আরব বসন্ত ও ইবনে খালদুনের ভবিষ্যদ্বাণী by মুহাম্মদ খায়রুল বাশার

ছয় শতাব্দী আগে আরব চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ইবনে খালদুন বলেছিলেন, ইতিহাস চক্রাকারে ঘোরে। একটি বংশধারার প্রতিনিধিত্ব তিন প্রজন্ম স্থায়ী হয়।
এরপর তাদের সমৃদ্ধশালী যুগের অবসান ঘটে। একটি বংশধারার অনুসারীদের মধ্যে অভিন্ন উদ্দেশ্যের চেতনা যত দিন উজ্জীবিত থাকে এবং যত দিন তারা ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত থাকেন এবং তাদের মধ্যে সংহতি থাকে তত দিন তাদের অবস্থা ভালো থাকে। কিন্তু অপর একটি গ্রুপের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর নতুন বংশধারার উন্মেষ ঘটার আলামত শুরু হতে দেখা যায়। আরব বসন্তের সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে ইবনে খালদুনের তত্ত্বটি হয়তো সহায়ক হতে পারে। তিউনিসিয়া, মিসর, ইয়েমেন ও লিবিয়ার আগের সরকারগুলো ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেসব দেশের বংশগত শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটছে। ওই সব রাষ্ট্রের বংশগত শাসনের সূচনা হয়েছিল প্রায় তিন প্রজন্ম আগে। প্রকৃতপক্ষে আরব লিগের সদস্যভুক্ত ২২টি দেশের মধ্যে অধিকাংশ দেশেরই শাসক গোষ্ঠী প্রায় তিন দশক আগে এসব দেশের শাসনক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। ওই সময় বেশির ভাগ আরব দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এবং তখন তেল থেকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়াস শুরু হয়েছিল। বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত আরব রাষ্ট্র মিসর একটি আদর্শ দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু সেনাকর্মকর্তারা ১৯৫২ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর সেখানে একটি স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীকালে ওই সৈন্যদের বংশীয় শাসন ২০১১ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

সাম্প্রতিক আরব বিপ্লবে মিসরের হোসনি মোবারকের মতো শাসকেরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হলেও আরব বসন্তের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑ বংশগত শাসনের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এ ধরনের কয়েকটি সরকারের পতন ঘটেছে। বাহরাইনের আল খলিফা পরিবার এবং সিরিয়ার আলওয়াতি প্রভাবিত সরকারও এখন মারাত্মক চাপ মোকাবেলা করছে। ইবনে খালদুনের ইতিহাসের চক্রাকারে আবর্তিত শাসনের তত্ত্ব সত্য প্রমাণ করে পরিবর্তনের ঢেউয়ের লক্ষণ এখন সুস্পষ্ট।

২০১৩ সালে একটি রাষ্ট্র বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেÑ সেই রাষ্ট্রটি হচ্ছে জর্ডান। চলতি জানুয়ারি মাসে ৫১ বছর বয়সে পদার্পণ করা বাদশাহ আবদুল্লাহ-২ সত্যিকারভাবে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ক্রমবর্ধমান দাবির মোকাবেলা করে আসছেন। কিন্তু বাদশাহ আবদুল্লাহর ক্ষমতার ভিত তার পিতা বাদশাহ হোসেনের মতো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় নয়। তার পিতা সিংহাসনে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় ঝঞ্ঝাবিুব্ধ প্রায় পাঁচটি দশক অতিক্রম করতে সক্ষম হন। তার উত্তরসূরি সীমিত সম্পদের দেশটি থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে প্রধান প্রধান নির্বাচনী এলাকাকে শান্ত করতে পারেনি। অপর একটি ছোট এবং তুলনামূলক স্থিতিশীল রাজতান্ত্রিক দেশ হচ্ছে কুয়েত। দেশটিতে একটি কূটকৌশল বা চাতুরীপূর্ণ পার্লামেন্টের ঐতিহ্য রয়েছে। অবশ্য পার্লামেন্টের যথার্থ কর্তৃত্ব নেই। দেশটিও একই ধরনের দীর্ঘ সঙ্কটে আটকে আছে। কোনো ক্ষমতাসীন পরিবার মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তিনি একটি সংবিধান অনুমোদন করেন এবং মধ্যপন্থী একটি বিরোধী ইসলামি দলকে কাজ করার অনুমতি দেন। তার এই উদ্যোগের ফলে ২০১১ সালের ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ বিক্ষোভের অবসান ঘটে। মরক্কোর বাদশাহর মতো কোনো উদ্যোগ না নিলে ২০১৩ সালে কুয়েত ও জর্ডানকে অত্যন্ত ঝঞ্ঝাবিুব্ধ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে।

আলজেরিয়া ও সৌদি আরবের মতো অত্যন্ত কর্তৃত্ববাদী সরকারও দীর্ঘ দিন ধরে গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। তাদের ভীরু পদক্ষেপের কারণে সঙ্কীর্ণ বংশীয় এলিটদের মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রয়েছে। সৌদি প্রিন্স অথবা পারিবারিক জেনারেলদের হাতে আলজেরিয়ার তেলসম্পদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। দেশ দু’টিতে সামাজিক ব্যয় হ্রাস ও পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু দেশ দু’টির আসন্ন উত্তরাধিকারীরা নানা সঙ্কট ও সমস্যায় ভুগছেন। আলজেরিয়ার প্রসিডেন্ট আবদুল আজিজ বুতে ফিফা অসুস্থ। তিনি হয়তো তার তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন না। তার এই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের মেয়াদ ২০১৪ সালে শেষ হবে। সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহর বয়স এখন প্রায় ৯০ বছর। যুবরাজ সালমানের বয়সও ৭০-এর বেশি, তার স্বাস্থ্যের অবস্থাও ভালো নয়।

২০১৩ সালে সম্ভবত তেলের উচ্চমূল্য অব্যাহত থাকবে। কোনো দেশেই হয়তো মারাত্মক রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে না। তবে ক্ষমতার শূন্যতার ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন এবং সামাজিক সমস্যা বিশেষভাবে তীব্র বেকারত্বের কারণে মারাত্মক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেসব দেশে ইতোমধ্যেই বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে সেসব দেশের অবস্থা কী হবে? ইবনে খালদুনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, আসন্ন বংশধারা হবে একটি ট্রাইবাল গ্রুপ। তারা মরুভূমি থেকে আসবে এবং অধিকতর ইসলামপন্থী হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। আরব বসন্তের মাধ্যমে যেসব শক্তির আবির্ভাব ঘটবে, তারা হয়তো মনে হবে এই বর্ণনা থেকে দূরে থাকতে পারে। তিউনিসিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত একটি সুদৃঢ় নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। তথাপি ইবনে খালদুন যেসব আলামতের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সে ধরনের ঘটনার উন্মেষ ঘটবে।

ইসলাম ও উদার ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে আরব বিশ্বে দু’টি প্রধান রাজনৈতিক ধারা। মিসরের ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড ও তিউনিসিয়ার এননাহদা পার্টি দেশ দু’টিতে তাদের রাজনৈতিক প্রাধান্য বজায় রেখেছে। ইবনে খালদুনের দলীয় সংহতি সংক্রান্ত বক্তব্য এ দু’টি দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাদের উচ্চ শৃঙ্খলাবোধ এবং ঐক্য বিপ্লবপরবর্তী নির্বাচনে দেখা গেছে। নির্বাচনে উভয় দলকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের চরম হিংস্রতা ও বৈরিতার মোকাবেলা করতে হয়েছে। ইসলামপন্থীদেরকে একনায়কতান্ত্রিক শাসক বলা যাবে না। লিবিয়ার ২০১২ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তারা দেশটি শাসন করবে না। অবশ্য মিসর ও তিউনিসিয়ায় প্রধান ইসলামপন্থী দলের সাথে কট্টরপন্থী সালাফিপন্থীদের মতপার্থক্য রয়েছে। উভয় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এখন জোট গঠন করছে এবং শহরের সংসদীয় এলাকার বাইরে গিয়েও তারা কাজ করছে। সুতরাং ২০১৩ সালেও তাদের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত থাকবে। তবে বেশির ভাগ এলাকার মূলধারার ইসলামপন্থীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুড। ইবনে খালদুন সুন্নি ও শিয়া ইসলামের মধ্যে উত্তেজনা পুনরুজ্জীবিত হোক সেটা চাইতেন না। বাহরাইন ও সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ গণ-অভ্যুত্থানের কারণে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ক্ষমতাসীন সংখ্যালঘুরা বর্বর শক্তি ব্যবহার করছে। সিরিয়ার বাশার আল আসাদ বিশেষভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষকে হত্যা করেছেন। অনেক মাস তথা দীর্ঘ সময় ধরে সিরিয়ার বিষাক্ত রাজনীতির বিষবাষ্প পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকেও স্পর্শ করেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সার্বিক ফলাফল শেষ পর্যন্ত বংশীয় ও উত্তরাধিকারমূলক রাজনীতির বিলুপ্তি ঘটাবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

�� b � � � �� য় কাঠামো সৃষ্টির কারণে পূর্ব এশিয়ায় এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। কোরীয় উপদ্বীপ ও তাইওয়ান প্রণালীকে ঘিরে উত্তেজনা, দীর্ঘ দিনের ােভ না কমে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আগামীতে চীনের উত্থান নিয়ে ভয়, জাতীয়তাবাদের বিস্তৃতি এবং এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন এই ােভ আরো বাড়িয়ে দেবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও আন্তঃনির্ভরশীলতা পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর এই ােভ  যে কমাতে পারবে না তা  বোঝা যায় জাপান-চীন, জাপান-কোরিয়া, চীন-কোরিয়া, ভারত-চীন এবং ভিয়েতনাম-চীনের মধ্যে জটিল সম্পর্ক থেকে।



আঞ্চলিক প্রবণতা পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে দু’টি বলয়ে ঠেলে দিতে পারে। একটি বলয়ের কেন্দ্রে থাকবে চীন। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক কারণে চীনের দিকে ঝোঁক প্রবণতা তৈরি হবে। নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার করবে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯৫ সাল থেকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহৎ শক্তিগুলো, যেমন : জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতÑ যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ক্রমাগত সরে এসে চীনকে তাদের বৃহৎ ব্যবসায়ী অংশীদার হিসেবে বেছে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক রেখেই কিন্তু এই নির্ভরতা তৈরি হচ্ছে। সম্পর্কের এই ধরন ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিরাজ করবে। তবে, চীনে উদার রাজনীতির বিস্তার, সামরিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হলেÑ প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগ কমার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিরাপত্তা সম্পর্ক রায় নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হওয়ায়  চীনের এখন এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় এফডিআই (সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ) যোগানদাতা। কিন্তু কোনো কারণে এই প্রবৃদ্ধি তিগ্রস্ত বা দীর্ঘ মন্দার শিকার হলে, তা গুরুতর আঞ্চলিক টানাপড়েন ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া ঐক্যবদ্ধ কোরিয়া এবং তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে আরেকটি প্রভাববলয় সৃষ্টির নতুন প্রবণতা সৃষ্টির আরেকটি চলক হতে পারে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি এখন এশিয়ার দিকে সরে এসেছে। প্রাচীনকালে ভূমধ্যসাগর, বিংশ শতাব্দীতে আটলান্টিকের মতো একবিংশ শতাব্দীতে বাণিজ্য পথ হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পানি-পথগুলোতে মার্কিন নৌবাহিনীর বর্তমান আধিপত্য, চীনের ব্লু-ওয়াটার নেভির শক্তি বৃদ্ধির ফলে তা খর্ব হবে। তখন নৌপথের নিরাপত্তা রা ও স্বাধীনভাবে চলাচল নিরাপদ রাখার জন্য কোন শক্তি অধিকতর কার্যকরÑ সেই প্রশ্নও সামনে চলে আসবে।

সামষ্টিক পর্যায়ে আগামী দশকগুলোতে এশিয়ার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে চার ধরনের ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটতে পারে : ১। আইনভিত্তিক সহযোগিতা ও নীরব প্রতিযোগিতায় বর্তমান আন্তর্জাতিক মিশ্র ব্যবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের জোটব্যবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। এটা হবে চীনের ক্রমাগত সামরিকীকরণ, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক মতা সামাল দেয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য নিরাপত্তা ইস্যুগুলো প্রশমনের জন্য। এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত শক্তি অর্জন করবে এবং অর্থনৈতিক সমন্বয় কেবল এশিয়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত হবে। ২। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাওয়া এবং তুলনামূলক শক্তিধর দেশগুলোর গতিশীল অবস্থানের কারণে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে বর্তমান শক্তির ভারসাম্যে টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্নতার দিকে এগিয়ে গেলে বা অর্থনৈতিক নিম্নগতি সৃষ্টি হলে পূর্ব-এশিয়ার সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে, তখনো যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে যাবে। এ ধরনের আঞ্চলিক ব্যবস্থা হতে পারে ‘শত্র“তার জন্য উর্বর’ ত্রে। এশিয়ার কিছু দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে পারে। এটা হবে মার্কিন নিরাপত্তা বলয়ের পরিপূরক। ৩। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে পূর্ব এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক গণতান্ত্রিক সঙ্ঘ সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের ব্যবস্থা সৃষ্টির পূর্বশর্ত হলো চীনে উদার রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন। এটা হবে এমন এক বহুমাত্রিক ব্যবস্থা যেখানে ছোট ছোট দেশগুলোর স্বশাসন রতি হবে। এমন ব্যবস্থার উদ্ভব হলেও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে অব্যাহতভাবে ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তাকারী’ হিসেবে ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। ৪। বেইজিংকে ঘিরে চীনকেন্দ্রিক এক নতুন ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটতে পারে। এর ফলে ভিন্ন ধরনের ‘পূর্ব এশীয় ব্যবস্থার’ সৃষ্টি হবে। এটা হবে অঞ্চলজুড়ে চীনের প্রভাব বলয় বিস্তৃত হওয়ার কারণে। চীনকে কেন্দ্র করে কোনো এশীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার অর্থ হলো, এশিয়াকে কেন্দ্র করেই এই মহাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন। এর মধ্যে আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিকতাবাদের ঠাঁই হবে না।

আগামী দশকগুলোতে উত্থানের জন্য ভারতের অনেক উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে। জাপানের অবস্থা হতে পারে পতনোন্মুখ। ফলে চীনকেন্দ্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। তখন চীনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান এশীয় মিত্রদের সামর্থ্য বা সদিচ্ছা কেমন হয়, তা-ও দেখার বিষয়। পাল্টা ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অংশগ্রহণ জোরদার করতে হতে পারে, যা চীনের সাথে সরাসরি সঙ্ঘাত সৃষ্টি করবে।

No comments

Powered by Blogger.