তরুণদের লেখা আরও চাই, হুমায়ূন আসছেন আজ
টানা তিন দিনের উপচেপড়া ভিড়ের পর সোমবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল বেশ ফুরফুরে। প্রকৃত পাঠকরাই এসেছিলেন এদিন মেলায়। আরাম আয়েশেই তাঁরা এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখেছেন এবং কিনেছেন পছন্দের বইটি।
মেলার আর রয়েছে ৬ দিন। বইমেলা বলে এর ভাঙ্গনের সুর বোঝা যায় না, বরং দিন কমার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি বাড়তে থাকে। আর প্রকাশকরাও আশা করেন একুশের দিনের মতো উপচেপড়া ভিড় না হয়ে, অন্যান্য ছুটির দিনের মতো ভিড় হলে তাঁদের পৰে ক্রেতা সামাল দেয়া সম্ভব হয়। ক্রেতারা বই নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন এবং বিক্রিও আশানুরূপ হয়। এদিন মেলায় দুই মন্ত্রী, একাধিক এমপিসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক এসেছিলেন। নতুন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এসেছে নতুন ৮৫টি বই।মেলায় অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এদিন সস্ত্রীক মেলায় এসেছিলেন। মোটামুটি পুরো মেলা ঘুরে গিয়ে তিনি বসেছিলেন অন্যপ্রকাশের স্টলে। সেখান থেকে হুমায়ূন আহমেদের চারটি বই নিলেন তিনি। তখন নবীন পাঠকদের উদ্দেশে তিনি বললেন, নতুন পাঠকরা যা পাবে তাই পড়বে, বাছ-বিচার পড়ে করবে। আর নবীন লেখকরা যা মনে আসে তাই লিখবে, এভাবেই লিখতে লিখতে লেখা সমৃদ্ধ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তরম্নণ বয়সটাই হলো অস্থির প্রকৃতির। তবে লেখালেখির ৰেত্রে তাঁদের ধৈর্য ধরতে হবে।
আজ আসবেন হুমায়ূন আহমেদ আজ মঙ্গলবার বিকাল চারটায় বইমেলায় আসবেন নবীন ও তরম্নণ পাঠকদের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। মেলায় এদিনই হবে তাঁর প্রথম আগমন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী শাওন থাকবেন কিনা তা জানা যায়নি। মেলায় এসে তিনি বসবেন অন্যপ্রকাশের স্টলে। এবারের বইমেলায় তাঁর অনেক বই এসেছে। এরমধ্যে চারটি এসেছে অন্যপ্রকাশ থেকে এবং একটি কাকলি থেকে।
পলান সরকার পুরস্কার বাংলা একাডেমী এ বছর থেকে 'পলান সরকার পুরস্কার' প্রদান করছে। সর্বাধিক সংখ্যক বই ক্রয়কারীকে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ জন্য তাকে বই ক্রয়ের রশিদ (নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর সম্বলিত) তথ্যকেন্দ্রের বাক্সে জমা দিতে হবে। মেলা শেষ হবে ২৮ ফেব্রম্নয়ারি রবিবার। এদিন বিকাল সাড়ে চারটায় মেলার মূল মঞ্চে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।
মোড়ক উন্মোচন এদিন মেলায় এক ডজনেরও বেশি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে এমপি রাশেদ খান মেননের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। এ সময় আরও ছিলেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বইটির নাম 'চীন থেকে ফিরে'। প্রকাশ করেছে মৃদুল প্রকাশনী। মোড়ক উন্মোচন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল ও মননশীল হয়ে গড়ে উঠতে হবে। এ জন্য তাঁদের বেশি বেশি করে বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বই পড়ার মাধ্যমেই নতুন প্রজন্ম তথ্য-সমৃদ্ধ ও রম্নচিশীল নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। বইটি প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, এটি একটি ভ্রমণ কাহিনী। এতে চীনের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর যেমন বর্ণনা আছে, তেমনি চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ_ সংস্কৃতির কথা আছে। আরও আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীবনবোধ ও সাধারণ মানুষের নাগরিক জীবন উন্নয়নের ভাবনা। তিনি মেলা প্রসঙ্গে বলেন, আজ তো (সোমবার) মেলা বেশ ছিমছাম, মানুষ একটু আয়েশে চলাফেরা করতে পারছে, ঘুরে ঘুরে বই দেখতে পারছে। গতকাল একুশের দিন তো মানুষ সে সুযোগ পায়নি। তবে আমি অভিভূত হয়েছি। একুশের দিন লোক হবে ভেবেছিলাম, তবে এত মানুষ হবে ভাবিনি। এখন মেলায় তারম্নণ্যের জোয়ারই বেশি দেখা যায়। আগে এমনটি দেখা যেত না। আগে আমরাই মেলায় আসতাম, লেখকদের সঙ্গে আড্ডা মারতাম, তরম্নণদের তেমন দেখতাম না। এখন তরম্নণদের মেলায় আসতে দেখে আমার বেশ ভাল লেগেছে। এটা শুভ লৰণ। তিনি আরও বলেন, এখন শুধু গল্প, উপন্যাসের বই-ই আসে না, অন্যান্য বইও যেমন-দর্শন, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ও সৃজনশীল বইও বেশ আসছে। ফলে এসবের পাঠক যেমন গড়ে উঠছে, তেমনি তাঁদের মননেরও বিকাশ ঘটছে। তথ্যমন্ত্রী এদিন লেখক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারম্নন চৌধুরীর একটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করেন। বইটির নাম 'ওয়াশিংটনে শেখ হাসিনা : নানা প্রসঙ্গ'। এ সময় আরও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ও কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি আসলাম সানী, ব্যাংক এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরম্নল ইসলাম অনু, এ্যাডভোকেট সাহিদা বেগম এবং এনা ও ঠিকানা (নিউইর্য়ক) পত্রিকার সিইও সাইদ-উর-রব। এদিন মানব জমিন সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরীরও একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। 'গুড বাই নিউ ক্যাসেল' নামক এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বইটি প্রসঙ্গে বলেন, মাহবুবা চৌধুরী মূলত ছড়াকার, কিন্তু এবার লিখলেন ভ্রমণ কাহিনী। বইটি আমি পড়েছি, আমার বেশ ভাল লেগেছে। আশা করি এ প্রজন্মের তরম্নণসহ সবারই ভাল লাগবে। মাহবুবা চৌধুরী বলেন, তিন মাস নিউ ক্যাসেলে ছিলাম, সে সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি এই বইয়ে।
নতুন বই এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৫টি। এর মধ্যে কবিতার বই সবচেয়ে বেশি, ২১টি। উপন্যাস ১৮টি ও গল্প ৯টি। এদিনের উলেস্নখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে মাহবুবুল হকের বাংলার লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতি এনেছে গতিধারা, তানভীর আহমেদ সিডনীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এনেছে ভাষাচিত্র, সেলিনা খালেদের আট ফাল্গুন এনেছে নন্দিনী, আলী ভাই আসগারের গ্রাম বাংলার গল্প এনেছে বাংলা প্রকাশ, মালতী ফারম্নকের একুশের বর্ণমালা এনেছে আফতাব।
No comments