সীমান্তে হত্যা-এমন আচরণ সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা

৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও দিনাজপুরের সীমান্তে পৃথক পৃথক ঘটনায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বা বিএসএফের গুলিতে চার বাংলাদেশি নিহত হওয়ার পর ভারত দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। সীমান্তে গুলি না চালানোর বিষয়ে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে সিদ্ধান্তের পরও কেন এ হত্যাকাণ্ড, তা খতিয়ে দেখতে ভারত সরকার একটি তদন্ত দল পাঠাচ্ছে বলেও
জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, শনিবার ভোরে কুড়িগ্রামের ধুলারকুটি, বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী দরিবাস, দিনাজপুরের বিরামপুর এবং শনিবার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্তে যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই বয়সে যুবক এবং সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ছিল। বাংলাদেশ এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ পাঠিয়েছে ভারতের কাছে।
শুধু ভারতের রাজনৈতিক নেতারাই নন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা না করার। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই দেশের রাজনৈতিক নেতারা যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এতে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএসএফের সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিএসএফ কর্তৃপক্ষের ভালো করেই জানা আছে যে এমন হত্যাকাণ্ড দুই দেশের বিরাজমান সুসম্পর্কে ভাটার সৃষ্টি করতে পারে। বিএসএফ বলেছে, সীমান্তে চোরাকারবারিরা তাদের ওপর হামলা চালালে তারা গুলি করতে বাধ্য হয়। এই ব্যাখ্যা বাস্তবসম্মত নয়। প্রথমত, সীমান্তে চোরাকারবার নতুন নয়। যারা এই চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত তারা বিএসএফ এবং বিজিবিকে ম্যানেজ করেই চোরাচালান করে থাকে। সীমান্তরক্ষীরা সর্বদাই সশস্ত্র থাকে। তাদের ওপর চোরাকারবারিরা খালি হাতে আক্রমণ করেছে, এমন দাবি নিছক আষাঢ়ে গল্প। সুতরাং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এই দায়িত্বজ্ঞানহীন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালেই শুধু হবে না, তদন্তসাপেক্ষে হত্যাকারীদের বিচার চাইতে হবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে বারবার নিশ্চয়তা দিয়েছে, শুধু রাষ্ট্রের নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে নিশ্চিত হলেই বিএসএফ গুলি করবে, অন্যথায় তারা গুলি চালাবে না। বিশেষ করে প্রাণঘাতী অস্ত্র চালাবে না। সাধারণ চোরাকারবারি কিংবা অনুপ্রবেশকারীকে প্রতিহত করার জন্য রাবার বুলেটই যথেষ্ট ছিল, যা প্রয়োজনে ব্যবহারের কথা ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছিলেন। কিন্তু তা রক্ষা করছে না ভারত। এই নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের কি বিএসএফের কাছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে হয়েছে? আমাদের জিজ্ঞাসা, যদি নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে হয়, তাহলে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে বা টিকে থাকবে কিসের ভিত্তিতে?

No comments

Powered by Blogger.