সুতা আমদানির নামে আনা হয়েছে বিএমডবি্লউ ও অডি গাড়ি by সারোয়ার সুমন

লি্লশ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারটির চারপাশ ছিল কার্টনে ঘেরা। কনটেইনারটির সামনের ভাগের কার্টনে রাখা হয়েছে ফটোকপিয়ার মেশিন। অন্য পাশে সুকৌশলে রাখা হয়েছে এলসিডি ও এলইডি টেলিভিশন। কাঠের একটি পাটাতন দিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছিল ফটোকপিয়ার ও টেলিভিশনগুলো। এরপর রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে আস্ত দুটি গাড়ি। এর একটি অত্যাধুনিক বিএমডবি্লউ মডেলের, অন্যটি অডি মডেলের। ১৯ দশমিক ৮ টন সুতা আমদানির


ঘোষণা দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের এসব গাড়ি ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী সিঙ্গাপুর থেকে নিয়ে আসে সাভার ডিইপিজেডের আমদানিকারক গোল্ড টেক্স লিমিটেড। সুতার ঘোষণা দিয়ে এভাবে বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে আসার ঘটনা চট্টগ্রাম বন্দরে এটিই প্রথম। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৩০ নভেম্বর দাখিলকৃত আমদানি চালানে (বিল অব এন্ট্রি) দেখা যায়, এ প্রতিষ্ঠানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটের
ডিটি রোডের
শিমুল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। ডিইপিসিওএও১৩৮১৮৯ এলসি মূলে কনটেইনারটি ১৯ নভেম্বর ইনভয়েস হয়েছে। ৬৭ হাজার ৪৩৫ ডলার দিয়ে ৪০০টি কার্টনে করে ১৯ দশমিক ৮ টন সুতা সিঙ্গাপুর থেকে আনা হচ্ছে বলে বিল অব এন্ট্রিতে (সি-১০২৯৮৯) উল্লেখ আছে। বিজয় দিবসের ছুটির ফাঁকে কনটেইনারটি ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে আমদানিকারক ও তার মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান। কনটেইনারটি খালাস করতে ১৭ ডিসেম্বর একটি লরিও বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-২ গেটে স্থাপিত স্ক্যানিং মেশিনের ইমেজে কনটেইনারের ভেতর দুটি প্রাইভেট কারের ছবি দেখতে পায় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গে চালানটি আটক করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানকে উপস্থিত থাকতে ইস্যু করা হয় চিঠি। বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত করতে যুগ্ম কমিশনার জুয়েল আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে দেন কাস্টম কমিশনার ড. মারুফ উল ইসলাম। বিল অব এন্ট্রিতে উলি্লখিত ঠিকানায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করে তারা। ঘটনার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লাপাত্তা হয়ে যায়। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার নির্ধারিত সময়ে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কেউ কাস্টম হাউসেও উপস্থিত হয়নি। বিকেল সাড়ে ৩টায় সংশ্লিষ্ট কমিটি কনটেইনারটি খুলে এর ভেতরে থাকা এলসিডি টিভি, ফটোকপিয়ার ও দুটি গাড়ি জব্দ করে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকা কাস্টমসের এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, বিএমডবি্লউ-৭৩০আই মডেলের তিন হাজার সিসির গাড়িটির বাজার মূল্য অন্তত আড়াই কোটি টাকা। অডি এ-৪ মডেলের এক হাজার ৯৮৪ সিসির অপর গাড়িটিরও বাজার মূল্য অর্ধ কোটি টাকার বেশি। কনটেইনারে পাওয়া এলসিডি টিভি ও টেলিভিশনের মূল্য হিসাব করলে দেখা যায়, ঘোষণা বহির্ভূত এসব পণ্যের দাম পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কেউ যোগাযোগ না করলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.