ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার

রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসা থেকে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল শাখার এক নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম প্রণব দাশগুপ্ত বাবলু। বয়স ২৬ বছর। তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর স্ত্রী পরিচয়দানকারী অর্পা নামের এক তরুণী দাবি করেছেন, বাবলু তাঁর সঙ্গে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। বিয়ের পর তাঁরা আজিমপুরের ওই বাসায়ই থাকতেন।বাবলুর সহকর্মী ও জগন্নাথ হলের ছাত্ররা দাবি করেছেন, জানালার গ্রিল থেকে লাশ উদ্ধার করার সময় তাঁর পা মেঝেতে ছিল। বাবলুকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।


এ ঘটনায় জগন্নাথ হলসহ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্ররা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
পুলিশও বলছে, ঘটনাটি রহস্যজনক। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অর্পা ও তাঁর তিন বন্ধুকে শাহবাগ থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ।
লালবাগ থানার অপারেশন অফিসার পরিতোষ চন্দ্র জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে আজিমপুর রোডের ৩৩/৩ নম্বরের সাত তলা ভবনের (শেফালী গার্ডেন) তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে বাবলুর লাশ উদ্ধার করা হয়। কক্ষের এক পাশে জানালার সঙ্গে গলায় বিছানার চাদর জড়ানো অবস্থায় ছিল তাঁর লাশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, তিনি আত্মহত্যা
করেছেন। তবে দেহের উচ্চতার চেয়ে কম উচ্চতায় ফাঁস লাগানোর কারণে বাবলুর পা মেঝেতেই ছিল। তাঁর পায়ে ছোট্ট জখমও দেখা গেছে। এসব কারণে ঘটনাটি রহস্যজনক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, বাসায় বাবলুর সঙ্গে থাকতেন ফারহা বিনতে রশিদ ওরফে অর্পা নামের এক তরুণী। তিনি নিজেকে বাবলুর স্ত্রী বলে দাবি করেছেন। অর্পার বক্তব্য যাচাই, মেডিক্যাল রিপোর্ট পর্যালোচনা ও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অর্পা কালের কণ্ঠের কাছে দাবি করেন, দীর্ঘদিন প্রেম করার পর গত মে মাসে বিয়ে করে তাঁরা আজিমপুরের ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগ নেতা বাবলু ২০০৪ সালের কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে ওই হল শাখার কোনো কমিটি নেই। ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হন তিনি। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর মাস্টার্স চলছিল। অর্পা সিটি কলেজে বিবিএর শেষ বর্ষের ছাত্রী। তাঁর বাসা বনশ্রী এলাকায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অর্পা বলেন, গতকাল সকালে মোবাইল ফোনে কথা বলা নিয়ে বাবলুর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। সকাল ১১টার দিকে কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন বাবলু। দীর্ঘ সময় পর দরজা না খুললে চাবি দিয়ে লক খুলে ভেতরে ঢোকেন তিনি। বাবলুকে ফাঁস নেওয়া অবস্থায় দেখে ভড়কে যান। কিছু সময় পর স্বাভাবিক হয়ে বন্ধুদের খবর দেন। বন্ধুরা বাসায় গিয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
গতকাল সন্ধ্যায় বাবলুর লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে জগন্নাথ হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিড় করেন। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, বাবলুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান।
তুহিন নামের এক ছাত্র জানান, বাবলু হলের ৩৩৭/ক নম্বর কক্ষে থাকতেন। জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতির কাজ করে শুক্রবার রাত ১১টায় হল থেকে চলে যান বাবলু।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব নন্দী বলেন, বাবলু আত্মহত্যা করতে পারে না। অনেক সহকর্মী বাবলুর বিয়ের খবর শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অর্পা, তাঁর বন্ধু তৃণা ও উৎপলসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনা ঘিরে রহস্য তৈরি হওয়ায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, বাবলুর বাবার নাম শারদা দাশগুপ্ত। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাইপাইল এলাকায়। গতকাল রাতে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে। চার ভাইবোনের মধ্যে বাবলু ছিলেন সবার ছোট।

No comments

Powered by Blogger.