮০. ইছতাগ্ফির লাহুম আও লা-তাছ্তাগ্ফির লাহুম; ইন তাছ্তাগ্ফির লাহুম ছাব্ঈ'না মার্রাতান ফালাইঁ ইয়্যাগ্ফিরাল্লাহু লাহুম; যা-লিকা বিআন্নাহুম কাফারূ বিল্লাহি ওয়ারাছূলিহী; ওয়াল্লা-হু লা-ইয়াহ্দিল ক্বাওমাল ফা-ছিক্বীন। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৭৮-৮০]
অনুবাদ : ৭৭. অতঃপর আল্লাহ তাদের অন্তরে কপটতা বদ্ধমূল করে দিলেন, সেদিন পর্যন্ত যে তারা আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে। কেননা তারা আল্লাহর প্রতি তাদের যে অঙ্গীকার ছিল, তার বরখেলাপ করেছে এবং এভাবেই তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।
৭৮. তারা কি জানে না যে আল্লাহ তাদের সব গুপ্ত বিষয় ও তাদের কানাকানি সম্পর্কে অবগত এবং অদৃশ্যের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞান আছে?
৭৯. এরা তো সেই সব লোক, যারা মুমিনদের মধ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে দান করে তাদের দোষারোপ করে, আর যারা নিজেদের শ্রমের ওপরে জীবন যাপন করে_তাদেরও তারা বিদ্রূপ করে। এর ফলে আল্লাহ তাদের বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
৮০. (হে নবী) আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর না করেন সমান কথা। আপনি যদি তাদের জন্য সত্তরবার অর্থাৎ অসংখ্যবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবু আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। তা এ কারণে যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি অবাধ্য হয়েছে। আল্লাহ পাপাচারীদের সঠিক পথ দেখান না।
ব্যাখ্যা : ৭৭ নম্বর আয়াতে মুনাফিক ও কপট লোকদের চরিত্র যে এ রকম, সেটাও আল্লাহ নির্ধারিত বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সেটা এ কারণে যে তাদের নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডই তাদের এ জায়গায় নিয়ে গেছে। আসলে তকদির বা নিয়তির বিধান বলে যা বলা হয়েছে, সেটাও কর্মফল। মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই কর্মফল দ্বারা চালিত হয় এবং মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার সময় তা দেখতে পায়। আর মানুষ সৃষ্টির আদি থেকে মানবিক দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
৭৮ নম্বর আয়াতে কপট মানুষদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর কাছে যে কোনো কপটতা চলে না, তা চিরন্তন সত্য। আল্লাহ মানুষের মনের খবর রাখেন, তার সব গুপ্ত বিষয় জানেন এবং বিশ্বজগতের দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।
৭৯ নম্বর আয়াতে অর্থের সুষম ব্যবহার, দান-খয়রাত এবং শ্রমজীবী মানুষদের মর্যাদা দেওয়া যে খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারির ভাষায় কথা বলা হয়েছে। আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_নবী (সা.) মুসলমানদের দান-খয়রাত করতে উৎসাহ দিতেন। বিশেষ করে তাবুকের অভিযানের সময় তিনি মুসলমানদের প্রতি স্বেচ্ছাকৃত দানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে নিষ্ঠাবান মুসলিমরা যার পক্ষে যা সম্ভব ছিল তা-ই এনে রাসুল (সা.)-এর সামনে উপস্থিত করেছিলেন। কিন্তু মুনাফিক ও কপট লোকেরা এ কাজের নানা রকম সমালোচনা ও ছিদ্রান্বেষণ করতে লাগল। কেউ বেশি দান করলে তারা বলত, সে লোক দেখানোর জন্য, নাম করার জন্য এ দান করেছে; আবার কোনো শ্রমজীবী মানুষ যখন অল্প পরিমাণ দান করত তখন বলত, সে এ কী দিয়েছে? এটুকু কী কাজে লাগবে? বোখারি শরিফে এবং অন্যান্য সহিহ হাদিসগ্রন্থে ও তাফসিরে এ ধরনের বহু ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তারা বিত্তবান সৎ লোকদের আন্তরিকতাকে বিদ্রূপ করত এবং দরিদ্র শ্রমজীবীদের অক্ষমতাকেও বিদ্রূপ করত। এ ধরনের বিদ্রূপকে আল্লাহর প্রতি বিদ্রূপ বলে এই আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এদের জন্য কঠিন শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
৮০ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ছেলে একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। ইবনে উবাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ছেলে এসে রাসুল (সা.)-এর কাছে অনুরোধ জানালেন তিনি যেন তাঁর বাবার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হুজুর (সা.) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে এই আয়াতটি নাজিল হয়। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধীদের আল্লাহ ক্ষমা করেন না। ক্ষমা না করার কারণ হিসেবে আগের আয়াতে বর্ণিত দোষগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ৭৭. অতঃপর আল্লাহ তাদের অন্তরে কপটতা বদ্ধমূল করে দিলেন, সেদিন পর্যন্ত যে তারা আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে। কেননা তারা আল্লাহর প্রতি তাদের যে অঙ্গীকার ছিল, তার বরখেলাপ করেছে এবং এভাবেই তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।
৭৮. তারা কি জানে না যে আল্লাহ তাদের সব গুপ্ত বিষয় ও তাদের কানাকানি সম্পর্কে অবগত এবং অদৃশ্যের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞান আছে?
৭৯. এরা তো সেই সব লোক, যারা মুমিনদের মধ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে দান করে তাদের দোষারোপ করে, আর যারা নিজেদের শ্রমের ওপরে জীবন যাপন করে_তাদেরও তারা বিদ্রূপ করে। এর ফলে আল্লাহ তাদের বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
৮০. (হে নবী) আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর না করেন সমান কথা। আপনি যদি তাদের জন্য সত্তরবার অর্থাৎ অসংখ্যবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবু আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। তা এ কারণে যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি অবাধ্য হয়েছে। আল্লাহ পাপাচারীদের সঠিক পথ দেখান না।
ব্যাখ্যা : ৭৭ নম্বর আয়াতে মুনাফিক ও কপট লোকদের চরিত্র যে এ রকম, সেটাও আল্লাহ নির্ধারিত বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সেটা এ কারণে যে তাদের নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডই তাদের এ জায়গায় নিয়ে গেছে। আসলে তকদির বা নিয়তির বিধান বলে যা বলা হয়েছে, সেটাও কর্মফল। মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই কর্মফল দ্বারা চালিত হয় এবং মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার সময় তা দেখতে পায়। আর মানুষ সৃষ্টির আদি থেকে মানবিক দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
৭৮ নম্বর আয়াতে কপট মানুষদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর কাছে যে কোনো কপটতা চলে না, তা চিরন্তন সত্য। আল্লাহ মানুষের মনের খবর রাখেন, তার সব গুপ্ত বিষয় জানেন এবং বিশ্বজগতের দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।
৭৯ নম্বর আয়াতে অর্থের সুষম ব্যবহার, দান-খয়রাত এবং শ্রমজীবী মানুষদের মর্যাদা দেওয়া যে খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারির ভাষায় কথা বলা হয়েছে। আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_নবী (সা.) মুসলমানদের দান-খয়রাত করতে উৎসাহ দিতেন। বিশেষ করে তাবুকের অভিযানের সময় তিনি মুসলমানদের প্রতি স্বেচ্ছাকৃত দানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে নিষ্ঠাবান মুসলিমরা যার পক্ষে যা সম্ভব ছিল তা-ই এনে রাসুল (সা.)-এর সামনে উপস্থিত করেছিলেন। কিন্তু মুনাফিক ও কপট লোকেরা এ কাজের নানা রকম সমালোচনা ও ছিদ্রান্বেষণ করতে লাগল। কেউ বেশি দান করলে তারা বলত, সে লোক দেখানোর জন্য, নাম করার জন্য এ দান করেছে; আবার কোনো শ্রমজীবী মানুষ যখন অল্প পরিমাণ দান করত তখন বলত, সে এ কী দিয়েছে? এটুকু কী কাজে লাগবে? বোখারি শরিফে এবং অন্যান্য সহিহ হাদিসগ্রন্থে ও তাফসিরে এ ধরনের বহু ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তারা বিত্তবান সৎ লোকদের আন্তরিকতাকে বিদ্রূপ করত এবং দরিদ্র শ্রমজীবীদের অক্ষমতাকেও বিদ্রূপ করত। এ ধরনের বিদ্রূপকে আল্লাহর প্রতি বিদ্রূপ বলে এই আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এদের জন্য কঠিন শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
৮০ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ছেলে একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। ইবনে উবাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ছেলে এসে রাসুল (সা.)-এর কাছে অনুরোধ জানালেন তিনি যেন তাঁর বাবার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হুজুর (সা.) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে এই আয়াতটি নাজিল হয়। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধীদের আল্লাহ ক্ষমা করেন না। ক্ষমা না করার কারণ হিসেবে আগের আয়াতে বর্ণিত দোষগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments