বন্যায় বিপর্যস্ত থাইল্যান্ড

মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় অচল হয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড। এদিকে, গত জুলাই মাসের শেষ দিকে শুরু হওয়া বন্যা থাইল্যান্ডে চরম রূপ নিয়েছে। এতে দেশটির রাজধানী ব্যাংকক হুমকির মুখে পড়েছে। ভয়াবহ বন্যায় ব্যাংককের বাসিন্দাদের মধ্যে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা এখন তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। অর্থনীতির কেন্দ্রস্থল, শিল্পাঞ্চল, প্রাদেশিক রাজধানী ব্যাংকক ও সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর রক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে ইংলাক একটি জাতীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে শনিবার জানান। ব্যাংকক কর্তৃপক্ষ এ বন্যার কারণে প্রায় এক কোটি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।


ইংলাক বলেন, থাইল্যান্ডে কয়েক মাসের বন্যায় কমপক্ষে ৩০০ মানুষ মারা গেছে। আর উদ্বাস্তু হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি, থাইল্যান্ডের ইতিহাসে যা ভয়াবহ। তিনি আরও বলেন, আমরা সঙ্কট সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে বন্যা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইংলাক বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ যথেষ্ট উঁচু এবং তা মূল শহরকে বন্যা থেকে বাঁচাতে সক্ষম। ব্যাংকককে এখনও নিরাপদ বলে বিবেচনা করা উচিত।
প্রায় তিন মাস সময় ধরে চলা ওই বন্যায় থাইল্যান্ডের ব্যাপক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে দেশটির উত্তর ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ক্ষতির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। তবে এখন বন্যার পানি ব্যাংকক শহরের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণের দিকে এগোতে থাকায় শহরটির জন্য সাম্প্রতিক ইতিহাসের নজিরবিহীন হুমকি তৈরি হয়েছে। ব্যাংককের পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে ড্রেনের মাধ্যমে পানি সাগরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তা বেশ খানিকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ হুশিয়ার করছে, আগামী কয়েকদিনে ব্যাংককের শহরতলির বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এরই মধ্যে ব্যাংককের কিছুটা উত্তরে অবস্থিত শহর পাথুম থানির অনেক এলাকা পানির নিচে চলে গেছে। তবে ব্যাংককের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত চাও ফারায়া নদীর দুদিকের বাঁধ রক্ষার জন্য গত কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, পানি প্রবাহের প্রধান ড্রেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একটু সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা সেটা খনন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন আশা করা যায়, মূল শহরের কোনো ক্ষতি হবে না। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর প্রাসার্ন ত্রাইরাটবরাকল জানিয়েছেন, এ দুর্যোগে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। মোট ৯৩০টি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক তথ্যে জানা যায়।
উল্লেখ্য, অতি বর্ষণের ফলে থাইল্যান্ডে তিন মাস ধরে চলা বন্যায় ২৮০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। প্রচুর কলকারখানা এবং রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় থাইল্যান্ডের অর্থনীতি বেশ চাপে পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.