২০৩০ সাল নাগাদ অনেক দেশেই নাটকীয় পরিবর্তন by হাসান শরীফ
বিভিন্ন দেশে ২০৩০ সাল নাগাদ মতার বিভাজনে নাটকীয় প্রভাব পড়বে, ১৭৫০
সাল থেকে অব্যাহত থাকা পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিক উত্থান ব্যাপকমাত্রায় বদলে
দেবে, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এশিয়ার গুরুত্ব বাড়াবে।
জিডিপি, জনসংখ্যার আকার, সামরিক ব্যয় ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগভিত্তিক
বৈশ্বিক মতার দিক দিয়ে এশিয়া সম্মিলিতভাবে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপকে
ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে চীন একাই সম্ভবত বৃহত্তম
অর্থনীতিতে পরিণত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালেই চীনের পেছনে পড়ে যেতে
পারে। পাশাপাশি ইউরোপ, জাপান ও রাশিয়ার অবস্থা সম্ভবত আরো খারাপ হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই ব্যাপক পরিবর্তনের প্রভাবটি কেমন হবে, তা নির্ভর করবে
উন্নয়নশীল দেশগুলোর আচরণের ওপর, পশ্চিমাদের ভূমিকা হবে এতে গৌণ।
পাশ্চাত্যের বাইরে মধ্যবর্তী স্তরে থাকা কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, দণি আফ্রিকা ও তুরস্ক এবং অন্য দেশগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের অবস্থান আরো ব্যাপক হতে পারে।
এই দেশগুলো জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আকারের কারণে চীন ও ভারতের সাথে সমানতালে পাল্লা দিতে না পারায় দ্বিতীয় সারিতে থাকবে। তবে সম্মিলিত গ্র“প হিসেবে তারা ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক শক্তির পরিভাষায় ইউরোপ, জাপান ও রাশিয়াকে ছাপিয়ে যাওয়া শুরু করবে।
আমাদের মডেলে দেখা যাচ্ছে, মধ্যবর্তী স্তরে থাকা দ্রুত উন্নয়নশীল এসব দেশ- গোল্ডম্যান স্যাচের ‘নেক্সট ইলেভেন’- সম্মিলিতভাবে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক শক্তিতে ইইউ-২৭-এর স্থান অধিকার করবে। চীন ও ভারতের মতো অ-পাশ্চাত্য দেশের সাথে মধ্যবর্তী স্তরে থাকা এসব দেশ যখন যুক্ত হবে, তখন শক্তির ভরকেন্দ্র পাশ্চাত্য থেকে অ-পাশ্চাত্যে সরে যাওয়াটা আরো ব্যাপকভাবে দেখা যাবে।
আর এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক মতার ভারসাম্য পাশ্চাত্য থেকে চলে আসবে অ-পাশ্চাত্যে। জাতীয় শক্তির এই পরিবর্তনের প্রচণ্ডতা প্রতিফলিত হবে আঞ্চলিক শক্তির মাধ্যমে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ চলতে থাকে। এর কিছু গতিশীলতা এশিয়ার বাইরে সংঘটিত হবে। অবশ্য চীন ও ভারত তত দিনে তাদের আঞ্চলিক অবস্থান সুসংহত করে ফেলবে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ চীনের জিডিপি হবে জাপানের চেয়ে প্রায় ১৪০ শতাংশ বড়। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীন এগিয়ে থাকবে ভারতের চেয়ে। তবে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশ দু’টির ব্যবধান কমে আসবে, কারণ ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে, চীনের কমবে। আজ চীনকে যে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র মনে হচ্ছে, ওই সময়ে তা ভারতের েেত্র প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে চীনের ৮ থেকে ১০ শতাশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০৩০ সাল নাগাদ সুদূর অতীতের স্মৃতি মনে হতে পারে।
চীনের কর্মম জনসংখ্যা সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছাবে ২০১৬ সালে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৯৯ কোটি ৪০ লাখ থেকে কমে ৯৬ কোটি ১০ লাখে দাঁড়াবে। বিপরীতে ভারতের কর্মম জনসংখ্যা ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। আরো তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত খুব সম্ভবত পাকিস্তানের বিপরীতে তার শক্তি আরো সুসংহত করবে। ভারতের অর্থনীতি এখনই পাকিস্তানের চেয়ে ৮ গুণ বড়, ২০৩০ সাল নাগাদ এই অনুপাত দাঁড়াতে পারে ১৬:১-এ।
আফ্রিকায় মিসর, ইথিওপিয়া ও নাইজেরিয়া পেছনে ফেলে দেবে দণি আফ্রিকাকে। তবে আরো বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ও মানবীয় উন্নয়নের জন্য সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিবেচিত হবে। দণি-পূর্ব এশিয়ায় ভিয়েতনাম ২০৩০ সাল নাগাদ থাইল্যান্ডের কাছাকাছি চলে আসবে। ভিয়েতনাম তার ধীরস্থির প্রবৃদ্ধির সুবিধা পাবে, আর থাইল্যান্ড বিশৃঙ্খল ও উত্থান-পতন ধাঁচের প্রবৃদ্ধির মুখে পড়বে।
লাতিন আমেরিকায় আগামী ১৫ বছর ব্রাজিলের অবস্থান সম্ভবত ‘দেিণর পরাক্রমশালী’ হিসেবে নিশ্চিত হবে। বিশেষ করে মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার তুলনায় এই দেশটির অবস্থান আরো মজবুত হবে। অবশ্য মেক্সিকো ও কলম্বিয়ারও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউরোপে জার্মানিই সম্ভবত শীর্ষে থাকবে অপর ইইউ’র অন্য ২৬টি দেশের চেয়ে। তবে দেশটি প্রবীণ জনসংখ্যা নিয়ে সমস্যায় পড়বে। রাশিয়াও নাজুক অবস্থায় পড়বে মূলত জনসংখ্যা কম থাকায়। তাদের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি হ্রাস পাবে। একই সময়ে অন্য দেশগুলোর চেয়ে তাদের জনসংখ্যাই কমবে বেশি। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অভিবাসনের কারণে রাশিয়া তাদের বর্তমান বৈশ্বিক মতা অুণœ রাখতে পারে।
আগামী ১৫-২০ বছর পরও আফগানিস্তান, কঙ্গো, সোমালিয়ার মতো দেশগুলো ভঙ্গুর অবস্থাতেই থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্বল সরকার, নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার কারণে এসব দেশ নানা ধরনের জটিল অবস্থাতেই থাকবে।
বিভিন্ন দেশের দ্রুত পরিবর্তন এবং নিজেদের বদলে নেয়ার প্রয়াসের ফলে একে অন্যের সাথে দেশগুলোর আচরণের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে, সার্বিক আন্তর্জাতিক অবস্থানে কোনো কোনো দেশের প্রত্যাশা পূরণ হবে, কারো কারো হবে না। ২০৩০ সাল হবে অনেক দেশের জন্য মোড় পরিবর্তনকারী। অনেক দেশের বৈশ্বিক শক্তি সমান তালে এগোবে, কারো কারো এগিয়ে যাওয়ার গতি হ্রাস পাবে। কেবল চীন ও যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ, জাপান ও রাশিয়ার জন্য সময়টা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে, তারা কতটা খাপ খাওয়াতে পারে, সেটাই হবে বিবেচ্য বিষয়। বিশেষজ্ঞরা যে মতার চক্র তৈরি করেছেন, তাতে দেখা যায়, কোনো দেশের ক্রমবর্ধমান শক্তি যখন মন্থর হয়ে পড়ে বা আর না বাড়ে, তখন ওই দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং নিজেকে আরো দম্ভভরে জাহির করতে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে, অন্তর্বর্তী সময়ে শক্তিকাঠামোয় পরিবর্তনের হার অনেক মন্থর হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীন ও ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে সাবেক পরাশক্তি ব্রিটেন (১৯ শতক) এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের (২০ শতক) অবস্থান খর্ব করছে। আগে একই সময়ে একটি বা দুটি দেশের উত্থান হতো। তারা তাদের অগ্রযাত্রাকালে সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর বদলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ঝাঁকুনি দিত।
জাতীয় শক্তির পরিবর্তন কেবল অর্ধেক কাহিনী। বরং মতার প্রকৃতির বদল সামগ্রিকভাবে সবকিছুকে ছাপিয়ে মৌলিক পরিবর্তন আনবে। ২০৩০ সাল নাগাদ কোনো দেশই- যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা অন্য কোনো বৃহৎ দেশের কেউ নয়- এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না।
যোগাযোগ প্রযুক্তির মদদপুষ্ট হয়ে শক্তি প্রায় নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় চালিকাশক্তিগুলোর সমন্বয়ে বহুমুখী এবং অবয়বশূন্য নেটওয়ার্কের দিকে আরো বেশি ধাবিত হবে। এসব নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব হবে অবস্থান, আওতাভুক্ত, কূটনৈতিক দতা ও গঠনমূলক প্রকৃতির। নেটওয়ার্কগুলো নীতিনির্ধারকদের সংযত রাখবে, কারণ বিভিন্ন পয়েন্টে নানা শক্তি নীতিনির্ধারকদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করবে।
আমরা যদিও বিশ্বাস করি, বিশ্বব্যাপী ধ্যান-ধারণা গণতান্ত্রিক শাসনের দিকেই যাবে, তবুও অ-রাষ্ট্রীয় শক্তি ও তাদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা কিছুটা কঠিনই হতে পারে। কয়েকটি দেশ (বুরুন্ডি, ইয়েমেন, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, উগান্ডা, মালাবি, কঙ্গো, কেনিয়া, হাইতি, ইথিপিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, নাইজার, শাদ) রূঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করতে পারি, পরবর্তী ২০ বছরে রূঢ় ও নমনীয় শক্তিসম্পন্ন দেশের অবস্থান উন্নত হবে। আন্তঃসরকার, জাতিসঙ্ঘ চুক্তি, কূটনৈতিক কানেকশন ও জোটবদ্ধতার মতো বিষয়গুলো কূটনৈতিক শক্তি নির্ধারণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো দেশগুলোর হাতে বস্তুগত ও কূটনৈতিক উভয় ধরনের শক্তি বেশ ব্যাপক মাত্রায় পুঞ্জীভূত থাকলেও তারা তাদের রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় অংশীদারদের বাদ দিয়ে এগিয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম।
প্রযুক্তির অবস্থান আরো ব্যাপক হবে। বর্তমানের গুগল ও ফেসবুক থাকবে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট ‘মোগল’দের শীর্ষে। বেশির ভাগ সরকারের চেয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেই থাকবে অনেক বেশি তথ্য। তারাই মানবীয় উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে, বেসরকারি কোম্পানির মতো অ-রাষ্ট্র চালিকাশক্তিগুলোকে আরো ব্যাপক ভূমিকা পালনের দিকে নিয়ে যাবে।
অ-রাষ্ট্র চালিকাশক্তিগুলোর মতা বাড়ায় তা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীায়ও ফেলবে। তাদের কারণেই সরকারগুলো জনগণের কাছে আরো বেশি জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে। তবে রাষ্ট্রবহির্ভূত চালিকাশক্তিগুলোই যে সরকারের চেয়ে বেশি কার্যকর, সেটাও তাদের প্রমাণ করতে হবে। জনগণ এমনি এমনি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেবে না। সদিচ্ছায়ই যথেষ্ট বিবেচিত হবে না। ধারণা করা যেতে পারে, হ্যাকারদের মতো মন্দ উপাদানগুলোর ওপর আরো বেশি রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ নেমে আসতে পারে। আবার ইতিবাচক উদ্দেশ্যসংবলিত ব্যক্তিদের জন্য আরো বেশি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
পাশ্চাত্যের বাইরে মধ্যবর্তী স্তরে থাকা কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, দণি আফ্রিকা ও তুরস্ক এবং অন্য দেশগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের অবস্থান আরো ব্যাপক হতে পারে।
এই দেশগুলো জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আকারের কারণে চীন ও ভারতের সাথে সমানতালে পাল্লা দিতে না পারায় দ্বিতীয় সারিতে থাকবে। তবে সম্মিলিত গ্র“প হিসেবে তারা ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক শক্তির পরিভাষায় ইউরোপ, জাপান ও রাশিয়াকে ছাপিয়ে যাওয়া শুরু করবে।
আমাদের মডেলে দেখা যাচ্ছে, মধ্যবর্তী স্তরে থাকা দ্রুত উন্নয়নশীল এসব দেশ- গোল্ডম্যান স্যাচের ‘নেক্সট ইলেভেন’- সম্মিলিতভাবে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক শক্তিতে ইইউ-২৭-এর স্থান অধিকার করবে। চীন ও ভারতের মতো অ-পাশ্চাত্য দেশের সাথে মধ্যবর্তী স্তরে থাকা এসব দেশ যখন যুক্ত হবে, তখন শক্তির ভরকেন্দ্র পাশ্চাত্য থেকে অ-পাশ্চাত্যে সরে যাওয়াটা আরো ব্যাপকভাবে দেখা যাবে।
আর এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক মতার ভারসাম্য পাশ্চাত্য থেকে চলে আসবে অ-পাশ্চাত্যে। জাতীয় শক্তির এই পরিবর্তনের প্রচণ্ডতা প্রতিফলিত হবে আঞ্চলিক শক্তির মাধ্যমে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ চলতে থাকে। এর কিছু গতিশীলতা এশিয়ার বাইরে সংঘটিত হবে। অবশ্য চীন ও ভারত তত দিনে তাদের আঞ্চলিক অবস্থান সুসংহত করে ফেলবে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ চীনের জিডিপি হবে জাপানের চেয়ে প্রায় ১৪০ শতাংশ বড়। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীন এগিয়ে থাকবে ভারতের চেয়ে। তবে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশ দু’টির ব্যবধান কমে আসবে, কারণ ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে, চীনের কমবে। আজ চীনকে যে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র মনে হচ্ছে, ওই সময়ে তা ভারতের েেত্র প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে চীনের ৮ থেকে ১০ শতাশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০৩০ সাল নাগাদ সুদূর অতীতের স্মৃতি মনে হতে পারে।
চীনের কর্মম জনসংখ্যা সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছাবে ২০১৬ সালে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৯৯ কোটি ৪০ লাখ থেকে কমে ৯৬ কোটি ১০ লাখে দাঁড়াবে। বিপরীতে ভারতের কর্মম জনসংখ্যা ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। আরো তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত খুব সম্ভবত পাকিস্তানের বিপরীতে তার শক্তি আরো সুসংহত করবে। ভারতের অর্থনীতি এখনই পাকিস্তানের চেয়ে ৮ গুণ বড়, ২০৩০ সাল নাগাদ এই অনুপাত দাঁড়াতে পারে ১৬:১-এ।
আফ্রিকায় মিসর, ইথিওপিয়া ও নাইজেরিয়া পেছনে ফেলে দেবে দণি আফ্রিকাকে। তবে আরো বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ও মানবীয় উন্নয়নের জন্য সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিবেচিত হবে। দণি-পূর্ব এশিয়ায় ভিয়েতনাম ২০৩০ সাল নাগাদ থাইল্যান্ডের কাছাকাছি চলে আসবে। ভিয়েতনাম তার ধীরস্থির প্রবৃদ্ধির সুবিধা পাবে, আর থাইল্যান্ড বিশৃঙ্খল ও উত্থান-পতন ধাঁচের প্রবৃদ্ধির মুখে পড়বে।
লাতিন আমেরিকায় আগামী ১৫ বছর ব্রাজিলের অবস্থান সম্ভবত ‘দেিণর পরাক্রমশালী’ হিসেবে নিশ্চিত হবে। বিশেষ করে মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার তুলনায় এই দেশটির অবস্থান আরো মজবুত হবে। অবশ্য মেক্সিকো ও কলম্বিয়ারও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউরোপে জার্মানিই সম্ভবত শীর্ষে থাকবে অপর ইইউ’র অন্য ২৬টি দেশের চেয়ে। তবে দেশটি প্রবীণ জনসংখ্যা নিয়ে সমস্যায় পড়বে। রাশিয়াও নাজুক অবস্থায় পড়বে মূলত জনসংখ্যা কম থাকায়। তাদের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি হ্রাস পাবে। একই সময়ে অন্য দেশগুলোর চেয়ে তাদের জনসংখ্যাই কমবে বেশি। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অভিবাসনের কারণে রাশিয়া তাদের বর্তমান বৈশ্বিক মতা অুণœ রাখতে পারে।
আগামী ১৫-২০ বছর পরও আফগানিস্তান, কঙ্গো, সোমালিয়ার মতো দেশগুলো ভঙ্গুর অবস্থাতেই থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্বল সরকার, নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার কারণে এসব দেশ নানা ধরনের জটিল অবস্থাতেই থাকবে।
বিভিন্ন দেশের দ্রুত পরিবর্তন এবং নিজেদের বদলে নেয়ার প্রয়াসের ফলে একে অন্যের সাথে দেশগুলোর আচরণের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে, সার্বিক আন্তর্জাতিক অবস্থানে কোনো কোনো দেশের প্রত্যাশা পূরণ হবে, কারো কারো হবে না। ২০৩০ সাল হবে অনেক দেশের জন্য মোড় পরিবর্তনকারী। অনেক দেশের বৈশ্বিক শক্তি সমান তালে এগোবে, কারো কারো এগিয়ে যাওয়ার গতি হ্রাস পাবে। কেবল চীন ও যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ, জাপান ও রাশিয়ার জন্য সময়টা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে, তারা কতটা খাপ খাওয়াতে পারে, সেটাই হবে বিবেচ্য বিষয়। বিশেষজ্ঞরা যে মতার চক্র তৈরি করেছেন, তাতে দেখা যায়, কোনো দেশের ক্রমবর্ধমান শক্তি যখন মন্থর হয়ে পড়ে বা আর না বাড়ে, তখন ওই দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং নিজেকে আরো দম্ভভরে জাহির করতে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে, অন্তর্বর্তী সময়ে শক্তিকাঠামোয় পরিবর্তনের হার অনেক মন্থর হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীন ও ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে সাবেক পরাশক্তি ব্রিটেন (১৯ শতক) এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের (২০ শতক) অবস্থান খর্ব করছে। আগে একই সময়ে একটি বা দুটি দেশের উত্থান হতো। তারা তাদের অগ্রযাত্রাকালে সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর বদলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ঝাঁকুনি দিত।
জাতীয় শক্তির পরিবর্তন কেবল অর্ধেক কাহিনী। বরং মতার প্রকৃতির বদল সামগ্রিকভাবে সবকিছুকে ছাপিয়ে মৌলিক পরিবর্তন আনবে। ২০৩০ সাল নাগাদ কোনো দেশই- যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা অন্য কোনো বৃহৎ দেশের কেউ নয়- এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না।
যোগাযোগ প্রযুক্তির মদদপুষ্ট হয়ে শক্তি প্রায় নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় চালিকাশক্তিগুলোর সমন্বয়ে বহুমুখী এবং অবয়বশূন্য নেটওয়ার্কের দিকে আরো বেশি ধাবিত হবে। এসব নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব হবে অবস্থান, আওতাভুক্ত, কূটনৈতিক দতা ও গঠনমূলক প্রকৃতির। নেটওয়ার্কগুলো নীতিনির্ধারকদের সংযত রাখবে, কারণ বিভিন্ন পয়েন্টে নানা শক্তি নীতিনির্ধারকদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করবে।
আমরা যদিও বিশ্বাস করি, বিশ্বব্যাপী ধ্যান-ধারণা গণতান্ত্রিক শাসনের দিকেই যাবে, তবুও অ-রাষ্ট্রীয় শক্তি ও তাদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা কিছুটা কঠিনই হতে পারে। কয়েকটি দেশ (বুরুন্ডি, ইয়েমেন, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, উগান্ডা, মালাবি, কঙ্গো, কেনিয়া, হাইতি, ইথিপিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, নাইজার, শাদ) রূঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করতে পারি, পরবর্তী ২০ বছরে রূঢ় ও নমনীয় শক্তিসম্পন্ন দেশের অবস্থান উন্নত হবে। আন্তঃসরকার, জাতিসঙ্ঘ চুক্তি, কূটনৈতিক কানেকশন ও জোটবদ্ধতার মতো বিষয়গুলো কূটনৈতিক শক্তি নির্ধারণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো দেশগুলোর হাতে বস্তুগত ও কূটনৈতিক উভয় ধরনের শক্তি বেশ ব্যাপক মাত্রায় পুঞ্জীভূত থাকলেও তারা তাদের রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় অংশীদারদের বাদ দিয়ে এগিয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম।
প্রযুক্তির অবস্থান আরো ব্যাপক হবে। বর্তমানের গুগল ও ফেসবুক থাকবে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট ‘মোগল’দের শীর্ষে। বেশির ভাগ সরকারের চেয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেই থাকবে অনেক বেশি তথ্য। তারাই মানবীয় উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে, বেসরকারি কোম্পানির মতো অ-রাষ্ট্র চালিকাশক্তিগুলোকে আরো ব্যাপক ভূমিকা পালনের দিকে নিয়ে যাবে।
অ-রাষ্ট্র চালিকাশক্তিগুলোর মতা বাড়ায় তা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীায়ও ফেলবে। তাদের কারণেই সরকারগুলো জনগণের কাছে আরো বেশি জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে। তবে রাষ্ট্রবহির্ভূত চালিকাশক্তিগুলোই যে সরকারের চেয়ে বেশি কার্যকর, সেটাও তাদের প্রমাণ করতে হবে। জনগণ এমনি এমনি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেবে না। সদিচ্ছায়ই যথেষ্ট বিবেচিত হবে না। ধারণা করা যেতে পারে, হ্যাকারদের মতো মন্দ উপাদানগুলোর ওপর আরো বেশি রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ নেমে আসতে পারে। আবার ইতিবাচক উদ্দেশ্যসংবলিত ব্যক্তিদের জন্য আরো বেশি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
No comments