বগুড়ায় বৃহত্তম জনসভার প্রস্তুতি : পাঁচ জেলা ঘুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাবেন খালেদা জিয়া
রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখী চারদলীয় জোটের রোডমার্চে সিলেটের মতোই জনতার ঢল নামবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিতব্য রোডমার্চ রাজশাহী বিভাগের ৫টি জেলার ওপর দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে শেষ হবে। ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এ রোডমার্চের বহরে তিন হাজার গাড়ি থাকবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে জনমত গঠনে রোডমার্চ করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। এর আগে তিনি ঢাকা-সিলেট রোডমার্চ করেন।
মির্জা ফখরুল জানান, রোডমার্চ ঢাকা থেকে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাবে। এ বহর রাজশাহী যাওয়ার কথা থাকলেও তা কাটছাঁট করা হয়। এর কারণ অবশ্য জানাননি বিএনপি নেতা।
তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এবং পরদিন বিকাল ৩টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমহন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বিরোধীদলীয় নেতা। পথসভা হবে মোট চারটি স্থানে। স্থানগুলো হচ্ছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এবং নওগাঁর এটিএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ।
হাটিকুমরুলের পথসভার অনুমতি এখনও না পাওয়ার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ওই স্থানে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জনসভা করেছেন। আশা করছি, জেলা প্রশাসন আমাদেরও পথসভা করতে দেবে। মঙ্গলবার রাতে বগুড়ায় রাত কাটাবেন খালেদা। পরদিন বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভা শেষে ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০ অক্টোবর নাটোরে জনসভা করার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন ডিগ্রি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কারণে রোডমার্চ একদিন কমানো হয়েছে। নাটোরের জনসভা বাতিল করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশা করি সিলেটে যেভাবে ঢল নেমেছিল একইভাবে উত্তরাঞ্চলের রোডমার্চেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে সরকারকে বাধ্য করবে মানুষ।
সরকার এই রোডমার্চকে আমলে নিচ্ছে না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারা কখনোই বাস্তবতা মেনে নিতে চান না। তারা যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন, তাও তারা বুঝতে চান না। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, যদি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর চান, তাহলে দ্রুত জনগণের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন দিন।
সংসদ থেকে পদত্যাগ করার কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংসদ থেকে পদত্যাগ নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় এখনও আসেনি। এ ব্যাপারে দলের সংসদীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে। তবে সরকারকে বলতে চাই, তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের নেই। ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল না হলে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুশিয়ারি দেন ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনের আগে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে যৌথ সভা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ঢাকা মহানগর সদস্য-সচিব আবদুস সালাম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দল সভাপতি নুর-এ-আরা সাফা, জাসাস সভাপতি আবদুল মালেক, তাঁতী দল সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান, মত্স্যজীবী দল সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান, ওলামা দল সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।
বগুড়ায় চাঙ্গা তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা
আসাদুজ্জামান ফিরোজ বগুড়া থেকে জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোডমার্চ ও জনসভা উপলক্ষে বগুড়ায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তার বগুড়ায় আগমন উপলক্ষে এরই মধ্যে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সভা, প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু হয়েছে। প্রবেশ পথে নির্মাণ হচ্ছে তোরণ। চেয়ারপার্সনকে স্বাগত জানাতে ঝিমিয়ে থাকা তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে সাজ সাজ রব। সবাই অপেক্ষায় বিরোধী দল নেতার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনার জন্য।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর নয়া পল্টনের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশব্যাপী রোডমার্চের ঘোষণা দেন। আগামী ১৮ অক্টোবর বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা মাঠে জনসভা হবে। রোডমার্চ ও জনসভা সফল করতে জেলা বিএনপির উদ্যোগে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওয়ার্ড এবং উপজেলা বিএনপি, আইনজীবী, চিকিত্সক, বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদ ও চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রস্তুতি সভায় নেতারা ঘোষণা করেছেন, এবার বগুড়ায় স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা হবে। তাদের দাবি ৬ থেকে ৭ লাখ লোক বক্তব্য শুনবেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের। সে কারণে জনসভাস্থলে দেড় থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইক ও স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের পিটিআই মোড়, সেউজগাড়ী মোড়, জলেশ্বরীতলা মোড়, জজকোর্ট মোড়, ফতেহ আলী মোড়, বড়গোলা মোড়ে টানানো হবে পর্দা। সেখান থেকে মানুষ দেখবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বগুড়া জনসভার সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করার জন্য রোডমার্চ কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী ও রোডমার্চের সমন্বয়কারী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আমিন ও মেজর (অব.) মিজানুর রহমান আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ পরিদর্শন করেছেন। মাঠ পরিদর্শন শেষে তারা বগুড়ার প্রবেশ পথ, রাত্রীকালীন আবাস সার্কিট হাউসের ব্যবস্থা এবং পরের দিন রাজশাহী অভিমুখী রাস্তা পরিদর্শন করেন।
অপরদিকে গতকাল দলীয় কার্যালয়ে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক আবদুল হক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির জেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট রিয়াজ উদ্দীন, ইসলামী ছাত্রমোর্চার রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ।
এর আগে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা হয়। পেশাজীবী পরিষদ জেলা শাখার আহ্বায়ক ডা. ময়নুল হাসান সাদিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, এমপি মোস্তফা আলী মুকুল, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শামছুদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়র রোকন তালুকদার, কৃষিবিদ গোলাম সাকলাইন, সাংবাদিক মীর্জা সেলিম রেজা, মহসিন রাজু, ডা. মামুনুর রশীদ মিঠু, সাবেক এমপি নুর আফরোজ জ্যোতি, কলেজ শিক্ষক সুলতান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট নজমুল হুদা পপন, অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান মণ্ডল প্রমুখ।
ছাত্রদলের উদ্যোগে মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। চেয়ারপার্সনের বগুড়ায় আগমন উপলক্ষে গ্রামে গ্রামে প্রচার মিছিল করা হয়। সাধারণ মানুষ মিছিলে অংশ নেয়।
অপরদিকে জামায়াতের প্রস্তুতি সভা হয় দলীয় কার্যালয়ে। এদিকে জেলার ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শিবগঞ্জ ও শাজাহানপুরে বিএনপির নেতারা জনসভায় যোগ দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এই রোডমার্চ ও জনসভা সফল করতে এরই মধ্যে শহর, পৌর ও উপজেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠন এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে বগুড়ায়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এখন সবার মুখে একই কথা, কখন বেগম খালেদা জিয়া বগুড়ায় আসবেন।
শেরপুরে প্রস্তুতি সভা
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, ১৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে বগুড়া হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার দলের রোডমার্চ ও জনসভা সফল করার লক্ষ্যে বগুড়ার শেরপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে পৃথক প্রস্তুতি সভা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির কার্যালয়ে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কে এম মাহবুবার রহমান হারেজ, জেলা বিএনপি নেতা জানে আলম খোকা, উপজেলা বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাবলু, পৌর মেয়র স্বাধীন কুমার কুণ্ডু, ছাত্রদল নেতা নাহিদ রহমান, ওবায়দুর রহমান, আয়ুব আলী মণ্ডল, ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে একই দিন সন্ধ্যায় উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মানছুরুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডের দলীয় কার্যালয়ে ওই সভায় জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আবদুল হক সরকার, জামায়াত নেতা আফছার উদ্দিন আহমদ, দবিবুর রহমান, নাজমুল হক, কাজী আবুল কালাম আজাদ, আলতাব হোসেন বক্তব্য রাখেন। সভায় পৌরসভা ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল জানান, রোডমার্চ ঢাকা থেকে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাবে। এ বহর রাজশাহী যাওয়ার কথা থাকলেও তা কাটছাঁট করা হয়। এর কারণ অবশ্য জানাননি বিএনপি নেতা।
তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এবং পরদিন বিকাল ৩টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমহন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বিরোধীদলীয় নেতা। পথসভা হবে মোট চারটি স্থানে। স্থানগুলো হচ্ছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এবং নওগাঁর এটিএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ।
হাটিকুমরুলের পথসভার অনুমতি এখনও না পাওয়ার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ওই স্থানে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জনসভা করেছেন। আশা করছি, জেলা প্রশাসন আমাদেরও পথসভা করতে দেবে। মঙ্গলবার রাতে বগুড়ায় রাত কাটাবেন খালেদা। পরদিন বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভা শেষে ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০ অক্টোবর নাটোরে জনসভা করার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন ডিগ্রি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কারণে রোডমার্চ একদিন কমানো হয়েছে। নাটোরের জনসভা বাতিল করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশা করি সিলেটে যেভাবে ঢল নেমেছিল একইভাবে উত্তরাঞ্চলের রোডমার্চেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে সরকারকে বাধ্য করবে মানুষ।
সরকার এই রোডমার্চকে আমলে নিচ্ছে না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারা কখনোই বাস্তবতা মেনে নিতে চান না। তারা যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন, তাও তারা বুঝতে চান না। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, যদি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর চান, তাহলে দ্রুত জনগণের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন দিন।
সংসদ থেকে পদত্যাগ করার কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংসদ থেকে পদত্যাগ নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় এখনও আসেনি। এ ব্যাপারে দলের সংসদীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে। তবে সরকারকে বলতে চাই, তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের নেই। ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল না হলে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুশিয়ারি দেন ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনের আগে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে যৌথ সভা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ঢাকা মহানগর সদস্য-সচিব আবদুস সালাম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দল সভাপতি নুর-এ-আরা সাফা, জাসাস সভাপতি আবদুল মালেক, তাঁতী দল সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান, মত্স্যজীবী দল সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান, ওলামা দল সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।
বগুড়ায় চাঙ্গা তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা
আসাদুজ্জামান ফিরোজ বগুড়া থেকে জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোডমার্চ ও জনসভা উপলক্ষে বগুড়ায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তার বগুড়ায় আগমন উপলক্ষে এরই মধ্যে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সভা, প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু হয়েছে। প্রবেশ পথে নির্মাণ হচ্ছে তোরণ। চেয়ারপার্সনকে স্বাগত জানাতে ঝিমিয়ে থাকা তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে সাজ সাজ রব। সবাই অপেক্ষায় বিরোধী দল নেতার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনার জন্য।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর নয়া পল্টনের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশব্যাপী রোডমার্চের ঘোষণা দেন। আগামী ১৮ অক্টোবর বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা মাঠে জনসভা হবে। রোডমার্চ ও জনসভা সফল করতে জেলা বিএনপির উদ্যোগে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওয়ার্ড এবং উপজেলা বিএনপি, আইনজীবী, চিকিত্সক, বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদ ও চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রস্তুতি সভায় নেতারা ঘোষণা করেছেন, এবার বগুড়ায় স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা হবে। তাদের দাবি ৬ থেকে ৭ লাখ লোক বক্তব্য শুনবেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের। সে কারণে জনসভাস্থলে দেড় থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইক ও স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের পিটিআই মোড়, সেউজগাড়ী মোড়, জলেশ্বরীতলা মোড়, জজকোর্ট মোড়, ফতেহ আলী মোড়, বড়গোলা মোড়ে টানানো হবে পর্দা। সেখান থেকে মানুষ দেখবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বগুড়া জনসভার সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করার জন্য রোডমার্চ কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী ও রোডমার্চের সমন্বয়কারী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আমিন ও মেজর (অব.) মিজানুর রহমান আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ পরিদর্শন করেছেন। মাঠ পরিদর্শন শেষে তারা বগুড়ার প্রবেশ পথ, রাত্রীকালীন আবাস সার্কিট হাউসের ব্যবস্থা এবং পরের দিন রাজশাহী অভিমুখী রাস্তা পরিদর্শন করেন।
অপরদিকে গতকাল দলীয় কার্যালয়ে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক আবদুল হক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির জেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট রিয়াজ উদ্দীন, ইসলামী ছাত্রমোর্চার রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ।
এর আগে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা হয়। পেশাজীবী পরিষদ জেলা শাখার আহ্বায়ক ডা. ময়নুল হাসান সাদিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, এমপি মোস্তফা আলী মুকুল, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শামছুদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়র রোকন তালুকদার, কৃষিবিদ গোলাম সাকলাইন, সাংবাদিক মীর্জা সেলিম রেজা, মহসিন রাজু, ডা. মামুনুর রশীদ মিঠু, সাবেক এমপি নুর আফরোজ জ্যোতি, কলেজ শিক্ষক সুলতান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট নজমুল হুদা পপন, অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান মণ্ডল প্রমুখ।
ছাত্রদলের উদ্যোগে মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। চেয়ারপার্সনের বগুড়ায় আগমন উপলক্ষে গ্রামে গ্রামে প্রচার মিছিল করা হয়। সাধারণ মানুষ মিছিলে অংশ নেয়।
অপরদিকে জামায়াতের প্রস্তুতি সভা হয় দলীয় কার্যালয়ে। এদিকে জেলার ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শিবগঞ্জ ও শাজাহানপুরে বিএনপির নেতারা জনসভায় যোগ দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এই রোডমার্চ ও জনসভা সফল করতে এরই মধ্যে শহর, পৌর ও উপজেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠন এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে বগুড়ায়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এখন সবার মুখে একই কথা, কখন বেগম খালেদা জিয়া বগুড়ায় আসবেন।
শেরপুরে প্রস্তুতি সভা
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, ১৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে বগুড়া হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার দলের রোডমার্চ ও জনসভা সফল করার লক্ষ্যে বগুড়ার শেরপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে পৃথক প্রস্তুতি সভা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির কার্যালয়ে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কে এম মাহবুবার রহমান হারেজ, জেলা বিএনপি নেতা জানে আলম খোকা, উপজেলা বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাবলু, পৌর মেয়র স্বাধীন কুমার কুণ্ডু, ছাত্রদল নেতা নাহিদ রহমান, ওবায়দুর রহমান, আয়ুব আলী মণ্ডল, ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে একই দিন সন্ধ্যায় উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মানছুরুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডের দলীয় কার্যালয়ে ওই সভায় জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আবদুল হক সরকার, জামায়াত নেতা আফছার উদ্দিন আহমদ, দবিবুর রহমান, নাজমুল হক, কাজী আবুল কালাম আজাদ, আলতাব হোসেন বক্তব্য রাখেন। সভায় পৌরসভা ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
No comments