জার্মান ফুটবলে 'বাঙালি বাবু'

ফুটবল বাঙালির প্রাণের খেলা বলে যতই গলা ফাটানো হোক না কেন, ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে বাঙালিকে আতশি কাচ দিয়ে খুঁজেও পাওয়া যায় না। পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশের লোকসংখ্যাই বাংলাদেশের কোনো বর্ধিষ্ণু পাড়াগাঁ, নিদেনপক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ে বেশি নয়। কিন্তু ফুটবল দুনিয়ায় 'শান্ত দেহ স্নিগ্ধ তনু' বঙ্গসন্তানের কোনো চোখে পড়ার মতো কীর্তি নেই। বাঙালি বড়জোর ফুটবলের একনিষ্ঠ দর্শক হতে পারে, আড্ডায় ফুটবল নিয়ে জোর গলাবাজি চলতে পারে, এমনকি ফুটবল নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে বিভেদও হতে পারে, কিন্তু বিশ্বমানের ফুটবলারের দেখা পেতে কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে।


এই যখন অবস্থা, তখন শোনা গেল রবিন দত্তের নামটা। তাঁর কল্যাণেই ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট পেয়েছে বাঙালি ছোঁয়া!
জার্মান প্রবাসী বাঙালি বাবা আর জার্মান মায়ের সন্তান রবিন, জন্ম-বেড়ে ওঠা সবই বেকেনবাওয়ারের দেশে। খেলোয়াড় হিসেবে খুব একটা উঁচু দরের ছিলেন না, হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে বেশি দূর যাওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। তাই মনোযোগ বাড়ালেন কোচিংয়ের দিকে, চার বছর ছিলেন অপেশাদার দল লিওনবোর্গ দলের খেলোয়াড়-কাম কোচ। এরপর কখনো পেশাদারি দলের রিজার্ভ দলকে কোচিং করিয়ে, অথবা লিগ কাঠামোর চতুর্থ ধাপের দলকে পরের ধাপে উন্নীত করে আস্তে আস্তে জার্মান ফুটবল জগতে নিজের একটা পরিচিতি তৈরি করেছেন কলকাতার দমদম মতিঝিলের দত্তবাড়ির ছেলে। মূলত ২০০৫ সালে উয়েফার পেশাদার লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পরই আলোচনায় চলে আসেন রবিন, স্টুটগার্ট কিকার্স দলকে স্থানীয় একটি চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানোয় অনেক শীর্ষ ক্লাবেরই নজরে চলে আসেন তিনি। বিশেষ করে জার্মান কাপে হামবুর্গকে হারানোর পর থেকেই রবিন রীতিমতো 'তারকা'। ২০০৭ সালে তাই ১৬ বছরের পুরনো কোচ ভলকার ফিঙ্কের চলে যাওয়ার পর রবিনকেই কোচের পদে নিয়ে আসে জার্মানির পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধাপের দল ফ্রেইবার্গ। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মৌসুমেই ফ্রেইবার্গ হয় পঞ্চম, পরের বছর চ্যাম্পিয়ন হয়ে চলে আসে বুন্দেসলিগায়। বাঙালি বংশোদ্ভূত কোনো কোচের ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে কোচিং করানোটা সেবারই প্রথম।
রবিন এখন কোচিং করাচ্ছেন বুন্দেসলিগার অন্যতম সফল দল বেয়ার লেভারকুসেনের, যে দলে আছেন সাবেক জার্মান অধিনায়ক মাইকেল বালাক। ছয়বার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা লেভারকুসেন ২০০২ সালে হয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের রানার্সআপ। গত মৌসুমের লিগ রানার্সআপ হিসেবে চলতি মৌসুমেও চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলছে লেভারকুসেন। সেদিক দিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব টুর্নামেন্টে একজন বাঙালির প্রতিনিধিত্ব, কিছুটা হলেও ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে বাঙালির দারিদ্র্য ঢাকবে! যদিও বাংলাটা কখনোই শেখা হয়নি তাঁর, আর শেষবার বঙ্গদর্শনও হয়েছে ৩০ বছর আগে! তবুও তো দত্ত পদবিতে খুঁজে পাওয়া যায় বাংলার পলিমাটির ঘ্রাণ।
বড় মঞ্চে এই রবিনের লক্ষ্যটাও বড়। গত মৌসুমে বুন্দেসলিগায় দ্বিতীয় হওয়া লেভারকুসেনকে দেশে তো সবার ওপরে দেখতে চানই, সেই সঙ্গে বিশ্বকেও উপহার দিতে চান নতুন ঘরানার ফুটবল, 'আমরা অন্য কোনো দলের খেলা অনুকরণ করতে চাই না। আশা করছি সম্পূর্ণ নিজস্ব ধাঁচের ফুটবলই খেলবে লেভারকুসেন, এমন কিছুই উপহার দেওয়ার প্রত্যাশা রাখি।' ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.