মুক্তিযুদ্ধ এবং চারুশিল্প by জাফরিন গুলশান

কাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অর্জন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক কৌশলে উপমহাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম ঘটে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তানের যে অংশটি পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববাংলা হিসেবে চিহ্নিত ছিল, তা কালক্রমে ১৯৭১ সালে নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম-যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসন কিংবা তারও আগের সামাজিক অবস্থানের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ ও ’৭১ সাল অহংকারের। এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণে রেখে এবং নবীন প্রজন্মের কাছে এর তাৎপর্য তুলে ধরতে স্বাধীনতার ৪০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গ্যালারি জলরঙের পক্ষ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনী চলছে ১৯ মে থেকে। প্রদর্শনীতে যেসব শিল্পীর কাজ স্থান পেয়েছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের ক্যানভাসে জাতীয় চেতনার সংগ্রামী ও বিজয়ের নির্যাস পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, বরেণ্য শিল্পী মুর্তজা বশীরের ‘বাংলাদেশ-৭১’ শীর্ষক ছাপচিত্র মাধ্যমে করা শিল্পকর্মটি ১৯৭৩ সালে করা। ড্রাই পয়েন্টের চিকন গাঢ় রেখা অঙ্কনের মধ্য দিয়ে মা ও শিশুর ছবি। অ্যাকুয়াটিনটের অন্য রকম টেক্সার সবুজ রঙে। ভূমির সবুজের থেকে উঠে আসা আরেকটি হাতের ড্রয়িং। প্রয়োজনমতো কোথাও কোথাও টোন দেওয়া। জ্যামিতি ড্রয়িং রেখা তাঁর কাজে দেখা যায়।
শিল্পী আবুল বারক আলভীর ‘জাগরণ একাত্তর’ বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ আর বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের বিস্ফোরণ দেখা যায়। জলরং মাধ্যমে আঁকা। শিল্পী বীরেন সোম কালি ও কলমে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতাকে এনেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা সম্পর্কে সবাই জ্ঞাত। তারই প্রতিফলন বিভিন্ন আঙ্গিকে শিল্পীদের ক্যানভাসে পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের উদ্দীপনা দেশের মানুষকে যেভাবে আলোড়িত করেছিল, শিল্পীদের ছবিতে তা বারবার এসেছে।
শিল্পী রফিকুন নবীর ‘আনটাইটেলড’ শীর্ষক ছবিটিতে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের আবহ ফুল-পাখিতে, গ্রামীণ নকশা এবং জলরঙে ব্যবহূত রঙের ওয়াশ ও রেখায় পাওয়া যায়।
শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের ‘আনটাইটেলড’ কালি ও কলমে লাইন ড্রয়িং। অনেক মানুষের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, বাঙালি জাতির অভিব্যক্তি, ইয়াহিয়াকে তীরবিদ্ধ করা প্রভৃতি চরিত্রের নির্মাণ বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অতীত, বিক্ষিপ্ত বর্তমান, স্বপ্নের ভবিষ্যতের গল্প যেন।
এ ছাড়া এ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের লোকশিল্পী বনমালী পাল, শিল্পী আর কে দাশ। প্রদর্শনীতে আরও অংশগ্রহণ করেছেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রোকেয়া সুলতানা, মাহমুদুল হক, মনিরুল ইসলাম, আবদুশ শাকুর শাহ, নিসার হোসেন, বিপুল শাহ, ফরিদা জামান, দিলারা বেগম জলি, নাঈমা হক, নাসরিন বেগম, কনকচাঁপা চাকমা প্রমুখ। প্রদর্শনী শেষ হয় ১০ জুন।

No comments

Powered by Blogger.