সরকারের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাই দায়ী by ব্যারিস্টার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মিয়া

ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারছি বাজার পরিস্থিতি কী? কোন জিনিসের কথা বলবেন? এমন কোনো জিনিস নেই, যা এই সরকারের আমলে দাম বাড়েনি। বিদ্যুতের কথাই ধরা যাক। অতিসম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বলা হচ্ছে, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় ছিল না সরকারের কাছে।


এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তার পরও যদি মনে করা হয়, এটাই একমাত্র পথ তা হলে প্রশ্ন আসে, এই পথটা তৈরি করেছে কে? এর কোনো বিকল্প কি ছিল না? কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় গেল সরকার। কী পেলাম আমরা? বিনা টেন্ডারে এই উৎপাদন ব্যবস্থার সুবিধা করে দিল সরকার। এখন পিডিবির তিন-চার গুণ বেশি মূল্য দিয়ে কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে উৎপাদন ব্যবস্থার আগে সরকারের চিন্তাভাবনা করা দরকার ছিল। সরকারের মধ্যে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে শক্তভাবে। কয়েক দিন আগে অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। অর্থমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি থেকেই বোঝা যায়, দেশে কী পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। আর দুর্নীতিকে সঙ্গে নিয়ে যদি কেউ মনে করে, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবে- এটা হবে মারাত্মক ভুল। সরকারের আন্তরিকতার প্রশ্নটিও বড়। সততা এবং আন্তরিকতা যদি কারো না থাকে, তাহলে তার পক্ষে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কিছু করা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাদের ব্যর্থতাগুলো প্রমাণ করে তারা কতটা অনভিজ্ঞ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অদক্ষতা। এ কারণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। আর অব্যবস্থাপনা যখন উৎপাদনের সঙ্গী হয় তখন উৎপাদনে তার প্রভাব পড়বেই। সে ক্ষেত্রে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ার জন্য দ্রব্যমূল্য একটি প্রধান বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হবেই।
জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সরকার সেদিকে নজর দিতে পারছে না। তারা সর্বতো চেষ্টা করছে জাতিকে বিভক্ত করে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে। জাতিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে কি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব? বিভক্তির রেশ তো বাজারে পড়বেই। পড়েছেও। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরো খারাপ কিছু আমাদের দেখতে হতে পারে। সরকারকে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে। কোন কাজটি আমি আগে করব- সেই ধারণা যদি আমার না থাকে, তা হলে বড় সমস্যাই শুধু নয়, ছোট সমস্যাগুলোও বড় অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বলা হয় বিশ্ব্যব্যাপী তেলের দাম বেড়েছে, তাই বেড়েছে বাংলাদেশেও। বিশ্বে তেলের দাম সাময়িকভাবে বেড়েছে। কিন্তু সেটাই যদি একমাত্র সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের আরো বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশ্বে তেলের দাম কত ভাগ বেড়েছে! আমরা কতটা বাড়িয়েছি। তার পরও যুক্তির খাতিরে যদি মেনে নিই, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে, তাই আমাদেরও তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে। আর সে কারণে সব উৎপাদনেই এর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কমে তখন কি আমরা কমাই? মূলত বিশ্ববাজারকে আমরা দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর উদাহরণ হিসেবেই দেখে থাকি। মানুষের কথা আমাদের ভাবতে হবে এবং দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। সততা ও দেশপ্রেম দৃঢ়তর হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.