অচিরেই উচ্চ আদালতে বাংলায় রায়
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার অচিরেই উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষায় রায় দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। মঙ্গলবার 'চিকিৎসক ভাষাসৈনিকদের সংবর্ধনা' প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
ওই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা নিতে এসে নিজের আৰেপ তুলে ধরে চিকিৎসক ভাষাসৈনিক ডা. আহমদ রফিক বলেন, আজ যখনই ভাষাসৈনিকদের প্রসঙ্গ ওঠে তখন কেবল গুটিকয়েকজনের নামই ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়। কিন্তু এমন অনেক ভাষাসৈনিক ছিলেন যাঁদের ভাষা আন্দোলনে ছিল অনবদ্য ভূমিকা। কিন্তু ইতিহাসে তাঁরা আজ অবহেলিত।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক সমিতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে চিকিৎসক ভাষাসৈনিকদের ওই সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আহমদ রফিকসহ ছয় জন চিকিৎসক ভাষাসৈনিককে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনাপ্রাপ্ত অন্য চিকিৎসক ভাষাসৈনিকরা হলেন ডা. শরফুদ্দীন আহমদ, ডা. সাঈদ হায়দার, ডা. আব্দুল কাদির খান, ডা. কে এম হুমায়ুন হাই এবং ডা. আলী আসগর। অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. প্রাণগোপাল দত্ত, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. শারফুদ্দিন আহমদ, শিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরম্নল হাসান খান, স্বাচিপের মহাসচিব ডা. ইকবাল আর্সলান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, অচিরেই উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষায় রায় দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নিম্ন আদালতে ইতোমধ্যে বাংলায় রায় হচ্ছে। তা ছাড়া চিকিৎসা শিাকে যেন বাংলা মাধ্যমে করা যায় সে বিষয়ে পদপে নিতে হবে। জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরম্ন করেছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দক বলেন, '৫২ সালে আমাদের অসত্মিত্বের ওপর আক্রমণ হয়েছিল। ভাষার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা মানে বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অসত্মিত্ব বিলীন করে দেয়া। এটা হতে দেননি ভাষাসৈনিকরা। তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাকে সামনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ েেত্র কোন হীনম্মন্যতায় ভুগলে চলবে না।
প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস চর্চার বিষয়ে একটি গবেষণা এবং উচ্চশিা ও বিজ্ঞান শিায় বাংলার প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর গুরম্নত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে অবহেলিত ওই সব ভাষাসৈনিককে স্মরণ করতে গিয়ে আহমদ রফিক বলেন, শাহজাদপুরের আলী আজমল, নওগাঁর মঞ্জুর হোসেন, শহীদ আলীম চৌধুরী, আব্দুর কাদির খান, কিশোরগঞ্জের ফজলুল করিম, লক্ষ্মীবাজারের ইয়াহিয়া, ব্রাহ্মবাড়িয়ার ফরিদুল হুদাসহ অনেকের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ছিল। তাঁদের অনবদ্য ভূমিকার কথা কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু এঁরা আজ ইতিহাসে অবহেলিত।
সংবর্ধিত আরেক চিকিৎসক ভাষাসৈনিক ডা. শরফুদ্দিন আহমদ '৫২-এর সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে আমাদের ওপর গুলি চালানো হলো, আমাদের হোস্টেল ব্যারাক ভাংচুর করা হলো। সেদিন অনেকেই মারা যায়। যার প্রকৃত হিসেব আমাদের কাছেও নেই। আমার মনে আছে, চোখের সামনেই ওরা (পুলিশ) প্রতি ট্রাকে দুই/তিনটি করে লাশ নিয়ে যায়।
No comments