এক জমি দ্বিতীয়বার অধিগ্রহণে ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ! by ভূঁইয়া নজরুল,
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তৈরি ও সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল ৪৫ বছর আগে। জমির মালিকদের সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মমাফিক ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিগ্রহণ করা সেই জমি পুরোপুরি দখলে নেয়নি সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। সাড়ে চার দশক আগে অধিগ্রহণ করা সেই জমিই এখন আবার অধিগ্রহণের জন্য কৌশলে ৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোটা অঙ্কের এই সরকারি অর্থ নয়ছয় করা হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে জানান, ১৯৬৬ সালে ঢাকা ট্রাংক রোড (ডিটি রোড) নির্মাণের সময় এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'সওজ সড়ক নির্মাণের সময় কমপক্ষে ৬০ থেকে ৮০ ফুট পর্যন্ত জায়গা অধিগ্রহণ করে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই ডিটি রোডে সওজ বিভাগ অধিগ্রহণের আগেই ভূমি মালিকদের মৌজা মূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিয়েছে সেই ১৯৬৬ সালের দিকেই।'
অথচ অধিগ্রহণ করা সেই ভূমিতে আবার অধিগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। 'ঢাকা ট্রাংক রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন' প্রকল্প অনুমোদন পায় গত ৮ মার্চ একনেক বৈঠকে। ৮৬ কোটি টাকার মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৬৪ কোটি ৪৬ লাখ, ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই কোটি ৮৭ লাখ এবং নির্মাণ খরচ বাবদ ১৯ কোটি টাকা।
বন্দর নগর চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ট্রাংক রোডটি বর্তমানে কোথাও ৩০ ফুট আবার কোথাও ৩৫ ফুট চওড়া। এই সড়কেরই কোথাও ৬২ ফুট আবার কোথাও ৭২ ফুট পর্যন্ত চওড়া করার জন্য সিডিএর পক্ষ থেকে সড়কের উভয় পাশের ব্যবহারকারীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশে স্থাপনা ভাঙা ও নালা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে সিডিএ। সড়কের উভয় পাশের ৩৫৭ দশমিক শূন্য ২ কাঠা জায়গা অধিগ্রহণের জন্য ৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই জায়গার অধিগ্রহণ নিয়েই অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে সিডিএর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই জায়গাটি আগে কখনো অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। তাই সড়কের উভয় পাশে ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুট জায়গার বর্তমান মৌজা মূল্য অনুযায়ী দাম ধরে প্রকল্পের ডিটেইল প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়েছে। তবে পরে অধিগ্রহণ মূল্য না দেওয়ার প্রয়োজন হলে ডিপিপি সংশোধনের নিয়ম রয়েছে।'
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সদরঘাট সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ চার কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে আনার পর সেই টাকা আর ফেরত না দিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকল্প সম্পর্কে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল হক বলেন, 'সিডিএ চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন জায়গার ক্ষতিপূরণ পাবই আমরা। তাই স্থানীয় ব্যবহারকারীরা নিজ উদ্যোগে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে এবং অন্যদের ছেড়ে দিতে উৎসাহ দিচ্ছে।'
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, 'এক জমি দুই বার অধিগ্রহণ করা কিংবা এই বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। বর্তমানে সিডিএ সড়কটি সম্প্রসারণ করলেও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কাউকে টাকা দিতে হবে না। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হলে তারা পুনর্নিরীক্ষণের মাধ্যমে আগে দেওয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করবে।'
এদিকে সিডিএ এই সড়কে নতুন করে কোনো জায়গা অধিগ্রহণ করছে না জানিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, 'সড়ক ও জনপথের অধিগ্রহণ করা জায়গায় সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের প্রকল্প নিয়েছে সিডিএ। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে সিডিএর কোনো বাজেট রাখার আইন নেই। এক জায়গা তো দুই বার অধিগ্রহণ হতে পারে না, সরকারি কোষাগার থেকেও দুই বার টাকা দেওয়ার কোনো বিধান নেই। শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয় ও হাজী ক্যাম্পের কিছু জায়গা আন্তমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য অনাপত্তি চাওয়া হয়েছে।'
সওজের অধিগ্রহণ করা জমি আবার অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, 'স্থানীয় বসবাসকারীরা যদি জায়গার দলিল দেখাতে পারে তবে অবশ্যই তাদের বর্তমান মৌজা মূল্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর সড়ক ও জনপথ অধিগ্রহণ করে থাকলে দ্বিতীয়বার অধিগ্রহণের টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।' একবার অধিগ্রহণ হওয়ার পর সেটি যাচাই না করে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা অনুমোদন করিয়ে আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদনের আগে জায়গার মালিকানা নিয়ে এত বেশি খতিয়ে দেখা হয় না।'
স্থানীয় অধিবাসী এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান এই সড়কটি নির্মাণ করেছিল তৎকালীন সিঅ্যান্ডবি (বর্তমান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর)। ঢাকা ট্রাংক রোড নামে পরিচিত এই সড়ক দিয়েই ঢাকা-চট্টগ্রামের যানবাহন চলাচল করত। ৩০ থেকে ৩৫ ফুট চওড়া সড়ককে কেন্দ্র করে পাহাড়তলীতে গড়ে উঠেছিল চালের অন্যতম পাইকারি বাজার। এই সড়কের পূর্বদিকে রয়েছে পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানা ও রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা। এই সড়কের শেষ প্রান্তে কদমতলীতে গড়ে ওঠে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এবং মাদারবাড়ী রেলগেটের পাশে শুভপুর বাস টার্মিনাল। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটি থেকে মালপত্র এই সড়ক দিয়েই পরিবহন করা হতো।
অথচ অধিগ্রহণ করা সেই ভূমিতে আবার অধিগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। 'ঢাকা ট্রাংক রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন' প্রকল্প অনুমোদন পায় গত ৮ মার্চ একনেক বৈঠকে। ৮৬ কোটি টাকার মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৬৪ কোটি ৪৬ লাখ, ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই কোটি ৮৭ লাখ এবং নির্মাণ খরচ বাবদ ১৯ কোটি টাকা।
বন্দর নগর চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ট্রাংক রোডটি বর্তমানে কোথাও ৩০ ফুট আবার কোথাও ৩৫ ফুট চওড়া। এই সড়কেরই কোথাও ৬২ ফুট আবার কোথাও ৭২ ফুট পর্যন্ত চওড়া করার জন্য সিডিএর পক্ষ থেকে সড়কের উভয় পাশের ব্যবহারকারীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশে স্থাপনা ভাঙা ও নালা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে সিডিএ। সড়কের উভয় পাশের ৩৫৭ দশমিক শূন্য ২ কাঠা জায়গা অধিগ্রহণের জন্য ৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই জায়গার অধিগ্রহণ নিয়েই অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে সিডিএর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই জায়গাটি আগে কখনো অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। তাই সড়কের উভয় পাশে ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুট জায়গার বর্তমান মৌজা মূল্য অনুযায়ী দাম ধরে প্রকল্পের ডিটেইল প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়েছে। তবে পরে অধিগ্রহণ মূল্য না দেওয়ার প্রয়োজন হলে ডিপিপি সংশোধনের নিয়ম রয়েছে।'
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সদরঘাট সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ চার কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে আনার পর সেই টাকা আর ফেরত না দিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকল্প সম্পর্কে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল হক বলেন, 'সিডিএ চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন জায়গার ক্ষতিপূরণ পাবই আমরা। তাই স্থানীয় ব্যবহারকারীরা নিজ উদ্যোগে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে এবং অন্যদের ছেড়ে দিতে উৎসাহ দিচ্ছে।'
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, 'এক জমি দুই বার অধিগ্রহণ করা কিংবা এই বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। বর্তমানে সিডিএ সড়কটি সম্প্রসারণ করলেও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কাউকে টাকা দিতে হবে না। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হলে তারা পুনর্নিরীক্ষণের মাধ্যমে আগে দেওয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করবে।'
এদিকে সিডিএ এই সড়কে নতুন করে কোনো জায়গা অধিগ্রহণ করছে না জানিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, 'সড়ক ও জনপথের অধিগ্রহণ করা জায়গায় সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের প্রকল্প নিয়েছে সিডিএ। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে সিডিএর কোনো বাজেট রাখার আইন নেই। এক জায়গা তো দুই বার অধিগ্রহণ হতে পারে না, সরকারি কোষাগার থেকেও দুই বার টাকা দেওয়ার কোনো বিধান নেই। শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয় ও হাজী ক্যাম্পের কিছু জায়গা আন্তমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য অনাপত্তি চাওয়া হয়েছে।'
সওজের অধিগ্রহণ করা জমি আবার অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, 'স্থানীয় বসবাসকারীরা যদি জায়গার দলিল দেখাতে পারে তবে অবশ্যই তাদের বর্তমান মৌজা মূল্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর সড়ক ও জনপথ অধিগ্রহণ করে থাকলে দ্বিতীয়বার অধিগ্রহণের টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।' একবার অধিগ্রহণ হওয়ার পর সেটি যাচাই না করে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা অনুমোদন করিয়ে আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদনের আগে জায়গার মালিকানা নিয়ে এত বেশি খতিয়ে দেখা হয় না।'
স্থানীয় অধিবাসী এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান এই সড়কটি নির্মাণ করেছিল তৎকালীন সিঅ্যান্ডবি (বর্তমান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর)। ঢাকা ট্রাংক রোড নামে পরিচিত এই সড়ক দিয়েই ঢাকা-চট্টগ্রামের যানবাহন চলাচল করত। ৩০ থেকে ৩৫ ফুট চওড়া সড়ককে কেন্দ্র করে পাহাড়তলীতে গড়ে উঠেছিল চালের অন্যতম পাইকারি বাজার। এই সড়কের পূর্বদিকে রয়েছে পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানা ও রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা। এই সড়কের শেষ প্রান্তে কদমতলীতে গড়ে ওঠে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এবং মাদারবাড়ী রেলগেটের পাশে শুভপুর বাস টার্মিনাল। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটি থেকে মালপত্র এই সড়ক দিয়েই পরিবহন করা হতো।
No comments