ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১২-মা, দেশ ও ভাষাকে ভালোবাসার শপথ

মুক্তিযুদ্ধ শুরু। বাড়ির মধ্যে ঢুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গৃহবধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টা। মুত্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ। পাকিস্তানিদের হত্যা করে গৃহবধূকে মুক্ত ও দেশ স্বাধীন করা। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দুরন্ত বালিকার নৃত্য।’
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১২-এর যশোর অঞ্চলের অনুষ্ঠানে গতকাল সোমবার বন্ধুসভার বন্ধুদের পরিবেশিত নাটিকায় মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের চিত্র এভাবে ফুটে ওঠে। উৎসবে শিক্ষার্থীরা মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে


‘না’ বলে এবং মা, দেশ, বাংলা ভাষা ও জাতীয় পতাকার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানোর অঙ্গীকার করে।
যশোর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় এ উৎসবের। একই দিন রংপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে রংপুর অঞ্চলের প্রতিযোগিতা।
সকাল সোয়া নয়টায় যশোরের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় বন্ধুসভার বন্ধুরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
পরে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের গণিত পরীক্ষায় অংশ নেয় যশোর, মাগুরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের ৯৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২২ জন খুদে গণিতবিদ। চারটি গ্রুপে তাদের মধ্যে ৬০ জনকে নির্বাচিত করা হয় ঢাকার জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য।
পরীক্ষা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। গণিতের উৎপত্তি কখন ও কীভাবে? কয়েকটি সংখ্যার লসাগু ঋণাত্মক হয় না কেন? উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের এ রকম অসংখ্য মজার ও জটিল প্রশ্নের সমাধান দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক রাশেদ তালুকদার, মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ এলিয়াস হোসেন, গণিতবিদ সৌমিত্র চক্রবর্তী, যশোর মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সম্রাট কুমার দে।
পরে ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে রাশেদ তালুকদার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, গণিত শেখার মাধ্যমে দেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।
যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, এই শীতের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা এ উৎসবে যোগ দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা গণিতকে ভালোবাসে।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মা, দেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর শপথ পড়ান।
এক মিনিটের আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক যশোর শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক আবু বকর মিয়া ও প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম।
রংপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে সকাল নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান মিজানুর রহমান। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল কাদির ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের গণিতের শিক্ষক আবু তালহা সিদ্দিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সোয়া এক ঘণ্টার গণিতের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট ও রংপুরের ৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খায়রুল আলম ও গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান। আমাদের মহাবিশ্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? পদার্থ ও রসায়নে গণিত প্রয়োজন হয়, জীববিজ্ঞানে কেন হয় না? শূন্য যৌগিক না মৌলিক? মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হয় কেন? আলো ছাড়া অন্ধকারে কিছু দেখতে পারি না কেন? এমন নানা জটিল ও মজার প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সাবেক অধ্যক্ষ খায়রুল আলম বলেন, ‘গণিতকে ভয় পেলে চলবে না। জয় করতে হবে।’
আরও বক্তব্য দেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাফিজুর রহমান, জিলা স্কুলের শিক্ষক শফিয়ার রহমান, প্রথম আলোর রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক প্রমুখ।
উৎসব শেষে গণিত পরীক্ষার চার গ্রুপে ৬০ জন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। জাতীয় সংগীতসহ গণিতের গান পরিবেশ করেন বন্ধুসভার বন্ধু ও অগ্নিবীণা ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা।
আজ উৎসব খুলনা ও সিরাজগঞ্জে: সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সিরাজগঞ্জ বিএল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের চত্বরে আজ মঙ্গলবার সকালে গণিত উৎসবের উদ্বোধন করবেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল ইসলাম। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেবে।
খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, খুলনা জিলা স্কুলের উৎসবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অংশ নেবে। আজ সকাল আটটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.