বর্ষবরণের নামে উন্মত্ত আচরণ-অপসংস্কৃতি রোধে ব্যবস্থা নেই

থার্টিফার্স্ট নাইট নামে গত কয়েক বছরে এক উন্মাতাল বেয়াড়া সংস্কৃতি চালু হয়েছে বাংলাদেশে। পাশ্চাত্যে লাগামহীন নৈতিক স্খলনের প্রতিফলন ঘটে এ দিন।
ইউরোপ, আমেরিকার এসব অপকৃষ্টির সাথে আমাদের জনগণের যাপিত জীবনের সঙ্গতি নেই। তাই সংস্কৃতির নামে উন্মাদনা বাংলাদেশে  সামাজিক অনাচারের শামিল। দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের দেশে ক্রমেই এটি ব্যাপকভাবে চালু হচ্ছে। এর বিস্তৃতি ঘটানোর অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরের কিছু এলাকায় ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে উচ্ছৃঙ্খল নারী-পুরুষদের অনাচার করার সুযোগ করে দেয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে নানা হাঁকডাক এমনকি সন্ধ্যার আগে ঘরে ফেরার নির্দেশ দিতে দেখা যায়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ওই সব অনুষ্ঠানের ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় না।

বাংলা, হিজরি ও ইংরেজিÑ এই তিনটি বর্ষপঞ্জি বাংলাদেশে জনজীবনে আদৃত। বাংলা ফসলি সাল। এর সাথে কৃষকের নাড়ির সম্পর্ক। ফসল বোনা, ঘরে তোলা এবং নানা উৎসবও এই সাল অনুসরণ করে পালন করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও মুসলমানদের অনুশাসন হিজরি সন অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়ে থাকে। দুটো পঞ্জিকাই এ দেশের মানুষের সামাজিক জীবনের গভীরে প্রোথিত। দুটো বর্ষপঞ্জির শুরুতে আনন্দ অনুষ্ঠান আছে কিন্তু উচ্ছৃঙ্খলতা নেই। অপর দিকে আন্তর্জাতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি বর্ষ। এই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী জাতীয় জীবনের  বেশির ভাগ কার্যক্রম নির্ধারিত হয়। এটি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় একটি অনিবার্য বাস্তবতা। কিন্তু অশ্লীলতা দিয়ে সে বছরটি শুরু করতে হবেÑ তার কোনো অর্থ হয় না।

আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতীতে নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড দেখেছি ইংরেজি নববর্ষ বরণে। এক নারীকে সেখানে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। বখাটেরা বস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছিল তার। রাজনৈতিক যোগসূত্রের কারণে সে আসামিরা ছাড়াও পেয়ে গেছে। কিন্তু বর্ষবরণ উন্মাদনা বন্ধ হয়নি। মধ্যরাতে একটি পাবলিক প্লেসে নারী-পুরুষের উচ্ছৃঙ্খল অবৈধ মেলামেশার নাম কিভাবে স্বাধীনতা হতে পারে? রাজধানীতে আরো কিছু পাবলিক প্লেস রয়েছে যেগুলোতে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নারী-পুরুষ দৃষ্টিকটু মেলামেশা করে। এসব কর্মকাণ্ড কিভাবে বৈধ হতে পারে নৈতিকতা ও আইনের দৃষ্টিতে? কিছু ‘সংরক্ষিত’ এলাকা রয়েছে যেখানে নারী-পুরুষের মেলামেশা অশালীন ভ্রষ্টতার রূপ নেয়। পাঁচ তারকা হোটেলে এবারো বছরের শেষ রাতে এ আয়োজন হয়েছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকার আরো অনেক স্পটে উদ্দাম অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সেখানে উৎকট নেশাদ্রব্য সেবন করা হয়। বর্ষবরণের নামে অর্ধনগ্ন নৃত্য চলে।

ইংরেজি বর্ষবরণের নামে যা হয়েছে, একটি সভ্য দেশে তা চলতে পারে না। মধ্যরাতে অপরাধ দমনে পুলিশ নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে। তারা বড় বড় শহরে মধ্যরাতে টহল দিয়েছে। অথচ হোটেল-বারে মধ্যরাতে নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডও চলেছে। রাস্তায় কঠোর ভাব দেখিয়ে হোটেলবারে উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের সুযোগ করে দেয়া নীতিহীনতার নামান্তর। বর্ষবরণের জন্য নির্মল আনন্দের কোনো অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা যেতে পারে না। কিন্তু অবৈধও অনৈতিক কাজগুলোকে রোধ করতে হবে। আমরা মনে করি, সরকার দৃঢ়ভাবে নীতিগত অবস্থান নিলে কারো পক্ষ থেকে উচ্ছৃঙ্খলতাপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব নয়।
       

No comments

Powered by Blogger.