যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানকে বড় মাশুল গুনতে হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০০১ সাল থেকে শুরু হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের তিন হাজারেরও বেশি সেনা নিহত আর ১০ হাজারের মতো আহত হয়েছে। কিন্তু তার পরও মন ভরেনি যুক্তরাষ্ট্রের। ইসলামাবাদকে প্রতিনিয়তই শাসাচ্ছে ওয়াশিংটন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে তারা চায় পাকিস্তানের আরও সক্রিয় অবস্থান। অবসরে যাওয়ার আগে মার্কিন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা মাইক মুলেন অভিযোগ করেছেন, হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। হাক্কানি গোষ্ঠীকে আইএসআই তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।


পাকিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামারও মতো এমনটাই। সম্প্রতি তিনি পাকিস্তানকে শাসিয়ে বলেছেন, ইসলামাবাদকে অবশ্যই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের অবস্থান আরও শক্ত। পাকিস্তানে সব ধরনের মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধ।
পাকিস্তান যথারীতি তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইসলামাবাদের দাবি, ২০০১ সালে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তান অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত দেশটির তিন হাজারেরও বেশি সেনা নিহত এবং ১০ হাজারের মতো আহত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের কণ্ঠেও আক্ষেপ। একটি মার্কিন গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, হতাহতের এই সংখ্যা যদি যুক্তরাষ্ট্রের হতো এবং অন্য কোনো দেশ এর পরও তাদের এমন দোষারোপ করত, তবে তারা তখন কী বলত? অনেক সাধারণ পাকিস্তানির ক্ষোভের কথাই ফুটে উঠেছে হিনা রাব্বানির বক্তব্যে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট আবদুর রেহমানের বয়স মাত্র ৩৫। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়ে ২০০৭ সালে বোমার আঘাতে পা হারান তিনি। তিনি যখন শুনলেন, মার্কিনিরা তাদের প্রতি তুষ্ট নয়, তখন আবদুর রেহমানের জুতসই প্রশ্ন, ‘পাকিস্তান আর কী করতে পারে?’
দিন যত গড়াচ্ছে, কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানে প্রাণহানি বাড়ছে, ঝরছে নিরীহ মানুষের রক্ত। সাধারণ পাকিস্তানিদের প্রশ্ন, আর কত লাশ পড়লে, আর কত মানুষ আহত হলে যুক্তরাষ্ট্র তুষ্ট হবে।

No comments

Powered by Blogger.