আদালতেই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে : ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্যাপক আয়োজন : আমার দেশ সম্মাননা পেলেন দু’জন

দালত তথা বিচার বিভাগে এখন সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে জুডিশিয়ারি। তাই একজন আইনজীবী হিসেবে আমি ভীষণ লজ্জিত। একই সঙ্গে তিনি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার কোর্ট প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের দেশে একটি মানবাধিকার কমিশন এবং মানবাধিকার আইন পাস হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনকে আইন প্রয়োগ করার অধিকার দেয়া হয়নি।


মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোর্ট আছে। আমাদের দেশেও মানবাধিকার কোর্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানবাধিকার কোর্ট প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে মানবাধিকার আইন কাজ করতে পারবে না।
দৈনিক আমার দেশ-এর ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান সরকারের আমলে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। হত্যা, অপহরণ, গুম, ক্রসফায়ার, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, পিটিয়ে হত্যা, রিমান্ডে নির্যাতন, পুলিশের বর্বরতা, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাপক রাজনৈতিক নিপীড়ন এখন অহরহ ঘটছে। সরকারের রোষানলে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অন্যায়ভাবে কারা নির্যাতিত হয়েছেন। নানাবিধ উপায়ে তাকে হয়রানি করা অব্যাহত রয়েছে। এ পত্রিকার বিরুদ্ধে রুজু করা হয়েছে ৫০টি মামলা। ন্যক্কারজনক এই ঘটনা বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য চরম হুমকি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব কারণেই সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘শাসকদের দ্বারা সবচেয়ে নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত মানবাধিকার’।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমাদের সংবিধানে মানবাধিকারকে অত্যন্ত সুউচ্চস্থান দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ অর্থে এদেশের প্রতিটি সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি ।
গতকাল সকালে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে আবৃত্তি, গুণীজন সম্মাননা, বিশিষ্টজনদের বক্তব্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার বেদনার্ত মানুষের প্রতিক্রিয়া, লোকসঙ্গীত এবং মেজবান।
আমার দেশ প্রতিবছর দেশ ও জাতির কল্যাণে মূল্যবান অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মাননা জানিয়ে আসছে। এ বছর সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রখ্যাত রাষ্ট্রদার্শনিক অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান এবং লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাসীদের গডফাদার আবু তাহেরের কিলিং স্কোয়াডের হাতে নিহত অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামানের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট এবং এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। মরহুম নুরুল ইসলামের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও চেক গ্রহণ করেন তার স্ত্রী বেগম রাশিদা ইসলাম; তার হাতে ক্রেস্ট এবং চেক তুলে দেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ভাষাসৈনিক আবদুুল মতিন, আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ, সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুর রউফ, অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর (প্রতীক), জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আগত অভ্যাগতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান আমার দেশ-এর ডেপুটি এডিটর, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মিঞা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, কবি ও সাংবাদিক আল মুজাহিদী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহীদ, সহ-সভাপতি ছড়াকার আবু সালেহ, দিগন্ত টেলিভিশনের নির্বাহী মজিবুর রহমান মঞ্জু, বার্তা২৪ ডটনেট-এর সম্পাদক সরদার ফরিদ আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, এএইচএম হালিম, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু এমপি, মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এমপি, বিরোধীদলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী, সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া ও শাম্মী আকতার, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, লেবার পার্টির (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের, জাগপা সাধারণ সম্পাদক লুত্ফর রহমান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. সদরুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. রাজিয়া আকতার বানু, ড. খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ড. আবুল হাসনাত, তাহমিনা আক্তার টফি, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, বোরহান উদ্দিন, ইকবাল হোসেন, নাসির উদ্দিন অসীম, কায়সার কামাল, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এর নেতা প্রকৌশলী আ.ন.হ আখতার হোসেন, সদস্য সচিব প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, ড্যাব নেতা ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. বজলুল গনি ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, নূরী আরা সাফা, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, শিরিন সুলতানা, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, মো. শাহজাদা মিয়া, সরাফত আলী সপু, এম এ মালেক, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শফিউল বারী বাবু, নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আ.ক.ম.মোজাম্মেল, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, মনির খান, হেলেন জেরিন খান, বিলকিস জাহান শিরিন, রফিক শিকদার, মাহবুবুল হক নান্নু, টিএস আইয়ুব, ফরীদ উদ্দীন আহমদ প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, গতবছর এই দিনে আমি কারাগারে ছিলাম। ১৫ অক্টোবর আমার মামলার হাজিরা ছিল। আমি ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানার মাটিতে শুয়ে বই পড়ছিলাম। আমার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার আবদুুর রাজ্জাক, এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াসহ আরও অনেকে। আর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, ফরহাদ মজহার ও সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী। তাদের ঋণ আমরা কোনো দিনই শোধ করতে পারব না।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে মানবাধিকারকে অত্যন্ত সুউচ্চ স্থান দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, এমন কোনো আইন করা যাবে না যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। কিন্তু এদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সংবিধানের প্রথম দিন থেকেই। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সিরাজ শিকদারকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। সব কটি পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ অর্থে এদেশের প্রতিটি সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনের আইনটি কীভাবে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, সম্প্রতি সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে র্যাব পাঠিয়ে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব গঠন করা হয়েছিল দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য। আর আজ ৭০ বছর বয়স্ক একজন নিরীহ সম্পাদককে ধরা হচ্ছে র্যাব দিয়ে। অন্যদিকে আমার দেশ-এর একজন পরিচালক তাসনীম আলমকে ডিবিতে নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি তাসনীম আলমের মুক্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমার দেশ পরিবার সর্বাত্মক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ লড়াই আমরা চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, আমার দেশ একটি আদর্শের পত্রিকা— কোনো দলীয় পত্রিকা নয়। দলমত নির্বিশেষে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমার দেশ-এর লড়াই অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমরা মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দীনের অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। বতর্মান সময়ে নির্বাচিত ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। প্রীতি সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় এসে যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাহলে আমার দেশ তাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রধান ভিকটিম। সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আমাদের জুডিশিয়ারি। তাই একজন আইনজীবী হিসেবে আমি ভীষণ লজ্জিত। তবে গত বছর মাহমুদুর রহমান জেলে থাকায় একটি বিষয় ভালো হয়েছে। কারণ মাহমুদুর রহমান তার জেল জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন এবং আমরা একটি বই পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটি মানবাধিকার কমিশন এবং মানবাধিকার আইন পাস হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনকে মানবাধিকার কার্যকর করার অধিকার দেয়া হয়নি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোর্ট আছে। আমাদের দেশেও মানবাধিকার কোর্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানবাধিকার কোর্ট প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে মানবাধিকার আইন কাজ করতে পারবে না। তিনি বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে যাব।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন বলেন, মানুষ অনেক সচেতন হচ্ছে এবং আরও হবে। বাংলাদেশকে অনেক কিছু মোকাবিলা করতে হবে, তবেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান যখন জেলে ছিলেন তখন এই স্থান থেকেই আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তার মুক্তির দাবি জানিয়েছি। সেদিন বুঝতে পারিনি তিনি কত বড় একটি কাজ করেছেন এবং কত বড় একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষায় মাহমুদুর রহমান একজন সাহসী সৈনিক। আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে। তাই জীবিত থাকতেই সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই মিলে প্রতিবাদ এবং লড়াই করলে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে। তিনি স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই আমার দেশ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং মানবাধিকার প্রশ্নে আপোষহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। এ জন্য দৈনিক আমর দেশকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমানকে কারাবরণ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, দেশ এখন নানাবিধ সঙ্কটে আবর্তিত। এখন বাংলাদেশে মানুষের প্রধান মৌলিক অধিকার অর্থাত্ বেঁচে থাকার অধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুন এবং গুমের ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। রাষ্ট্র প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে শাসনব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ আফ্রিকান দেশের মতো অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের দুর্নীতির কথা এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। অর্থনীতিতে একটি লুটেরা ধনিক শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সরকারি দলের একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ এবং এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর একপেশে মনোভাব দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে বলা হয়েছিল ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হবে, মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। এখন বলা হচ্ছে, ট্রানজিটের বিনিময়ে ফি নেয়াটা অসভ্যতা। তিনি বলেন, ট্রানজিট প্রশ্নে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। গণআন্দোলন ছাড়া ট্রানজিট প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট, আমার দেশ’র উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ বলেন, বেআইনিভাবে আইনি চক্রান্ত করে আমার দেশ প্রত্রিকা বন্ধ করা হয়েছিল। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমার দেশ পত্রিকা চালু এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। আমাদের লড়াইয়ের কাছে সরকার পরাজিত হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমার দেশ-এর লড়াই অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার যে সম্প্রচার নীতিমালা তৈরির চেষ্টা করছে, তা কেবল কোনো অসভ্য দেশেই করা সম্ভব। সভ্য সমাজে এ ধরনের আইনের কথা কেউ চিন্তা করে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট. খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মাহমুদুর রহমান বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার রক্ষার সিপাহসালার। উনি আদালতে বলেছিলেন, আমি সত্যি কথা বলেছি ক্ষমা চাইব না। আইনজীবী হিসেবে আমরা যা করতে পারিনি, মাহমুদুর রহমান তা করেছেন।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, গত সাতটি বছর দৈনিক আমার দেশকে অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে পার হতে হয়েছে। আগামী দিনে পূর্ণ সফলতা কামনা করছি। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব মানবাধিকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যাবতীয় নোংরা কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র আমার দেশ-এর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। মানবাধিকারের নামে জালিয়াতি এবং প্রতারণা বন্ধ করতেই হবে।
প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ তার বক্তৃতায় বলেন, সত্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আদালতে ক্ষমা না চেয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানবধিকার রক্ষার সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমার দেশ পত্রিকা এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান একটি সংগ্রামের নাম। পত্রিকাটি এর মধ্যেই স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষায় যে ভূমিকা রেখেছে তা জাতি চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’র জন্মই হয়েছিল মানবাধিকার এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষার প্রত্যয়ে। আজ সেই লড়াই শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) বলেন, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে দৈনিক আমার দেশ একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং ধ্রুব তারা। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অঙ্গনে দৈনিক আমার দেশ একটি সংগ্রামের প্রতীক।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, দেশে এখন চলছে দানবের শাসন। এই শাসকের হাত শৃঙ্খলিত। তাদের শৃঙ্খল দিল্লির হাতে। এই দানবের কাছে মানবতার প্রশ্ন অবান্তর।
ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, আমরা ব্রিটিশ আমল থেকে রাজনীতি করছি। কিন্তু এমন জালিম সরকার আর কোনো দিন দেখিনি। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে। এই সরকারের কাছে মানবাধিকারের কোনো মূল্য নেই। তিনি বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে আমাদের বাক রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো আছে। এর মতো মিথ্যাচার আর কি হতে পারে?
সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান বলেন, আমার দেশ এ দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। কিছু দিন আগে আমার দেশ সম্পাদক বাংলাদেশের ভূমি রক্ষায় সিলেটে লংমার্চ করেছেন। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং মানবাধিকার রক্ষায় তিনি নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছেন। এ জন্য তাকে আমরা সালাম জানাই। ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন ভূমিকার জন্য মাহমুদুর রহমান এদেশের নিপীড়িত এবং দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এ লড়াই-সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য আমার দেশ-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আশা করি শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমার দেশ বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বাস্তবে বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। কাজেই মানবাধিকার বলেও কিছু নেই। এখন প্রতিদিন খুন এবং গুমের ঘটনা ঘটছে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে।

No comments

Powered by Blogger.