চলছে গ্রেফতার অভিযান: ওয়ালস্ট্রিটবিরোধী বিক্ষোভ জোরদার

যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালস্ট্রিটবিরোধী বিক্ষোভ আরও জোরদার হচ্ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান। নিউইয়র্ক শহরের বাণিজ্যিক জেলা অভিমুখী এক পদযাত্রা থেকে পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। লোয়ার ম্যানহাটান পার্কে পরিচ্ছন্নতা অভিযান স্থগিত করার প্রশাসনের সিদ্ধান্ত উদযাপনে বিক্ষোভকারীরা এ পদযাত্রার আয়োজন করে। ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট বিরোধী বিক্ষোভ ‘ওকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হলো লোয়ার ম্যানহাটন পার্ক।


শুক্রবার বাণিজ্যিক জেলার দিকে এগুতে থাকলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের হাতাহাতির মধ্য দিয়ে পদযাত্রাটি শেষ হয়।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ জানায়, পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ট্রাফিক চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ফুটপাত দিয়ে চলার নির্দেশনা দিলে বিক্ষোভকারীরা তা লঙ্ঘন করে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার থেকেও ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ১৩৫ জন কর্মকর্তা শুক্রবার ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্প সরিয়ে দিতে গেলে এ আটক অভিযান চালানো হয় বলে কলোরাডো স্টেট পেট্রলের সার্জেন্ট মাইক বেকার জানান। এছাড়া ওয়াশিংটনের সিটল থেকে ১০ জনকে এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সানদিয়েগো থেকে অন্য এক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে। গতকাল লোয়ার ম্যানহাটনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে তা স্থগিত করা হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পরিচ্ছন্নতা অভিযানের নামে ওই স্থান থেকে তাদের বিতাড়িত করাই প্রশাসনের উদ্দেশ্য। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমেই জোরদার হচ্ছে ওয়াল স্ট্রিট করপোরেট বিরোধী বিক্ষোভ। বিক্ষোভে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণ বাড়ছে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। করপোরেট পুঁজির মাধ্যমে সম্পদের সিংহভাগ গুটিকয়েক লোকের হাতে কুক্ষিগত হওয়া এবং তাদের স্বার্থরক্ষায় দেশের যুদ্ধবাজ নীতির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ শুরু হয়।
‘ওয়াল স্ট্রিট দখল’ আন্দোলনের সংগঠকরা বলছেন, রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের অর্থলিপ্সা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়েছেন। ক্ষমতাধরদের পাশাপাশি ধনিক শ্রেণী দিন দিন আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে আর সাধারণ মানুষ ক্রমেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। তারা আরও বলছেন, দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা যখন প্রতিদিনই বাড়ছে তখন সরকার নতুন কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা আরও অভিযোগ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কেন্দ্র ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা করছে, যারা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক ভাগ। এই এক শতাংশ মানুষ বাকি ৯৯ ভাগ মানুষের ওপর নিজেদের সিদ্ধান্ত ও দুর্ভোগ চাপিয়ে দিচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থে ধনিক শ্রেণীর মানুষের ওপর কর বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর একদল বেকার তরুণ ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ বা ওয়াল স্ট্রিট দখল করো নামের এ আন্দোলন শুরু করে। তখন থেকেই লোয়ার ম্যানহাটনের জুক্কোট্টি পার্কে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করছেন তারা। পার্কটি কোনো সরকারি সম্পত্তি নয়, বেসরকারি মালিকানাধীন।
এরই মধ্যে এ আন্দোলন সব যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন তা ব্রিটেন, কানাডায় আছড়ে পড়ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরগুলোয়ও সংগঠিত হচ্ছে ওয়াল স্ট্রিট-বিরোধীরা। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পেশাজীবী ইউনিয়ন এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়। এ আন্দোলন এখন যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার ৪০০ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অকুপাই বোস্টন, অকুপাই সিনসিনাটি, অকুপাই হিউস্টোন, অকুপাই লস অ্যাঞ্জেলেস, অকুপাই ফিলাডেলফিয়া, অকুপাই প্রভিডেন্স, অকুপাই সল্ট লেক এবং অকুপাই সিয়াটেলের মতো আন্দোলন গড়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহে কানাডার ভাঙ্কুভার ও টরেন্টোতে এ আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হবে। অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। আন্দোলন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, পোল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শ্রমিক নেতা লেস ওয়ালেসা এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী।
এদিকে ওয়াল স্ট্রিট-বিরোধীদের ওপর মার্কিন পুলিশের ধরপাকড় এখনও চলছে। যুক্তরাস্ট্রের সিয়াটেল শহরের একটি পার্কে ওয়াল স্ট্রিট-বিরোধী আন্দোলনকারীদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীদের আটক করে।

  

No comments

Powered by Blogger.