স্বপ্নের স্বদেশ by তাহিয়া চৌধুরী নাঈমা
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে এ দেশ শত্রুমুক্ত হয়। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় 'বংলাদেশ' নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। সেই থেকে আমরা প্রতি বছর এই দিনটিকে 'বিজয় দিবস' হিসেবে পালন করি। বিজয় মিছিল, আনন্দ উৎসবের আয়োজন করি। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধে আপনজনদের হারিয়েছেন, কেমন করে তারা দিনটি কাটান? কেন যুদ্ধাহত গেরিলারা এখনও হতদরিদ্র জীবনযাপন করেন এবং তৎকালীন পাকবাহিনীর দোসররা
আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়? এসব নিয়ে আমরা কতটুকু ভাবি?
শিল্পী আগুনের একটি জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান আছে_
আমরা সূর্যটা কেড়ে এনেছি
অনন্ত অন্ধ রাত্রি পেরিয়ে প্রভাতের সন্ধান এনেছি
আজ থেকে এই দেশে বেদনার গান কেউ গাইবে না...।
স্বাধীনতার সূর্য উঠেছে সত্য, কিন্তু রাত্রি কি পেরিয়েছে? পাল্টেছে দেশের চিত্রপট? থেমেছে বেদনার গান, নীপিড়িত মানুষের যাতনা? কিছুই হয়নি। প্রকৃত স্বাধীনতাও আমাদের জীবনে আসেনি এখনও।
ইভটিজিং, ছিনতাইয়ের ভয়ে আমরা নিরাপদে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারি না। মেয়েরা থাকে গৃহবন্দি, পাঠশালায় নানা বিড়ম্বনা, উৎকণ্ঠিত অনেক অভিভাবক নিজ কন্যাকে বাল্যবিয়ে দিয়ে বাঁচার অপচেষ্টা চালান। বেকারত্ব ও যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধির শিকার যুবসমাজ।
বেকারত্ব দূর করতে আত্মকর্মসংস্থান করতে পারি আমরা। পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা প্রভৃতির আরও প্রসার ঘটানো দরকার। কিন্তু সর্বপ্রথম দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে মানববান্ধব করতে হবে। জানি, এসব সরকার ও জনগণ উভয়ের সমন্বিত প্রয়াসেই কেবল সম্ভব। ফলে দায় এড়াতে পারি না আমরা সাধারণ মানুষও।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, স্বাধীতার দীর্ঘদিন পরও কী এক কালো মেঘে যেন ঢেকে আছে আমাদের দেশের ভ্যাগ্যাকাশ। সেই কালো মেঘের মূলে আছে স্বদেশ ও মানুষের কথা তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিস্বার্থে নিজেকে অন্ধ ও গোঁয়ারের মতো সক্রিয় রাখার প্রবণতা। এই প্রবণতা বদলাতে হবে। তাহলেই দেশটি হয়ে উঠবে স্বপ্নের দেশ। সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পাব আমরা।
পূর্ব দরগাহ গেট, সিলেট
No comments