এক বছরে হত্যা ৪২- দুই বাংলাদেশী হত্যা করে বিএসএফের বছর শুরু by আবু সালেহ আকন

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ নতুন বছর শুরু করেছে নিরপরাধ বাংলাদেশী হত্যার মধ্য দিয়ে। গত এক বছরে ৪২ জনকে খুন করেও তাদের রক্তপিপাসা মেটেনি।
বছরের শুরুর দিন গতকাল মঙ্গলবার তারা ঠাকুরগাঁও সীমান্তে এই হত্যাকাণ্ড চালায়। তাদের গুলিতে আহত হয়েছেন আরো তিনজন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্ত হত্যা বন্ধের কথা বলে এলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। অনেক এলাকায় বাংলাদেশীদের তটস্থ থাকতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা ভারতের এই আগ্রাসন বন্ধে সরকারকে শক্ত হতে হবে বলে উল্লেখ করেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মহাপরিচালক বলেছেন, কোনো হত্যাই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এই হত্যার জোর প্রতিবাদ জানাবেন।

গত এক বছরে বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ৪২ জনকে হত্যা করেছে। এদের কাউকে গুলি করে, কাউকে পিটিয়ে আবার কোনো কোনো এলাকায় পাথর ছুড়ে বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। গত এক বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে আহত হয়েছেন ১২৪ জন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এমআরটি) বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক বছরে বিএসএফ ৯৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে অপহরণ করে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এর মধ্যে হাবিবুর রহমান নামে এক যুবককে বিএসএফ ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে নির্মম নির্যাতন চালায়। ওই দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু বিশ্ববিবেকের সেই প্রতিবাদও বিএসএফকে নিরস্ত্র বাংলাদেশী হত্যা থেকে বিরত করতে পারেনি। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ গতকালের ঘটনা। গতকাল ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বুজরুক ও মোলানী সীমান্তে নিহত হন দুই বাংলাদেশী।

আমাদের ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা গোলাম সারোয়ার সম্রাট জানান, নিহতরা হলেন মুক্তার আলম (২৮) ও তরিকুল ইসলাম ওরফে নূর ইসলাম (২৮)। এ ঘটনায় আহতরা হলেন আমজাদ (২৫), সামাদ (২৯) ও রাজু (২৩)। এদের মধ্যে রাজু মোলানী সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন।

বিজিবি ও এলাকাবাসী জানান, হতাহতরা ভোরে বুজরুক সীমান্তে গরু নিয়ে ফিরছিলেন। ওই সময় ভারতের বররা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা গুলি ছুড়লে ৩৬১/৪ এস পিলার এলাকায় তারা গুলিবিদ্ধ হন। এতে ঘটনাস্থলে মুক্তার আলম ও তরিকুল ইসলাম ওরফে নূর ইসলাম নিহত হন এবং অন্যরা আহত হন। আহতরা কোনোক্রমে বাংলাদেশ সীমান্তে এলে তাদের স্বজনরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। অন্য দিকে মোলানী সীমান্তের ৩৬৬ মেইন পিলার এলাকায় গরু আনতে গিয়ে রাজু নামে এক গরু ব্যবসায়ী গুলিতে আহত হন।

দিনাজপুর-২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অফিসার মেজর মোনতাসির মামুন সিদ্দিক, হাতহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, এ নিয়ে পতাকা বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে হত্যা ছাড়াও তাদেরকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া, কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা, কখনো পাথর ছুড়ে হত্যা এবং নিরপরাধ বাংলাদেশীদের ওপর গ্রেনেড হামলা করছে। বোমা ও গ্রেনেডের আঘাতে আহতদের অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন।

গতকালের হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই মন্তব্য করেন, বিএসএফের রক্তপিপাসা মিটছে না। একের পর এক হত্যা করেও তারা ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না। এ কারণে ইংরেজি বর্ষবরণ নিয়ে যখন সারা বিশ্বে উল্লাস চলছে, ঠিক সেই সময়ে বিএসএফ সীমান্তে হত্যা করল দুই বাংলাদেশীকে।

বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান এনডিসি পিএসসি পিএসসি এফএজেডইএল (অব:) বলেছেন, ভারতের কোনো আশ্বাসেই বিশ্বাস করা যায় না। তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালাতেই আপসরফার কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, বর্ডার আগ্রাসন বন্ধ করতে চাইলে সরকারকে শক্ত হতে হবে। ভারতকে বলতে হবে এভাবে করলে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ভারতমুখী হয়ে গেছে। এ কারণেই ভারত সাহস পাচ্ছে বাংলাদেশীদের হত্যা করার।

বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহম্মেদ বলেছেন, ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনার পর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ডই কাম্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। এর প্রতিবাদে আমাদের যা করণীয় তা করছি। তিনি বলেন, হত্যার প্রতিবাদে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
       

No comments

Powered by Blogger.