বাজার চলছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে by ড. এ কে মনোওয়ার উদ্দিন আহমদ
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বিশেষ করে যাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, সেসব দেশে মূল্যস্ফীতির চিত্রও প্রীতিকর নয়। বাজার চিত্র যে এ সরকারের আমলেই উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে তা নয়। কয়েক বছর ধরেই তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে উদ্বেগজনক হলো, ক্রমান্বয়ে দাম বাড়ছেই।
সাধারণ মানুষের কাছে যেসব ভোগ্যপণ্য নিত্যপ্রয়োজন সেসবের মূল্য অর্থাৎ সিলেকটিভ কিছু পণ্যের ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনীতিশাস্ত্রে বাজার একটি প্রক্রিয়া। বাজারের সূত্র মেনেই বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সে সূত্র অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও সত্য, বাজার চলছে কিছুসংখ্যক ক্ষমতাবান অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে। তা ছাড়া আমাদের পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশি মুদ্রায়। আমাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেই চলেছে। এরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। দফায় দফায় বাড়ছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম। এরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে। একই সঙ্গে 'সিন্ডিকেট' নামক শব্দটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে খুব বেশি শোনা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারের নির্দিষ্ট সংস্থা আছে, যারা বাজারে তদারকি করে এবং সিন্ডিকেট নামক অশুভ শক্তিকে তারা দমিয়ে রাখে। যাঁরা ব্যবসা করে তাঁরা লাভ করবেনই। প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁদের লাভের মাত্রা কতটা হবে? এ দেশের সিংহভাগ মানুষ নিম্ন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীভুক্ত, তাদের জীবনযাত্রা একেবারেই ছকে আঁকা। একটু এদিক-সেদিক হলেই এর বিরূপ প্রভাব তাদের ওপর পড়ে। এই শ্রেণীভুক্তদের জন্য সরকারের বিশেষ কিছু পদক্ষেপ দরকার। অর্থাৎ তাদের যেসব ভোগ্যপণ্য নিত্য দরকার, যেমন ভোজ্য তেল, আটা, ডাল, চাল ইত্যাদির দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখার প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেওয়া। এখানে এ প্রসঙ্গে টিসিবির কথা বলা যায়। টিসিবি একসময় অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ডসর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভ্রান্তনীতি দায়ী। অতীতে এর আকার ও ক্ষমতা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। টিসিবি ব্যবসা করে না বটে; কিন্তু এর পরিচালনায় যাঁরা থাকবেন তাঁদের বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। আমলাতন্ত্রের খপ্পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বের করে ঢেলে সাজাতে হবে। ব্যবসা বোঝেন এমন অভিজ্ঞ মানুষের হাতে টিসিবির দায়িত্ব দিতে হবে। এমন চিত্রও দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্যের দাম বাড়েনি কিংবা আমাদের আমদানি করতে হয় না, সেসব পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এ ক্ষেত্রে অসাধুদের কারসাজির বিষয়টি স্পষ্ট। এযাবৎ সরকার দৃশ্যত বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ কম নেয়নি বটে; কিন্তু ফল শূন্য। কারণ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারে হস্তক্ষেপের যে স্বাভাবিক নিয়ম বা সূত্র আছে, এ ক্ষেত্রে সেসব মানা হয়নি। সব ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগে সব কিছু হয় না। তবে যারা অতি মুনাফার লোভে সাধারণ মানুষের পকেটে ছুরি চালাতে তৎপর রয়েছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি স্বচ্ছতা-দায়বদ্ধতা-জবাবদিহিতার পাঠ পোক্ত করা চাই। সরকারের কাছ থেকে ডিলারশিপ নিয়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া নীতিমালা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের ফায়দা লুটেছেন কিংবা লুটছেন। তাঁদের ব্যাপারে মৌন থাকলে চলবে না। অর্থনীতিবিদ, বাজার বিশ্লেষক বা বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সরকারের একটি কমিটি গড়া দরকার।
গ্রন্থনা : দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু ও মোস্তফা হোসেইন
গ্রন্থনা : দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু ও মোস্তফা হোসেইন
No comments