গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার উদ্যোগ মানুষের ক্রয়ৰমতা বেড়েছে, বেড়েছে নগদ অর্থের প্রবাহ- দেশে ভোজ্যতেলের ব্যবহার ৩৭ শতাংশ বেড়েছে, ৮০ শতাংশই গ্রামে by কাওসার রহমান
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগে গ্রামের মানুষের ক্রয়মতাও বেড়ে গেছে। আর গ্রামের মানুষের ক্রয়মতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ভোজ্যতেলের ব্যবহারও আশাতীত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোজ্যতেলের ব্যবহার বৃদ্ধির পরিমাণ থেকে অর্থনীতিবিদরা গ্রামীণ মানুষের ক্রয়মতা বৃদ্ধির পরিমাপ করছেন। গত এক বছরে দেশে ভোজ্যতেলের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্যবহারই বেড়েছে গ্রামে। সাম্প্রতিক সময়ে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ভাল দাম পাওয়ায় গ্রামের মানুষের কাছে নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মানুাষের ক্রয়মতার ওপর।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণেই গ্রামের মানুষের হাতে নগদ অর্থ প্রবাহ বেড়েছে। ফলে তাদের ক্রয়মতা অনেক বেড়ে গেছে। ভোজ্যতেলের হঠাৎ ব্যবহার বৃদ্ধিকে এই ক্রয় মতা বৃদ্ধির পরিমাপ হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করে চালের পেছনে। তারপর আমিষ ক্রয়ে। সবচেয়ে কম অর্থ খরচ করে রান্নার উপকরণ ক্রয়ে। সাধারণত গ্রামের মানুষেরা চাল, মাছ ও তরিতরকরি কেনার পর সবার শেষে ভোজ্যতেল কেনে। সেই হিসেবে দেশে ভোজ্যতেলের ব্যবহার বৃদ্ধি মানেই গ্রামের মানুষের ক্রয়মতা বেড়ে যাওয়া।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাহবুব আলী বলেন, ভোজ্যতেলের ব্যবহার বৃদ্ধির পরিমাপকে আমরা মানুষের ক্রয়মতা বৃদ্ধির প্রভাব হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। গত এক বছরে মানুষের এই ক্রয়মতা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ২০০৭ ও ২০০৮ এর তুলনায় ২০০৯ সালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় এবং কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ভাল দাম পাওয়ায় গ্রামে নগদ অর্থপ্রবাহ বেড়েছে। তার ওপর বর্তমান সরকার মতায় আসার পর গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার বিভিন্ন পদপে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও গ্রামে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সকল উদ্যোগের কারণেই গ্রামের মানুষের হাতে নগদ অর্থ চলে এসেছে। এতে মানুষের ক্রয় মতা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, "এটাই স্বাভাবিক। মানুষের হাতে টাকা এলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্রয়মতা বেড়ে যাবে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ভোজ্যতেলের ব্যবহার বৃদ্ধির ঘটনা দেখতে পাচ্ছি।"
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর হিসাব থেকে দেখা যায়, গত এক বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় ১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০০৮ সালে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৯৯ মার্কিন ডলার। গত ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯০ ডলারে। এই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির েেত্র শহরের মানুষের চেয়ে গ্রামের মানুষই এখন এগিয়ে আছে।
ভোজ্যতেল ব্যবহারের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০০৯ সালে দেশে প্রায় ১৪ লাখ ৯৬ হাজার টন ভোজ্যতেল ব্যবহৃত হয়েছে। ২০০৮ সালে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৯৬ হাজার টন। গত এক বছরে ভোজ্যতেলের ব্যবহার বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিলের রিজিওনাল ম্যানেজার একেএম ফখরম্নল আলম বলেন, গত এক বছরে দেশে ভোজ্যতেলের ব্যবহার প্রায় ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি ঘটেছে মূলত খোলা ভোজ্যতেলের। কনজুমার প্যাকে বাজারজাতকৃত তেলের ব্যবহার বাড়েনি। দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণী এই কনজুমার প্যাকের ভোজ্যতেলের প্রধান ক্রেতা। কিনত্মু খোলা ভোজ্যতেলের বড় ক্রেতা গ্রামের মানুষ। আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি, গত এক বছরে ভোজ্যতেলের যে ৩৭ শতাংশ ব্যবহার বেড়েছে, তার ৮০ শতাংশই বেড়েছে গ্রামে। এটা বেড়েছে মূলত গ্রামের মানুষের ক্রয়মতা বৃদ্ধির কারণে। কৃষি উপকরণের ভাল দাম পাওয়ায় গ্রামের মানুষের হাতে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। তাদের খাবারে মান বেড়েছে। এ কারণে বেড়ে গেছে ভোজ্যতেলের ব্যবহারও।
জানা যায়, বর্তমানে গ্রামের মানুষের মাথাপিছু ভোজ্যতেল গ্রহণের পরিমাণ মাত্র সাড়ে তিন কেজি। আর শহরের মানুষের মাথাপিছু ভোজ্যতেল গ্রহণের পরিমাণ ১৩ কেজি। এ প্রসঙ্গে ফখরম্নল আলম বলেন, গত এক বছরে ১৩ কেজির পরিমাপ স্থির রয়েছে। কিনত্মু খোলা তেল বিক্রি উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের মানুষের মাথাপিছু ভোজ্যতেলের ব্যবহার চার কেজির ওপরে উঠে এসেছে। ফলে যতদিন গ্রামের মানুষের ক্রয়মতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে ততদিন দেশে ভোজ্যতেলের আমদানিও বৃদ্ধি পাবে।
উলেস্নখ্য, গত বছর কৃষক তাদের কৃষিপণ্যের ভাল দাম পেয়েছে। ধানের দাম পেয়েছে ছয় শ' টাকার ওপর। পাটের দাম পেয়েছে ১৫শ' থেকে ১৬শ' টাকা। শাকসবজিরও ভাল দাম পেয়েছে। বেড়েছে ডিমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম। এতে গ্রামের মানুষের হাতে নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের এই ক্রয়মতা বৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সরকারী উদ্যোগগুলোকে সুসংহত করতে হবে। যাতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্রয়মতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা যায়। যেভাবে সরকার গ্রামীণ উন্নয়ন চাইছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রামে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে তা যাতে দীর্ঘমেয়াদী ও সঠিকভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
No comments