রোডমার্চের পাল্টা জনসভা শুরু আওয়ামী লীগের by আবদুল্লাহ আল ফারুক

বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটের রোডমার্চের বিপরীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জনসভা শুরু হয়েছে। বিরোধী দলের রোডমার্চের জবাবে বিভাগীয় শহর ছাড়াও জেলাগুলোতে পাল্টা জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব জনসভায় বক্তব্য দেবেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দেবেন এসব জনসভায়। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।তবে আওয়ামী লীগের নেতারা এসব জনসভাকে বিরোধী দলের রোডমার্চের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে স্বীকার করছেন না।


তাঁরা বলছেন, এ ধরনের জনসভা তাঁদের কর্মসূচির ধারাবাহিকতা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব জনসভায় নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরবেন জনগণের সামনে। একই সঙ্গে জনসভার মাধ্যমে দলীয়
নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলের অভিযোগ ও দাবির জবাব দিতে প্রধানমন্ত্রীও জেলা পর্যায়ে জনসভা শুরু করেছেন। তিনি ১২ অক্টোবর নীলফামারীতে জনসভা করেন। আজ রবিবার তিনি গাজীপুরে আরেকটি জনসভা করবেন। ১৯ অক্টোবর তিনি যাচ্ছেন দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা। সেখানেও তাঁর জনসভা করার কথা।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও দলের মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী যে জনসভা শুরু করেছেন তা বিরোধী দলের রোডমার্চের পাল্টা কর্মসূচি নয়। তিনি বলেন, এসব জনসভার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরবেন জনগণের সামনে।
হানিফ আরো বলেন, তাঁরা বিরোধী দলের আন্দোলনকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এটা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারলে বিরোধী দলের সঙ্গে লোক থাকবে না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ কালের কণ্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী যে জনসভা করছেন তা বিরোধী দলের রোডমার্চের পাল্টা কর্মসূচি নয়। এটি দলীয় কর্মসূচির ধারাবাহিকতা। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের তেমন সাক্ষাৎ হয়নি। এসব জনসভার মাধ্যমে তিনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও দেখা করবেন।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে জানান, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল, তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। তেমনি তাঁদের দল বিএনপিরও সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার কিছু নেই।
বিএনপির আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ পাত্তাই দিচ্ছে না_এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফখরুল বলেন, 'তারা যদি আমাদের আন্দোলনকে পাত্তা না দেয়, তাহলে আমরাও আওয়ামী লীগের সমাবেশকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।'
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এ মুহূর্তে বিরোধী দলের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি রোডমার্চ। ঢাকায় জনসভার মাধ্যমে এ রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চের সফল সমাপ্তি হয়েছে। আগামী ১৮ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ করবে বিরোধী দল। ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করার কথা থাকলেও কিছু সমস্যার কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঈদের পর নভেম্বরের শেষ দিকে ওই রোডমার্চ করার কথা। মাঝে ২৭ অক্টোবর ময়মনসিংহে জনসভা হবে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হলেও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ ব্যর্থতারও অভিযোগ করছেন। তিনি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফার আন্দোলন শুরুর ঘোষণাও দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার অভিযোগের জবাব দিয়ে পাল্টা তাঁর ও তাঁর ছেলেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। নীলফামারীর জনসভায় তিনি বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিরোধী দলের নেতা দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চান। উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো। তিনি ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার এক বক্তব্যেরও জবাব দেন ওই জনসভায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, 'ভবিষ্যতে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচন হবে এবং সে নির্বাচনে বিএনপিকে আসতেই হবে।'
আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলের রোডমার্চ ও জনসভার কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার লক্ষ্যেই ক্ষমতাসীন দল পাল্টা কর্মসূচি নিচ্ছে। এর আগে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারা বিভাগীয় শহরসহ জেলা পর্যায়ে জনসভা করবে এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন।
জানা গেছে, পরপর তিনটি জনসভা করার পর আরো কর্মসূচি নেওয়া হবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। তবে পরবর্তী জনসভার কর্মসূচি এখনো ঘোষণা করা হয়নি। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জানান, আপাতত এই কর্মসূচি রয়েছে। পরে কর্মসূচি নেওয়া হলে তা জানানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.