এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই- বাজার সিন্ডিকেটের হাতে সেমিনারে অর্থমন্ত্রী মুহিত
অর্থনৈতিক রিপোর্টার সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বাজার। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে এর কোন যৌক্তিকতা নেই। বিশ্বের কোন দেশে দামের পরিবর্তন এভাবে হয় না।
বর্তমান বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি রাখে সরকার। মঙ্গলবার "বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্প্রতিক অগ্রগতি" শীর্ষক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, চালের সরবরাহে কোন অভাব নেই। কম দামে চাল দেয়া সত্ত্বেও বাজারে দাম বাড়ছে। যে কোনভাবেই হোক বাজার সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। তিনি সিন্ডিকেটের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ধরন ও বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও সংবাদিকদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন।রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ওই সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, লিকিউটি জাতীয় গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা দরকার। এটা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। গত ১০ বছরে কোন গ্যাস কূপ খনন করা হয়নি। গ্যাস থাকা সত্ত্বেও উত্তোলন না করায় গ্যাসের সঙ্কট হয়েছে। এ জন্য এলএনজি আমদানির প্রয়োজন। শেয়ার বাজারের ব্যাপারে তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড কোথায় যায়। মিউচুয়াল ফান্ড উন্মুক্ত করার প্রসত্মাব দেয়া হয়েছে। যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। গভীরভাবে শেয়ার বাজার পর্যবেণ করা দরকার। জনগণের সুবিধা দিতে ব্যাংকিং খাত আরও সম্প্রসারণের প্রয়োজন। পাবলিক খরচ ১৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করতে হবে। বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ করতে হবে। বর্তমান বিনিয়োগ হচ্ছে ২৪ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও সরকারের গবেষণা ইনস্টিটিউটি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআইডিএস) যৌথ উদ্যোগে ওই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক সেমিনারটি পরিচালনা করেন। ওই সেমিনারে দেশের গত এক বছরের অর্থনীতির অগ্রগতির উপর মূল প্রবন্ধ যৌথভাবে উপস্থাপন করে বিআইডিএসের মহাপরিচালক মুসত্মফা কে মুজেরি ও গবেষণা পরিচালক আসাদুজ্জামান। সেমিনারে অর্থনীতির জন্য ৫টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়। বিশেষ করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও নিচে নিয়ে আসা, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের দূরত্ব কমিয়ে আনা ও শাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে সেমিনারে সরকারকে আগাম সর্তক করে দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বোরো উৎপাদনে জোর দেয়া, দ্রম্নত পদপে নেয়াসহ বিদু্যত ও জ্বালানি খাতে মধ্যম পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণ, ব্যবসার উন্নয়নের জন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে টিসিবিকে শক্তিশালী করা, এডিপির খরচ বৃদ্ধি, কৃষককে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা, কৃষি গবেষণা উন্নয়ন, বাজারজাত ব্যবস্থার উন্নয়ণ, ত্রম্নটি পরিসংখ্যান সংশোধন, ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়। মূল প্রবন্ধে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয় সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি ভাল অবস্থায় আছে। এভাবে চলতে থাকলে এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে সরকারের প্রাক্কলন হচ্ছে ৬ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারকে আগাম সর্তক করে দিয়ে বলা হয় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে ২০১০ সালে জিনিসপত্রের দাম করার কোন লণ দেখা যায় না। ফলে আমদানি পণ্যের মূল্য হ্রাসের সম্ভাবনা নেই। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সরকারের পলিসি পর্যায়ে দ্রম্নত সিদ্ধানত্ম নিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয় রাজস্ব আয় অর্জন ভাল। রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে প্রথম তিন মাসে ১৪ শতাংশ হয়েছে। জুলাই ডিসেম্বের বার্ষিক উন্নয়ণ কর্মসূচী খরচ হয়েছে ২৯ শতাংশ। গত বছর এই সময় হয় ২৪ শতাংশ। এডিপির ল্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আরও খরচ বাড়াতে হবে। এছাড়া বিশ্বমন্দায় শুধু রফতানি খাতে নয় সামাজিক খাতেও প্রভাব পড়তে শুরম্ন করেছে। এ সময়ে দশমিক ৬ শতাংশ কর্মসংস্থান কম হয়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ আমদানি কমেছে। শ্রম বাজারের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক কমেছে। গত বছর ২২ শতাংশ শ্রম বাজারের প্রবৃদ্ধি হলেও এ বছর প্রায় ৮ থেকে ৯ শতাংশ কম হবে। মজুরির ব্যাপারে বলা হয় কৃষিতে মজুরি কমেছে। কৃষির বাইরে মজুরি বেড়েছে। রফতানির গতি এখনও ফিরে আসেনি। খাদ্য উৎপাদনের ব্যাপারে বলা হয়, খাদ্য উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় বাড়েনি। তবে বোরোর দিকে বেশি জোর দিতে হবে। বাম্পার বোরো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মাঠ পর্যায়ে চিত্র হলে কৃষক উপকরণ নিয়ে এ বছর কোন সমস্যায় পড়েনি। তবে কৃষি ঋণ পেতে কষ্ট হয়েছে। উত্তরবঙ্গে আমন উৎপাদন কম হয়েছে। কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে আরও উৎসাহিত করতে হবে। কারণ অর্থনীতির জন্য এখন আমন হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। আমনের শুরম্ন ও শেষে উভয় সময় বন্যা ও খরায় আক্রানত্ম হয়। বাজারজাত ও কৃষি গবেষণা বাড়াতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে টিসিবিকে সক্রিয় করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শিল্পায়নের ব্যাপারে বলা হয় রেজিস্ট্রেশন বেড়েছে। কিনত্মু টেক্সটাইল খাতে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। আগের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমেছে। এ পর্যনত্ম মোট বরাদ্দের ২৬ শতাংশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ওএমএস খাতে কম বরাদ্দ হয়েছে। চালের পরিমাণ কম বা চালের মান ভাল না থাকায় কম দামে দেয়ার পরও ক্রেতা ওএমএসের চাল নিচ্ছে না।
ওই সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, ব্যবসাবাণিজ্য উন্নয়নের জন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ে কোন ত্রম্নটি আছে কিনা না বাজার ব্যবস্থায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে তা দেখতে হবে। সার ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সতর্ক থাকা দরকার। তিনি বলেন আগামীতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে যদি এসব জিনিসের দাম বাড়ে। মূল্যস্ফীতির কারণে বেশি আক্রানত্ম ব্যক্তিদের সরকার বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন অর্থনীতির গতি ফিরে আসছে। এ অবস্থায় চললে এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারম্নক খান বলেন, বিদেশে নতুন নতুন স্থানে ট্রেড সেন্টার খোলা হচ্ছে। জাপান ও দুবাইতে ট্রেড সেন্টার হবে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে সমঝোতার ফল আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে। টিসিবিকে সক্রিয় করার পদপে নেয়া হয়েছে।
No comments