পূর্বসূরিদের পথ ধরে অধিনায়ক মুশফিকও

'ধুত-ধাত' করতে করতে যে কাল কত লোক মাঠে ঢুকলেন! স্টেডিয়ামে আসতে যাঁদের একটু দেরি হয়ে গেছে, তাঁরা টিকিট নিয়ে ভেতরে ঢোকার লাইনে দাঁড়ানোর আগেই জেনে গেছেন যে ১ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ। আবারও সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তিন নম্বর উইকেটে খেলা। বিশ্বকাপে ৫৮ কাণ্ডের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও তখন ফিরে ফিরে আসছে। একই উইকেটে সিরিজের একমাত্র টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচের জয়ও যেন সে ভীতিকে জয় করতে অপারগ। দেরি করে আসা দর্শকরা তাই চরম বিরক্তি প্রকাশ করতে করতেই ঢুকছিলেন। ১৮ রানে ৪ উইকেট হারানো দলে পরিণত হওয়াটা সে বিরক্তি বাড়িয়েছে বৈ কমায়নি।


শুরুর ব্যর্থতায় অসহিষ্ণু হয়ে পড়া দর্শকদের এরপর যদি কেউ সহিষ্ণু হওয়ার ফুরসত দিয়ে থাকেন, তিনি মুশফিকুর রহিম।
নিজের শততম ওয়ানডে ম্যাচেও বাংলাদেশ অধিনায়কের উজ্জ্বল উপস্থিতি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই ঝলসেছিল যাঁর ব্যাট। টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচে ২৬ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলা এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কাল এমন এক সময়ে নামলেন, যখন ক্যারিবিয়ান পেসারদের বল ক্রমাগত ব্যাটসম্যানের পাঁজর ধেয়ে আসছে। শুরুর বিপর্যয়ের পর মুশফিকের প্রথম সঙ্গী অলক কাপালি তো গোটা চারেক বল শরীরেই নিলেন! তুলনায় উচ্চতায় কম হলেও মুশফিক সেসব সামলে নিচ্ছিলেন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই। তবে একপর্যায়ে হার মানলেন অলক, যখন দল কিনা ৫৮ রানে দাঁড়িয়ে। সেখান থেকে কখনো নাঈম ইসলাম আবার কখনো বা নাসির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দলের দিগভ্রান্ত ইনিংসকে দিয়েছেন পথের দেখা। যে পথের শেষটা দেখে যেতে পারলে নামের পাশে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিটাও লেখা হয়ে যেত হয়তো।
তা না হলেও অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই পেয়েছেন প্রথম ফিফটির দেখা। যেটি তাঁর ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি। শেষপর্যন্ত ১০৯ বলে ৬৯ রান করা মুশফিক ৫৮ রানের সময় একবার 'জীবন' পেয়েছিলেন। অবশ্য এর আগেই শততম ওয়ানডেতে কোনো বাংলাদেশির সেরা ইনিংসটা খেলা হয়ে গেছে তাঁর। এর আগে সেরা ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিল হাবিবুল বাশারের। এ সাবেক অধিনায়ক ২০০৭ বিশ্বকাপের ঠিক আগে প্রস্তুতিমূলক ত্রিদেশীয় একটি ওয়ানডে সিরিজে কানাডার বিপক্ষে করেছিলেন ৫৭ রান। কাল তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া মুশফিকের মাঝে একজন পারফরমার অধিনায়ককে খুঁজে পাওয়ার আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। যেমন পারফরমার অধিনায়ক ছিলেন তাঁর পূর্বসূরি হাবিবুল ও সাকিব আল হাসান। দলীয় আর ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সুবাদে তাঁরা দুজনই বাংলাদেশের সফল অধিনায়কদের মধ্য থেকে এগিয়ে থাকা দুটো নাম।
হাবিবুলের কথাই ধরুন। ৬৯ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এ ব্যাটসম্যান খেলেছেন ১১১ ম্যাচ। যেখানে তাঁর ওয়ানডে গড়ের (২১.৬৮) চেয়ে অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটিংটাই (২৪.০০) উজ্জ্বল। ওয়ানডের (৭৮) মতো টেস্টেও তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটি (১১৩) অধিনায়ক হিসেবেই খেলা। ৫০ টেস্টের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৮ ম্যাচে। ক্যারিয়ার গড়ের (৩০.৮৭) চেয়ে অধিনায়ক হাবিবুলের ব্যাটিংও (২৯.৮২) খুব পিছিয়ে নেই। টেস্ট কী ওয়ানডে_দুই ধরনের ক্রিকেটেই অধিনায়ক সাকিবের ব্যাটিং গড় অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাটিং গড় যেখানে ৩৮.২৩, সেখানে তাঁর ক্যারিয়ার গড় ৩১.৩২। ওয়ানডেতেও ক্যারিয়ার গড়ের (৩৫.১৫) চেয়ে অধিনায়ক সাকিবের ব্যাটিংটা (৩৬.৯৭) এগিয়ে। টেস্ট আর ওয়ানডেতে যথাক্রমে ৩৯ ও ৬৩টি উইকেট নিয়ে অলরাউন্ডার সাকিব অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম পারফরমার।
নেতৃত্বের শুরুতে তাঁদের সঙ্গী হওয়ার ইঙ্গিত অন্তত দিতে পারছেন মুশফিকও।

No comments

Powered by Blogger.