ক্ষমতাসীনরা কখনো বাস্তবতা মেনে নিতে চান না : ফখরুল

বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চে তিনটি পথসভা ও দুটি জনসভায় বক্তব্য দেবেন। এ তথ্য জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'যখন যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁরা কখনোই বাস্তবতা মেনে নিতে চান না। তাঁরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন, সেটিও বুঝতে চান না। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি জনগণের চোখের ভাষা, দেয়ালের লেখা বুঝতে চেষ্টা করুন। যদি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর চান, তাহলে দ্রুত জনগণের দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।


' গতকাল শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ১৮ ও ১৯ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চে সিলেটের মতোই জনতার ঢল নামবে। বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। সেখানে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কর্মসূচি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ১৮ অক্টোবর সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে রোডমার্চ শুরু হবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোডমার্চ কোন স্থান থেকে শুরু হবে তা পরে জানানো হবে। তিনটি পথসভা ও দুটি জনসভায় বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। এবারের রোডমার্চ বহরে তিন হাজারের বেশি গাড়ি থাকবে। পথসভাগুলো হবে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও নওগাঁ জেলার এটিম হাই স্কুল মাঠে। জনসভা হবে বগুড়ার আলতাফুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।
ফখরুল বলেন, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলজিইডি কার্যালয়সংলগ্ন মাঠে পথসভা করার অনুমতি চাওয়া হলেও জেলা প্রশাসন এখনো অনুমতি দেয়নি। ফের আবেদন করা হয়েছে। বিএনপি মনে করে, প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং সেখানে পথসভা করার অনুমতি দেবে। কারণ আগে ওই স্থানে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৮ অক্টোবর রোডমার্চ শুরু হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও টাঙ্গাইলে পথসভার পর বিকেলে বগুড়ায় জনসভা হবে। বগুড়ার জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। জনসভা শেষে রোডমার্চ বহর রাতে বগুড়ায় অবস্থান করবে। পরের দিন ১৯ অক্টোবর সকালে বগুড়া থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে নওগাঁ এটিম হাই স্কুল মাঠে সকাল ১১টায় পথসভা এবং বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভা হবে। জনসভা শেষে রাতেই রোডমার্চ ঢাকায় ফিরে আসবে। ২০ অক্টোবর নাটোরে জনসভা করার কথা থাকলেও ওই দিন ডিগ্রি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় রোডমার্চ এক দিন কমানো হয়েছে। এ কারণে বানেশ্বরে পথসভা এবং নাটোরের জনসভা বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সংসদ থেকে পদত্যাগ করার বিষয় এখনো আসেনি। সেটা দলের সংসদীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে।'
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিএনপির যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, সাদেক হোসেন খোকা, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, সালাহউদ্দিন আহেমদ, মো. শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, কবির মুরাদ, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, নুরে আরা সাফা প্রমুখ।
আমার দেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবাষির্কী : গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক আমার দেশ-এর সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক প্রীতি সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। এতে গুণীজন হিসেবে অধ্যাপক তালুকদার মুনীরুজ্জামান ও লক্ষ্মীপুরে নিহত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে সম্মাননা দেয় আমার দেশ। অধ্যাপক মুনীরুজ্জামানের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক। আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের হাত থেকে পদক নেন নূরুল ইসলামের স্ত্রী রাশিদা ইসলাম। আমার দেশের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ছিল 'মানবাধিকার'।
প্রীতি সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রামে আমার দেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আজ দেশের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। গণতন্ত্র সংকটাপন্ন। দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। এ জন্য আমার দেশের অবদান দেশ চিরদিন স্মরণে রাখবে।
২০১০ সালে আদালত অবমাননার জন্য আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমানকে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাটি স্মরণ করে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, 'এটা আমার জন্য লজ্জার বিষয়। তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই রায় দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। আশা করি আজ তাঁরা বুঝতে পারবেন।'
অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, শফিক রেহমান প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপি নেতা সাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাজিয়া আখতার বানু, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.