বিএসএফের অব্যাহত বাংলাদেশী হত্যা- এই অমানবিক আচরণ আর কত দিন?
বিএসএফ নির্বিচারে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা অব্যাহতভাবে
চালিয়ে যাচ্ছে। যখন, যেভাবে চাইছে এই হত্যা প্রক্রিয়া জারি রেখেছে
বিএসএফ।
কখনো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, কখনো ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে
হত্যা করা হচ্ছে। আবার কখনো অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে তারপর ছেড়ে দিয়েছে
কিংবা ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ
বর্ডার গার্ড বাহিনীর সদস্যকে ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন
চালিয়ে আধমরা অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের গণমাধ্যমে
বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। এমনকি কয়েক বছর আগে কানাডা সরকার বিএসএফের এক
কর্মকর্তাকে সে দেশের ভিসা দিতে অস্বীকার করে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, বিএসএফ
একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। আর সে কারণে এরা এ ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান
করেছে। কিন্তু আমাদের ভারতবান্ধব সরকার বিএসএফের সীমান্তসন্ত্রাস বন্ধে
কার্যকর কোনো বাদ-প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে না। যখনই সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গটি
গণমাধ্যমে ও নাগরিক সমাজে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখন আমাদের সরকার
জানিয়েছে, ভারত এ ধরনের বাংলাদেশী হত্যা বন্ধের আশ্বাস দিয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে যখন এই সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রসঙ্গ উঠেছে, তখন
ভারতীয় প্রতিনিধিরা বারবার হত্যা বন্ধের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাদের
ইচ্ছেমতো এই হত্যা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনটিতেই
বিএসএফ বাংলাদেশী হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে।
দৈনিক নয়া দিগন্ত গতকাল এর শীর্ষ সংবাদে সে দুঃসংবাদটিই আমাদের জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছেÑ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নতুন বছর শুরু করেছে নিরপরাধ বাংলাদেশী হত্যার মধ্য দিয়ে। গত এক বছরে ৪২ জন বাংলাদেশীকে খুন করেও তাদের রক্তপিপাসা মেটেনি। বছরের শুরুর দিনে গত মঙ্গলবার এরা ঠাকুরগাঁও সীমান্তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তাদের গুলিতে আহত হয়েছেন আরো তিনজন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্তে হত্যা বন্ধের কথা বলে এলেও তা কার্যকর করছে না।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এমআরটি) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বিএসএফ ৯৬ জন বাংলাদেশীকে অপহরণ করে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এদের মধ্যে হাবিবুর রহমান নামে এক বাংলাদেশী যুবককে বিএসএফ ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে নির্মম নির্যাতন চালায়। ওই দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। কিন্তু বিশ্ববিবেকের এ প্রতিবাদও বিএসএফকে বাংলাদেশী হত্যা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যে যা-ই বলুক ভারত যা চাইবে তাই করবে। কারো বাদ-প্রতিবাদে কান দেবে না ভারত। বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তে ভারতের এই অগ্রাসন বন্ধ করতে হলে জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। সরকারকে এ ক্ষেত্রে নিতে হবে শক্তিশালী অবস্থান। এ ক্ষেত্রে আমরা শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারিনি বলেই বছরের পর বছর ধরে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহতভাবে চলছে এবং সময়ের সাথে এর তীব্রতাও বাড়ছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশীরা কি এভাবে সীমান্তে অব্যাহতভাবে হত্যার শিকার হতে থাকবে? ভারতের সাথে বন্ধুত্ব ক্ষতির মুখে পড়বে, সে অজুহাতে আমরা কি ভারতের এই অন্যায় আচরণ মেনে নেবো?
আমরা মনে করি, আমাদের সরকারকে এখন শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর উপায় উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে আর একজন বাংলাদেশীকেও হত্যার শিক্ষার হতে না হয়। যদি দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতায় তা সম্ভব না হয়, তবে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে। সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। এখন চূড়ান্ত সময় এ সমস্যা সমাধানের। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলে এ সমাধান সবচেয়ে সহজতর হবে। আশা করব, ভারত এবার অন্তত এ ব্যাপারে যৌক্তিক পদক্ষেপ নেবে। যদি তেমনটি না ঘটে আমাদের সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। কারণ, এভাবে আমাদের ভাই-বোনদের পাখির মতো গুলি খেয়ে মরার পরিস্থিতিকে কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এই মানবিক সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।
No comments