চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-গন্তব্য জাপান by নিজাম সিদ্দিকী

‘একসময় মেডিকেলে ভর্তি হতে না পেরে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এখন সেই হতাশা কেটে গেছে। মনে হচ্ছে, আমিও অনেক কিছু করতে পারব। নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারি।’ জাপান ঘুরে আসার পর সোহানার চিন্তাধারা আমূল পাল্টে গেছে। সেখানে সবার কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা মিনাকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়।


আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় শতগুণ। সকাল থেকে সন্ধ্যা নিরলসভাবে ল্যাবে কাজ করছেন সবাই, কোনো রকম ক্লান্তি নেই কারও চোখে-মুখে। সোহানা জাপানের সোকেন দাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে যান গত বছরের ৪ নভেম্বর। ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। সারা বিশ্বের মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থী ওই প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
সোহানা আকতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
সোহানা ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি আবেদন করেন। আর বাছাই শেষে মনোনীত হওয়ার খবর আসে মার্চে। এখানে পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার সব খরচই বহন করে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরুতে কিছুটা উৎকণ্ঠা ছিল। কিন্তু জাপানে পৌঁছার পর সব উৎকণ্ঠা কেটে যায়। মুগ্ধ হয়ে যান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যবহারে। সোহানার থাকার ব্যবস্থা হয় সেখানে একটি বাঙালি পরিবারের সঙ্গে।
সোহানা প্রশিক্ষণ নেন ‘সেল সিগন্যালিং’-এর শিক্ষক তুমিনাগোর অধীনে। সেখানে সকাল নয়টার আগেই বেরিয়ে যেতে হতো। কাজ চলত রাত সাত-আটটা পর্যন্ত। প্রথম কয়েক দিনে অভ্যস্ত করে তোলার জন্য তুমিনাগো তাঁকে বিভিন্ন সেমিনারে নিয়ে যেতেন। ঘুরে দেখাতেন ল্যাবের বিভিন্ন দিক। এখানে ভারত, চীন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে।
সোহানা জানান, ‘আমাকে দুই মাসের কাজ এত কম সময়ে শেষ করতে হয়েছে বলে কিছুটা বাড়তি চাপ নিতে হয়েছে। কিন্তু এটাকে খুব বোঝা মনে হয়নি। কারণ, এখানে সবাই কাজ করছেন দিন-রাত। সর্বাধুনিক ল্যাব রয়েছে। সেখানে যে যার মতো করে কাজ করছেন। কোনো সমস্যা নেই কোথাও।’
সোহানা আগামীতে ‘স্থূলতা ও ডায়াবেটিস রোগ’ নিয়ে এমএস ও পিএইচডি করবেন জাপানে। তাঁর মতে, ‘আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। এটি একটি অপরটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।’
তুমিনাগো তাঁর গবেষণাকাজের জন্য মিনিকুশিকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে সেখানে। তাতে পাস করেছেন। অনার্সের ফল দেরিতে প্রকাশিত হওয়ায় সোহানার জাপান যাওয়ার ক্ষেত্রেও দেরি হয়ে যায়। আগামী বছরের এপ্রিলে আবার জাপান যাবেন।
সোহানার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর সহপাঠী নূর মোহাম্মদও এ বছর জাপানে উচ্চতর শিক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সে নিউরো বায়োলজি ও বায়োইনফরমেটিক্সে কাজোহিরো ইককেনাতোর অধীনে কাজ করবেন। আগামী জুন মাসে যাবেন। নিউরো সায়েন্স নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা আছে। পারকিনসন, আলঝেইমার, হান্টিংটন প্রভৃতি রোগের ব্যাপারে তাঁর গবেষণা অনেক বেশি কাজে লাগবে বলে জানান।
নূর মোহাম্মদ ও সোহানা আকতার দুজনই মনে করেন, গবেষণাক্ষেত্রে বাংলাদেশও অনেক এগিয়ে যেতে পারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে।

No comments

Powered by Blogger.