এই দিনে-১৭৫ বছরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল
এই স্কুলে পড়েছি বলে আমি আমার দেশ-বিদেশের বন্ধুদের বলতে পারি—তোমরা জানো, আমি এমন একটা স্কুলে পড়েছি, যে স্কুল থেকে একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বের হয়েছেন। আমার বন্ধুবান্ধব চোখ বড় করে বলে, “সত্যি!”
আমি বলি, “সত্যি!” তখন আমার বুক গর্বে দশ হাত ফুলে যায়।’ শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল মাধ্যমিক স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণা করেছেন এভাবে। হ্যাঁ, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস মাধ্যমিক শিক্ষার পাট
আমি বলি, “সত্যি!” তখন আমার বুক গর্বে দশ হাত ফুলে যায়।’ শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল মাধ্যমিক স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণা করেছেন এভাবে। হ্যাঁ, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস মাধ্যমিক শিক্ষার পাট
চুকিয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। শুধুই কি ইউনূস! এ বিদ্যালয়ে পড়েছেন কবি নবীনচন্দ্র সেন, নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি ও কলকাতা করপোরেশনের পরপর তিনবার নির্বাচিত মেয়র দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেন, বরেণ্য বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম কিংবা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। নামজাদা মানুষগুলো জীবন গড়ার পাট নিয়েছেন এই বিদ্যানিকেতনে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছেন তাঁরা। জীবন-নদীর বাঁকে বাঁকে কর্ম ও কীর্তিতে স্বদেশ ছাড়িয়ে গোটা পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন তাঁরা। আর নামজাদা সেই মানুষদের বিদ্যালয়টি এগিয়ে যাচ্ছে সামনে, বড় গৌরবে মাথা উঁচু করে।
আলোকিত মানুষ গড়ার এই বিদ্যাপীঠ এবার ১৭৫ বছর পূর্ণ করেছে। এ উপলক্ষে ২৩ থেকে ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস আয়োজন করছে তিন দিনের উৎসবের। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে শোভাযাত্রা, স্মৃতিময় আড্ডা, প্রাক্তন শিক্ষক ও গুণী সংবর্ধনা, রক্তদান, স্মৃতিচারণা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পুুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে নানা বয়সী ও নানা রঙের মানুষ কৈশোরের হারানো সকাল-বিকেলগুলো খুঁজে ফিরবেন হয়তো। পুরোনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে খুলে যাবে স্মৃতির জানালা। আচমকা মনের আঙিনা ভিজিয়ে দেবে বন্ধুতার একপশলা বৃষ্টি। আর ভাঙবে যখন মিলনমেলা, বিষণ্ন বিদায়বেলায় হয়তো বাজবে সেই গান, ‘আবার হবে তো দেখা...।’
কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের সাফল্যগাথার এখানেই শেষ নয়। এই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেমন দুনিয়াজোড়া সাফল্য পেয়েছেন, তেমনি বিদ্যালয়ের উন্নত শীর শিক্ষকেরাও পরম পূজনীয় তাঁদের কাছে। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন কবি ওহীদুল আলম, আবদুস সোবহান, সাবের আহমদ, সৈয়দ আহমদ, সিরাজুল ইসলাম, হরিলাল সাহা, ডি এল সাহার মতো শিক্ষকেরা। যাঁরা ছিলেন প্রকৃত অর্থেই মানুষ গড়ার কারিগর। পরম মমতায় শিক্ষাকে করেছিলেন আনন্দময়, সৃজনশীলতার মাধ্যম। ছাত্রদের শিখিয়েছেন সাফল্যের সিঁড়ি টপকানোর মন্ত্র।
ওহীদুল আলম সম্পর্কে অধ্যাপক মাহবুবুল হক লিখেছেন, ‘আমার একজন প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। তাঁর উৎসাহেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম। আমার একটা কবিতা পড়ে তিনি হয়তো আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য টিচার্স রুমে ডেকে নিয়েছিলেন। অন্যান্য স্যারকে কবিতাটি পড়ে শুনিয়ে আমার লেখার খুব প্রশংসা করে আমাকে বলেছিলেন, আমি যেন কবিতা লেখা ছেড়ে না দিই। স্যারের সেই পরামর্শ মান্য করিনি বলে আমি আর কবি হয়ে উঠতে পারিনি।’
প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সম্প্রতি নিজের একটি লেখায় লিখেছেন বড়ুয়া স্যারের (ভূপতিরঞ্জন বড়ুয়া) কথা। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ড্রয়িং ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেও তাঁকে সপ্তম শ্রেণীতে প্রমোশন পাইয়ে দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রধান শিক্ষক কঠিন গলায় বললেন, ‘যে ছেলে ড্রয়িং ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছে, আপনি তার জন্য সুপারিশ করতে এসেছেন? এই ছেলেকে আমি তো স্কুলেই রাখব না।’ বড়ুয়া স্যার বললেন, ‘স্যার, এই ছেলেটাকে পাস করিয়ে দিন। আমি আর কোনো দিন আপনার কাছে কোনো সুপারিশ নিয়ে আসব না।’ সে যাত্রায় প্রধান শিক্ষকের হাত থেকে রক্ষা পান। বিশেষ বিবেচনায় উত্তীর্ণ হন সপ্তম শ্রেণীতে। এর পরের কাহিনি শুধুই সাফল্যের। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ফেল করা সেই ছাত্র অষ্টম শ্রেণীতে পেল মেধাবৃত্তি। ছাত্রজীবনে হুমায়ূন আহমেদের সাফল্যের কথা সবারই জানা। এভাবে শিক্ষকদের পরিচর্যায় জীবনে সাফল্যের পথের দিশা পেয়েছেন অনেক ছাত্র।
এ পর্যায়ে আরও কয়েকজন প্রাক্তন কলেজিয়েটসের নাম উল্লেখ করতে চাই। পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর জাকির হোসেন, সারা প্রদেশে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী অর্থনীতিবিদ ড. মনোয়ার হোসেন, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, বিজ্ঞানী ড. আবদুল্লাহ আলমুতী শরফুদ্দীন ও অভিনেতা আতাউর রহমান; আবুল হায়াতও পড়েছেন এই বিদ্যালয়ে।
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৬ সালে। অতীতের ধারাবাহিকতায় এখনো দেশের সেরা বিদ্যালয়ের অন্যতম চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল। এসএসসিতে প্রায় প্রতিবছর প্রথম স্থান দখল করে এই বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের স্মৃতির দিনগুলো জমকালো আয়োজনে স্মরণ করেন প্রাক্তন ছাত্ররা। পুরোনো বন্ধুদের খোঁজ পেতে গঠন হয়েছে প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস। সংগঠনটির বয়সও কম নয়। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন ইতিমধ্যে তিনবার—১৯৯০, ১৯৯৮ ও ২০১০ সালে আয়োজন করেছে পুনর্মিলনীর। সংগঠন শুধু যে অনুষ্ঠান আয়োজন করে তা নয়, বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-শিক্ষকদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায়। এ জন্য রয়েছে ১০ সদস্যের কলেজিয়েটস কল্যাণ ট্রাস্ট।
তথ্য ও নিবন্ধনের জন্য যোগাযোগ: গোলাম মহিউদ্দীন (০১৭২৬০৩৯১৬৪) এবং রাজিউর রহমান (০১৮১৯৬৪৫২৪২)।
রুবেল আশরাফ
আলোকিত মানুষ গড়ার এই বিদ্যাপীঠ এবার ১৭৫ বছর পূর্ণ করেছে। এ উপলক্ষে ২৩ থেকে ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস আয়োজন করছে তিন দিনের উৎসবের। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে শোভাযাত্রা, স্মৃতিময় আড্ডা, প্রাক্তন শিক্ষক ও গুণী সংবর্ধনা, রক্তদান, স্মৃতিচারণা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পুুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে নানা বয়সী ও নানা রঙের মানুষ কৈশোরের হারানো সকাল-বিকেলগুলো খুঁজে ফিরবেন হয়তো। পুরোনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে খুলে যাবে স্মৃতির জানালা। আচমকা মনের আঙিনা ভিজিয়ে দেবে বন্ধুতার একপশলা বৃষ্টি। আর ভাঙবে যখন মিলনমেলা, বিষণ্ন বিদায়বেলায় হয়তো বাজবে সেই গান, ‘আবার হবে তো দেখা...।’
কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের সাফল্যগাথার এখানেই শেষ নয়। এই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেমন দুনিয়াজোড়া সাফল্য পেয়েছেন, তেমনি বিদ্যালয়ের উন্নত শীর শিক্ষকেরাও পরম পূজনীয় তাঁদের কাছে। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন কবি ওহীদুল আলম, আবদুস সোবহান, সাবের আহমদ, সৈয়দ আহমদ, সিরাজুল ইসলাম, হরিলাল সাহা, ডি এল সাহার মতো শিক্ষকেরা। যাঁরা ছিলেন প্রকৃত অর্থেই মানুষ গড়ার কারিগর। পরম মমতায় শিক্ষাকে করেছিলেন আনন্দময়, সৃজনশীলতার মাধ্যম। ছাত্রদের শিখিয়েছেন সাফল্যের সিঁড়ি টপকানোর মন্ত্র।
ওহীদুল আলম সম্পর্কে অধ্যাপক মাহবুবুল হক লিখেছেন, ‘আমার একজন প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। তাঁর উৎসাহেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম। আমার একটা কবিতা পড়ে তিনি হয়তো আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য টিচার্স রুমে ডেকে নিয়েছিলেন। অন্যান্য স্যারকে কবিতাটি পড়ে শুনিয়ে আমার লেখার খুব প্রশংসা করে আমাকে বলেছিলেন, আমি যেন কবিতা লেখা ছেড়ে না দিই। স্যারের সেই পরামর্শ মান্য করিনি বলে আমি আর কবি হয়ে উঠতে পারিনি।’
প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সম্প্রতি নিজের একটি লেখায় লিখেছেন বড়ুয়া স্যারের (ভূপতিরঞ্জন বড়ুয়া) কথা। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ড্রয়িং ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেও তাঁকে সপ্তম শ্রেণীতে প্রমোশন পাইয়ে দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রধান শিক্ষক কঠিন গলায় বললেন, ‘যে ছেলে ড্রয়িং ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছে, আপনি তার জন্য সুপারিশ করতে এসেছেন? এই ছেলেকে আমি তো স্কুলেই রাখব না।’ বড়ুয়া স্যার বললেন, ‘স্যার, এই ছেলেটাকে পাস করিয়ে দিন। আমি আর কোনো দিন আপনার কাছে কোনো সুপারিশ নিয়ে আসব না।’ সে যাত্রায় প্রধান শিক্ষকের হাত থেকে রক্ষা পান। বিশেষ বিবেচনায় উত্তীর্ণ হন সপ্তম শ্রেণীতে। এর পরের কাহিনি শুধুই সাফল্যের। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ফেল করা সেই ছাত্র অষ্টম শ্রেণীতে পেল মেধাবৃত্তি। ছাত্রজীবনে হুমায়ূন আহমেদের সাফল্যের কথা সবারই জানা। এভাবে শিক্ষকদের পরিচর্যায় জীবনে সাফল্যের পথের দিশা পেয়েছেন অনেক ছাত্র।
এ পর্যায়ে আরও কয়েকজন প্রাক্তন কলেজিয়েটসের নাম উল্লেখ করতে চাই। পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর জাকির হোসেন, সারা প্রদেশে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী অর্থনীতিবিদ ড. মনোয়ার হোসেন, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, বিজ্ঞানী ড. আবদুল্লাহ আলমুতী শরফুদ্দীন ও অভিনেতা আতাউর রহমান; আবুল হায়াতও পড়েছেন এই বিদ্যালয়ে।
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৬ সালে। অতীতের ধারাবাহিকতায় এখনো দেশের সেরা বিদ্যালয়ের অন্যতম চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল। এসএসসিতে প্রায় প্রতিবছর প্রথম স্থান দখল করে এই বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের স্মৃতির দিনগুলো জমকালো আয়োজনে স্মরণ করেন প্রাক্তন ছাত্ররা। পুরোনো বন্ধুদের খোঁজ পেতে গঠন হয়েছে প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস। সংগঠনটির বয়সও কম নয়। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন ইতিমধ্যে তিনবার—১৯৯০, ১৯৯৮ ও ২০১০ সালে আয়োজন করেছে পুনর্মিলনীর। সংগঠন শুধু যে অনুষ্ঠান আয়োজন করে তা নয়, বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-শিক্ষকদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায়। এ জন্য রয়েছে ১০ সদস্যের কলেজিয়েটস কল্যাণ ট্রাস্ট।
তথ্য ও নিবন্ধনের জন্য যোগাযোগ: গোলাম মহিউদ্দীন (০১৭২৬০৩৯১৬৪) এবং রাজিউর রহমান (০১৮১৯৬৪৫২৪২)।
রুবেল আশরাফ
No comments