লাদেন কানেকশন ॥ আল কায়েদার টাকা পায় জঙ্গীরা by গাফফার খান চৌধুরী
বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান থেকেই জঙ্গীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক ভাল। বিগত দিনে আল কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গেও জামায়াত-শিবিরের যোগাযোগ ছিল।
তাদের কাছ থেকে প্রচুর আর্থিক সহযোগিতাও পেয়েছে। আটক আইডিপি প্রধান মুফতি আব্দুস সালামের সঙ্গে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনেরও সম্পর্ক রয়েছে। হুজির ২শ' সদস্য এখন সরাসরি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে রয়েছে। আব্দুস সালাম বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ উত্থানের অন্যতম শীর্ষ নেতা।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি আইডিপি প্রধান মুফতি আব্দুস সালাম জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। আফগান ফেরত মুজাহিদদের জঙ্গী সংগঠন আইডিপি এখনও সক্রিয়। সম্প্রতি আইডিপির জঙ্গীরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। দেশের অধিকাংশ এলাকায় গোপনে তাদের কার্যক্রম চলছে। টিকে থাকতে আইডিপি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। এমনকি আইডিপির মুজাহিদরা আবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রয়োজনে যে কোন ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের। এককালের ইসলামী গণআন্দোলনই এখন আইডিপি নামে পরিচিত। আইডিপির জঙ্গীরা অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে মিলে এখন চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে অস্ত্রের ট্রেনিং অব্যাহত রেখেছে। এর নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। ওয়ান ইলেভেনের সময় আইডিপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাইয়ে দিতেও ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি নানা তদবির করে। এমনকি আড়াই লাখ টাকাও দিয়েছিল। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি, বিএনপি-জামায়াত-শিবিরকে রাজপথে নামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আফগান ফেরত মুজাহিদদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে ইসলামী গণআন্দোলন নামে একটি দল গঠন করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি হাফেজ তাহেরকে দলটির ঢাকা মহনগর শাখার সভাপতি করা হয়। কিন্তু নামটিতে বিপস্নবের গন্ধ থাকায় ২০০৮ সালে আফগান ফেরত মুজাহিদ কাজী
হকের পরামর্শে ইসলামী গণআন্দোলন নাম পরিবর্তন করা হয়। ইসলামী গণআন্দোলনের পরিবর্তে তখন নাম রাখা হয় আইডিপি।
আইডিপির কয়েক শ' সদস্য ও হুজির ২শতাধিক সদস্য এখন নাইৰ্যংছড়ির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রের ট্রেনিং অব্যাহত রেখেছে। হাফেজ ইয়াহিয়া এসব অস্ত্র, গোলাবারম্নদ তদারক করে থাকে। মুফতি আব্দুস সালাম ১৯৭৮ সালে আফগানিসত্মানের খোসত্ম শহরে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। আব্দুস সালাম ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে আব্দুস সালাম দেশে ফিরে হরকত-উল-জিহাদিল নামে ইসলামী দল গঠন করেন। ১৯৯২ সালে মুফতি হান্নান আফগানিসত্মান থেকে দেশে আসে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ১৯৯৩ সালে আব্দুস সালাম দলের আমির নিযুক্ত হন। জঙ্গী সংগঠনের কমিটির বিভিন্ন পদের নাম জামায়াতে ইসলামীর পদের নাম অনুসরণ করা হয়। মূলত জামায়াত ইসলামীর আদলে বাংলাদেশের সব জঙ্গী সংগঠনের কমিটিতে থাকা পদের নাম রাখা হয়েছে। কয়েক জামায়াত নেতার পরামর্শেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ৰমতায় গেলে আবার পুরোদমে মাঠে নামে আফগান ফেরত মুজাহিদরা। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে বসে শীর্ষ জঙ্গীরা মাঝে মধ্যেই মিটিং করত। এমনকি বিএনপির সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন রীতিমত ওই গোয়েন্দা কার্যালয় নিজের বাড়ির মতো ্ব্যবহার করেছে। মাঝে মাঝেই তাজউদ্দিন ওই গোয়েন্দা কার্যালয়ে ৭/৮দিন করে বসবাস করত। সেখানে তাজউদ্দিনের জন্য থাকা-খাওয়া থেকে শুরম্ন করে সব ধরনের সুযোগ- সুবিধার ব্যবস্থাও ছিল।
সর্বশেষ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আফগান ফেরত মুজাহিদদের একত্রিত করতে আইডিপিকে নির্বাচন কমিশন থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাইয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগে গোয়েন্দা সংস্থাটি। এজন্য আব্দুস সালামকে প্রসত্মাব দেয়া হয়। এর আগে আব্দুস সালাম গ্রেফতার হলেও পরে ছাড়া পেয়ে যান। ২০০৮ সালে আইডিপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করার জন্য হাতখরচ হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থাটি আড়াই লাখ টাকাও দেয় আবদুস সালামকে। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম দলটি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়নি। কিন্তু আইডিপি যে এখনও সচল রয়েছে, গোয়েন্দারা এটা নিশ্চিত হয়েছে । জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দেশে বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে জঙ্গীরা।
No comments