হাতিরঝিলের সেকাল ও একাল by মুসা আখন্দ
হাতিরপুলের তলা দিয়ে ট্রেন চলে যেত সেই
কোথায় কত দূর। বাওয়ালির নৌকা ভিড় জমায় বেগুনবাড়িতে। মগবাজার মোড়ে
পর্ণকুটিরের সারি পেরোলে জলা, জলার কিনার ঘেঁষে গ্রামের রাস্তা,
সেখানে
চায়ের দোকান, চা খেয়ে গ্রামে চলে যাওয়া কিংবা শহরে ফিরে আসা। পিলখানা
থেকে হাতিগুলোকে এলিফ্যান্ট রোড ধরে মগবাজারের চারণভূমিতে নেয়া। নয়াটোলার
কোল ঘেঁষে কাপাসিয়া নদী। সেই নদীপাড়ে নাইয়াদের বসবাস। বিভিন্ন
শ্রেণিপেশার বসতি। পাশের গ্রাম মধুবাগের জঙ্গলে মধুমরি চাক তৈরি। ওপারে
তেজগাঁও, বেগুনবাড়ি, লালা সরাই গ্রাম, পূর্বে উলুন, রামপুরা, বাড্ডা
গ্রামের মাঝে বিস্তীর্ণ জলাভূমি আর একে বেঁকে প্রবহমান কাপাসিয়া নদী কালের
বিবর্তনে বেগুনবাড়ি খাল। গুদারাঘাটের মাঝিমাল্লার হাঁকডাক। গরুর গাড়ির
সারি তেজগাঁওয়ের পথে। ইস্টিশনের বাইরে গাড়োয়ানের ডাক, ‘যাইবো গাড়ি
বেগুনবাড়ি, টিকিট কর তাড়াতাড়ি’। বর্ষায় টইটম্বুর ঝিল। দূরে একেকটি
গ্রাম যেন ঝিলের পানিতে ঢেউয়ের তালে নাচছে। মনের ক্যানভাসে আঁকা এ
দৃশ্যগুলোর সত্যিই দেখা মেলে ১৯৪৬-এর আগের ঢাকায়। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে
অবস্থিত হাতিরঝিলের নামকরণ যে, পিলখানার হাতিশালার হাতি এই ঝিলে নামার
কারণেই হয়েছে তা নির্দ্বিধায় বলা চলে।
কালান্তরে এই হাতিরঝিলের আশপাশেই গড়ে উঠছে নতুন ঢাকার নতুন নতুন অট্টালিকা, আর তারই মাঝে আজকের অপরূপ সৌন্দর্যের এই বিনোদন কেন্দ্র। পান্থপথ হয়ে রামপুরা পর্যন্ত দীর্ঘ ও প্রশস্ত নয়নাভিরাম লেক, দু’পাশের সড়ক, দৃষ্টিনন্দন সেতু, বাহারি গাছের সারি, নজরকাড়া জলফোয়ারা, সিঁড়ি, মুক্তমঞ্চ, নৌবিহারের সুবিধা, নানা সৌন্দর্যবর্ধক অনুষঙ্গে ভরপুর ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে স্বপ্নের হাতিরঝিল বাস্তবিকই দেখতে পাবেন ঢাকাবাসী। ৩০০ একরের নয়নাভিরাম লেক আশপাশের দূষিত এলাকাকে উপহার দেবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
দেশ ভাগের পর প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা রমনা ছাড়িয়ে উত্তরে বিস্তৃতি হতে লাগল। ধীরে ধীরে লোকসংখ্যার চাপে এর ব্যাপ্তি পুরান ঢাকার চার দিকেই বাড়তে থাকল। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় এর লোকসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পেল, সে হারে এর উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও নগর উন্নয়ন কর্তারা দায় চাপাতে চান এই বলে যে, ঢাকার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির চাপ খেয়ে ফেলছে সব নগর পরিকল্পনাকেই। ফলে না চাইলেও অপরিকল্পিতভাবে বাড়তে থাকল এর সীমা পরিসীমা। খুব কম রাস্তাই আছে ২০ ফুটের অধিক প্রশস্ত, বেশির ভাগই ৮-১০ ফুটের গলি। আর এর মধ্যে সারি সারি দালানকোঠা ও বহুতল ইমারত ঠায় দাঁড়িয়ে। নতুন ঢাকার জন্য ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান সময়মতো না হওয়ায় এবং মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে না পারায় পাশের বেগুনবাড়ি খাল, পরীবাগ খাল ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ও ভূমি খেকোদের কবলে পড়ে স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে ফেলে।
এই সেদিন সত্তর-আশির দশকেও দেখা মিলত বর্ষার শুরুতে টঙ্গী ডাইভারশন রোডে কালীগঞ্জ, পুবাইল, ইছাপুরা থেকে আসা অসংখ্য তরিতরকারির নৌকা, আম-কাঁঠালের ম ম গন্ধে গঞ্জের যত ব্যস্ততা। তারও আগে ভরা বর্ষার নৌকাগুলো কারওয়ান পার হয়ে কাঁঠাল বাগানে ভিড়ত। এসব এখন শুধুই স্মৃতি। শুরু হয় দখলের প্রতিযোগিতা। হাতিরঝিল এলাকার চার দিক ঘিরে বাঁশের মাচার ওপর হাজার হাজার বস্তিঘর আর এগুলোর লাখ লাখ বাসিন্দার প্রতিনিয়ত ড্রপিংস পড়ে নষ্ট করে ফেলা পানি প্রচণ্ড রকম দুর্গন্ধময়। পাশের শিল্পাঞ্চলের বিষাক্ত ময়লা পানি, উপচে পড়া স্যুয়ারেজ, আশপাশের বাড়ির স্যুয়ার লাইনÑ সবারই গন্তব্য যেন হাতিরঝিল। এ ঝিল ভেদ করা টঙ্গী ডাইভারশন রোড, উত্তর পাশ ঘেঁষা পান্থপথ ব্যবহারকারীরা এর কালো কুঁচ কুঁচ পানি আর পুঁতিগন্ধময় ভারী বাতাসে যখন অতিষ্ঠ, তখন সরকারের নজরে আসে এর উন্নয়নের।
আশির দশকে হাতিরঝিলের পশ্চিমাংশের আজকের সোনারগাঁও রোডসংলগ্ন ত্রিভুজ আকৃতির পার্কের উন্নয়ন। পার্কের নিচ দিয়ে স্পর্ম স্যুয়ার লাইন স্থাপন। তারপর কারওয়ান বাজারের উল্টা দিকে সোনারগাঁও হোটেলের পূর্ব পাশের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য আলাদা নির্গমন খাল তৈরি, অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণ, পান্থপথের নির্মাণকাজ সম্প্রসারণকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বিশ্ববাণিজ্যি কেন্দ্র স্থাপনেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু তা না হয়ে খুব দ্রুতই গড়ে ওঠে বিজিএমইএ ভবন, যা পয়ঃনিষ্কাশন খালের মধ্যে এমনভাবে গড়ে উঠছে যে আজ ভেঙে ফেলার তাগিদ এসেছে সব মহল থেকে। দুটো কারণে এটা ভেঙে ফেলতে হবে। প্রথমত, বর্তমান হাতিরঝিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে দেখার দেয়াল সৃষ্টি করে আড়ালে ঢেকে ফেলায় আর দ্বিতীয়ত, ভবনটির এক পাশে নিষ্কাশন খাল ও অন্য পাশে লেক সরু হওয়ায় স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায়।
বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকার নানারকম পরীা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিলেও চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিলেন যুগান্তকারী পদপে, হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালের সমনি¦ত উন্নয়ন প্রকল্প। রাজউক, বুয়েট, এলজিইডি, ওয়াসা ও সেনাবাহিনী প্রভৃতি সংস্থার সমন্বিত প্রয়াসে দৃষ্টিনন্দন এই প্রকল্পটি পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার সমাপ্ত করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন।
ডিজাইন অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্ন হতে আরো কিছু দিন লাগবে। এরই মধ্যে আধুনিক শহরের মাঝে টলমলে পানির ছল ছল নৌকা চলাচলসহ শত বছরের পুরনো চিত্রকল্পকে নস্টালজিয়ায় আনা, আধুনিক স্থাপত্য কলার ব্যবহারে বাহারি গাছগাছালির মধ্যে রক সঙ্গীতের ড্রাম ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরমূর্ছনার অপূর্ব মিলনের মায়াজালে জড়িয়ে যাবে ঢাকাবাসী এক নতুন হাতিরঝিলে। সেতার, সরোদ, একতারা, দোতারা, বাঁশি, সারঙ্গীর মূর্ছনা আর তবলার বোল মাতিয়ে জারি, সারি, ভাটিয়ালির টানে সুরের ইন্দ্রজাল হারিয়ে যাবে সবুজের সমারোহে। এ শুধু বিনোদন পার্কই হবে না। এর মধ্যখান দিয়ে চার দিকে থাকবে পথচারীর হাঁটা ও যান চলাচলের অবারিত সুযোগ। একই সাথে প্রকল্পটি ঢাকা শহরের দুঃসহ যানজট নিরসন করবে। প্রকল্পে থাকবে ঝিলের দুই পাড়ের হিজল, তমাল, কৃঞ্চচূড়া, জারুল, শিমুল, দেবদারু আর পলাশের ছয়াবীথি। বড় গাছের নিচে থাকবে দেশী ফুলের গাছ আর লতাগুল্ম। ঝিলের পানিতে ফুটবে পদ্ম আর শাপলা।
এর অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি বৃহত্তর সামাজিক পরিবেশে থাকবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব। ওপারের গুলশান নিকেতনকে যেভাবে বন্ধনে আনবে এপারের মগবাজার, নয়াটোলা, মধুবাগ, উলুন, রামপুরা, বাড্ডাবাসীকে, তেমনি বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও কারওয়ানের বাসিন্দারা তাকিয়ে থাকবেন এপারের ইস্কাটন গাউস নগরের পানে। সোনারগাঁ হোটেলের বিদেশীরা যেমন মুগ্ধ হবেন, তেমনি কাজী নজরুল ইসলাম রোড দিয়ে হররোজ যাতায়াতকারীর চোখ একবার হাতিরঝিলের নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবলোকন না করে পারবেন না। আর মনের ভেতর কল্পনায় ভাসতে থাকবে এক দিকে পিলখানার হাতি নামছে; অন্য দিকে বাস্তবের অসংখ্য মানুষের চোখের মণিকোঠায় দালানগুলো প্রতিবি¤ে¦র সাথে দুলছে পরিচ্ছন্ন হাতিরঝিলের জলে।
লেখক : রাজউকের উপপরিচালক (এমআইএস)
musaakhand2000@Yahoo.com
কালান্তরে এই হাতিরঝিলের আশপাশেই গড়ে উঠছে নতুন ঢাকার নতুন নতুন অট্টালিকা, আর তারই মাঝে আজকের অপরূপ সৌন্দর্যের এই বিনোদন কেন্দ্র। পান্থপথ হয়ে রামপুরা পর্যন্ত দীর্ঘ ও প্রশস্ত নয়নাভিরাম লেক, দু’পাশের সড়ক, দৃষ্টিনন্দন সেতু, বাহারি গাছের সারি, নজরকাড়া জলফোয়ারা, সিঁড়ি, মুক্তমঞ্চ, নৌবিহারের সুবিধা, নানা সৌন্দর্যবর্ধক অনুষঙ্গে ভরপুর ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে স্বপ্নের হাতিরঝিল বাস্তবিকই দেখতে পাবেন ঢাকাবাসী। ৩০০ একরের নয়নাভিরাম লেক আশপাশের দূষিত এলাকাকে উপহার দেবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
দেশ ভাগের পর প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা রমনা ছাড়িয়ে উত্তরে বিস্তৃতি হতে লাগল। ধীরে ধীরে লোকসংখ্যার চাপে এর ব্যাপ্তি পুরান ঢাকার চার দিকেই বাড়তে থাকল। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় এর লোকসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পেল, সে হারে এর উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও নগর উন্নয়ন কর্তারা দায় চাপাতে চান এই বলে যে, ঢাকার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির চাপ খেয়ে ফেলছে সব নগর পরিকল্পনাকেই। ফলে না চাইলেও অপরিকল্পিতভাবে বাড়তে থাকল এর সীমা পরিসীমা। খুব কম রাস্তাই আছে ২০ ফুটের অধিক প্রশস্ত, বেশির ভাগই ৮-১০ ফুটের গলি। আর এর মধ্যে সারি সারি দালানকোঠা ও বহুতল ইমারত ঠায় দাঁড়িয়ে। নতুন ঢাকার জন্য ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান সময়মতো না হওয়ায় এবং মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে না পারায় পাশের বেগুনবাড়ি খাল, পরীবাগ খাল ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ও ভূমি খেকোদের কবলে পড়ে স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে ফেলে।
এই সেদিন সত্তর-আশির দশকেও দেখা মিলত বর্ষার শুরুতে টঙ্গী ডাইভারশন রোডে কালীগঞ্জ, পুবাইল, ইছাপুরা থেকে আসা অসংখ্য তরিতরকারির নৌকা, আম-কাঁঠালের ম ম গন্ধে গঞ্জের যত ব্যস্ততা। তারও আগে ভরা বর্ষার নৌকাগুলো কারওয়ান পার হয়ে কাঁঠাল বাগানে ভিড়ত। এসব এখন শুধুই স্মৃতি। শুরু হয় দখলের প্রতিযোগিতা। হাতিরঝিল এলাকার চার দিক ঘিরে বাঁশের মাচার ওপর হাজার হাজার বস্তিঘর আর এগুলোর লাখ লাখ বাসিন্দার প্রতিনিয়ত ড্রপিংস পড়ে নষ্ট করে ফেলা পানি প্রচণ্ড রকম দুর্গন্ধময়। পাশের শিল্পাঞ্চলের বিষাক্ত ময়লা পানি, উপচে পড়া স্যুয়ারেজ, আশপাশের বাড়ির স্যুয়ার লাইনÑ সবারই গন্তব্য যেন হাতিরঝিল। এ ঝিল ভেদ করা টঙ্গী ডাইভারশন রোড, উত্তর পাশ ঘেঁষা পান্থপথ ব্যবহারকারীরা এর কালো কুঁচ কুঁচ পানি আর পুঁতিগন্ধময় ভারী বাতাসে যখন অতিষ্ঠ, তখন সরকারের নজরে আসে এর উন্নয়নের।
আশির দশকে হাতিরঝিলের পশ্চিমাংশের আজকের সোনারগাঁও রোডসংলগ্ন ত্রিভুজ আকৃতির পার্কের উন্নয়ন। পার্কের নিচ দিয়ে স্পর্ম স্যুয়ার লাইন স্থাপন। তারপর কারওয়ান বাজারের উল্টা দিকে সোনারগাঁও হোটেলের পূর্ব পাশের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য আলাদা নির্গমন খাল তৈরি, অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণ, পান্থপথের নির্মাণকাজ সম্প্রসারণকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বিশ্ববাণিজ্যি কেন্দ্র স্থাপনেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু তা না হয়ে খুব দ্রুতই গড়ে ওঠে বিজিএমইএ ভবন, যা পয়ঃনিষ্কাশন খালের মধ্যে এমনভাবে গড়ে উঠছে যে আজ ভেঙে ফেলার তাগিদ এসেছে সব মহল থেকে। দুটো কারণে এটা ভেঙে ফেলতে হবে। প্রথমত, বর্তমান হাতিরঝিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে দেখার দেয়াল সৃষ্টি করে আড়ালে ঢেকে ফেলায় আর দ্বিতীয়ত, ভবনটির এক পাশে নিষ্কাশন খাল ও অন্য পাশে লেক সরু হওয়ায় স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায়।
বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকার নানারকম পরীা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিলেও চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিলেন যুগান্তকারী পদপে, হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালের সমনি¦ত উন্নয়ন প্রকল্প। রাজউক, বুয়েট, এলজিইডি, ওয়াসা ও সেনাবাহিনী প্রভৃতি সংস্থার সমন্বিত প্রয়াসে দৃষ্টিনন্দন এই প্রকল্পটি পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার সমাপ্ত করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন।
ডিজাইন অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্ন হতে আরো কিছু দিন লাগবে। এরই মধ্যে আধুনিক শহরের মাঝে টলমলে পানির ছল ছল নৌকা চলাচলসহ শত বছরের পুরনো চিত্রকল্পকে নস্টালজিয়ায় আনা, আধুনিক স্থাপত্য কলার ব্যবহারে বাহারি গাছগাছালির মধ্যে রক সঙ্গীতের ড্রাম ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরমূর্ছনার অপূর্ব মিলনের মায়াজালে জড়িয়ে যাবে ঢাকাবাসী এক নতুন হাতিরঝিলে। সেতার, সরোদ, একতারা, দোতারা, বাঁশি, সারঙ্গীর মূর্ছনা আর তবলার বোল মাতিয়ে জারি, সারি, ভাটিয়ালির টানে সুরের ইন্দ্রজাল হারিয়ে যাবে সবুজের সমারোহে। এ শুধু বিনোদন পার্কই হবে না। এর মধ্যখান দিয়ে চার দিকে থাকবে পথচারীর হাঁটা ও যান চলাচলের অবারিত সুযোগ। একই সাথে প্রকল্পটি ঢাকা শহরের দুঃসহ যানজট নিরসন করবে। প্রকল্পে থাকবে ঝিলের দুই পাড়ের হিজল, তমাল, কৃঞ্চচূড়া, জারুল, শিমুল, দেবদারু আর পলাশের ছয়াবীথি। বড় গাছের নিচে থাকবে দেশী ফুলের গাছ আর লতাগুল্ম। ঝিলের পানিতে ফুটবে পদ্ম আর শাপলা।
এর অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি বৃহত্তর সামাজিক পরিবেশে থাকবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব। ওপারের গুলশান নিকেতনকে যেভাবে বন্ধনে আনবে এপারের মগবাজার, নয়াটোলা, মধুবাগ, উলুন, রামপুরা, বাড্ডাবাসীকে, তেমনি বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও কারওয়ানের বাসিন্দারা তাকিয়ে থাকবেন এপারের ইস্কাটন গাউস নগরের পানে। সোনারগাঁ হোটেলের বিদেশীরা যেমন মুগ্ধ হবেন, তেমনি কাজী নজরুল ইসলাম রোড দিয়ে হররোজ যাতায়াতকারীর চোখ একবার হাতিরঝিলের নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবলোকন না করে পারবেন না। আর মনের ভেতর কল্পনায় ভাসতে থাকবে এক দিকে পিলখানার হাতি নামছে; অন্য দিকে বাস্তবের অসংখ্য মানুষের চোখের মণিকোঠায় দালানগুলো প্রতিবি¤ে¦র সাথে দুলছে পরিচ্ছন্ন হাতিরঝিলের জলে।
লেখক : রাজউকের উপপরিচালক (এমআইএস)
musaakhand2000@Yahoo.com
No comments