দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার সামনে যত চ্যালেঞ্জ by মাসুম বিল্লাহ

আগামী ১৫-২০ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের মতো একের পর এক নানা ঘটনায় দণি এশিয়া আলোড়িত হবে। পানি সঙ্কটের মতো জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত সমস্যা, স্বল্প অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্য, জ্বালানি স্বল্পতাসহ বহু অভ্যন্তরণি ও বাহ্যিক সমস্যা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শাসকদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।
এ দুই দেশের রয়েছে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী, যা আকারে অনেক আফ্রিকান রাষ্ট্রের সমান। এর সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক দিয়ে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও বিপুল তরুণ-যুবকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি দিল্লির সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। অসম উন্নয়ন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও নিররতা দেশটির প্রধান দুর্বলতা। গ্রাম এলাকায় নকশালীদের মতো বিুব্ধ গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে হুমকির সম্মুখীন করে রেখেছে। আগামী দিনগুলোতে ভারত ও পাকিস্তানে দ্রুত নগরায়ন, দেশ দু’টির রাজনৈতিক দৃশ্যপটেও পরিবর্তন আনবে। রাজনীতির বর্তমান নিয়ন্ত্রণ যে গ্রামীণ এলিট শ্রেণীর হাতে, তা চলে যাবে শহুরে নিম্ন ও মধ্য বিত্তদের হাতে। প্রতিবেশী দেশ দু’টির অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলি এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এর ফলে নিরপত্তাহীনতার আশঙ্কা তৈরি হয়। বেড়ে যায় সামরিক তৎপরতা। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার এবং তা ‘প্রথম ব্যবহার’ না করার নীতি প্রতিবেশী দেশটির প্রচলিত ধারার সামরিক প্রাধান্যকে ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ করার জন্য।

ভারত-পাকিস্তানের প্রতিযোগিতার ভাবিষ্যৎ ত্রে আফগানিস্তান। আগামী বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী সেখান থেকে সরে যাবে। সেখানে কারো কৌশলগত সুবিধা কেউ মেনে নেবে না। তখন আঞ্চলিক সহযোগিতা আরো কঠিন হয়ে উঠবে। আরো ব্যাপকভাবে দেখলে কেবল ভারত-পাকিস্তানের ওপর নয়Ñ আফগান সীমান্ত লাগোয়া দেশগুলোর পরস্পরবিরোধী ল্য, তীব্র অবিশ্বাস, আধিপত্যবাদী কৌশল, পুরো অঞ্চলে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার েেত্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

আবার, চীনকে নিয়েও কম শঙ্কিত নয় ভারত। পাকিস্তানকে বেইজিং সহায়তা দিচ্ছে শুধু এ জন্যই নয়; আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরি লে চীনের প্রভাব ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান অর্থনৈতিক ধীর অবস্থা থেকে উৎরাতে না পারলে বেইজিংয়ের সঙ্গে যে বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি হবে তা নিয়ে দিল্লির নীতিপ্রণেতারা উদ্বিগ্ন। পরাশক্তি হওয়া নিয়ে ভারত ও চীনের প্রতিযোগিতা আগামীতে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। তখন তা কেবল দণি এশিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো অনেক শক্তিকে এখানে টেনে আনবে।

এ সময় দৃশ্যপটে তিন ধরনের ব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটতে পারে। এর মধ্যে আশাব্যঞ্জক দৃশ্যটি হলো, ভারতের সাথে সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করার মাধ্যমে পাকিস্তান টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। অর্থনৈতিক পরিবেশ উন্নত হলে তরুণদের জন্য অধিক কর্মসুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে তরুণেরা সন্ত্রাসবাদীদের কবলে পড়া থেকে বেকার তরুণসমাজ যেমন রা পাবে, তেমনি কায়েমি স্বার্থবাদীরাও কোণঠাসা হবে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এতে পরস্পরের কাছ থেকে হুমকির আশঙ্কা ক্রমেই কমে যাবে। ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে অর্থনৈতিক গতি যেমনভাবে প্রতিবেশীদের সাথে চীনের সম্পর্ক বদলে দিয়েছে, তেমনি ভারতের শক্তিশালী অর্থনীতি দণি এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির নতুন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবে।

পাকিস্তানের অর্থনীতি দীর্ঘ সময় স্থিতিশীল থেকেছে। তখন দেশটির বিদেশী সাহায্য বা আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভরতাও ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। এর পরও পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র দু’টির উচিত হবে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন কিছু এড়িয়ে সহাবস্থানের উপায় খুঁজে বের করা। উন্নত কর্মপরিবেশ দুই দেশের তরুণ ও যুবকদের সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের প্রতি নিরুসাহিত করবে। আর আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য গোটা দণি এশিয়ার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে অনেকেই এই দৃশ্যপট কল্পনা করতে চান না। কারণ, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য পাকিস্তানে অধিকতর দ বেসামরিক সরকারের আগমন ঘটতে হবে। সেই সাথে উন্নত কর কাঠামো ও বিনিয়োগ নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা নতুন শিল্পায়ন ঘটাবে, নতুন কাজ সৃষ্টি করবে এবং অধিকতর আধুনিক শিার সুযোগ সৃষ্টি করবে। আফগানিস্তানে কোনো বিপর্যয় ঘটলে এ ধরনের বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ব্যত্যয় ঘটতে পারে। অন্য দিকে প্রতিবেশী দেশের সাথে ভারত বাণিজ্য ও ভিসা-ব্যবস্থা উন্মুক্ত করলে, পাকিস্তানও একই ধরনের সংস্কার গ্রহণে উৎসাহিত হবে।

ইসলামীকরণ দৃশ্যপট বা পাকিস্তানে কট্টর ইসলামপন্থী এবং আফগানিস্তানের তালেবানদের প্রভাবের কথা ধরা যাক। ইসলামাবাদে দুর্বল সরকার তারা আগামী দশকে ক্রমাগত কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে। কট্টর ইসলামপন্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মানে হলো শরিয়াহ আইনের চরমপন্থী ব্যাখ্যা। অনেক শান্তিপূর্ণ এলাকায় জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি গড়ে উঠতে পারে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে চরমপন্থীদের বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পাকিস্তান যতই ইসলামি রাষ্ট্র হবে, ইসলামি চরমপন্থীদের ওপর সেনাবাহিনী ততই সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবে। এক সময় হয়তো ইসলামি কট্টরপন্থীদের কাছে ভূ-খণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারাতে হতে পারে এবং তাদের সাথে আলোচনায় সেনাবাহিনী উৎসাহিত হতে পারে। আরো যেসব বিষয় এই অঞ্চলে অনিশ্চিত অবস্থা তৈরি করতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল সরকার, বিপুল বেকার তরুণ, খাদ্য ও সুপেয় পানির সঙ্কট। এর ফলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।

এই সময়ে ভারতকে, জঙ্গিবাদের বিস্তার ও কাশ্মির নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং বঞ্চনা থেকে সৃষ্ট বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর ােভ সামাল দেয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে। ভারত যদি প্রতিবেশীদের টেনে ওপরে তোলার নীতির পরিবর্তে পেছন পেছন ছোটার নীতি গ্রহণ করে তাহলে দেশটির বৈশ্বিক ভূমিকা গ্রহণের প্রশ্নটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

পূর্ব এশিয়া : বহুমুখী কৌশলগত বৈশিষ্ট্য

বড় ধরনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রভাববলয়ের নাটকীয় পরিবর্তন, জাতীয়তাবদের উত্থান এবং মরিয়া হয়ে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নেÑ কেবল চীন-ভারতের মধ্যে নয়, জাপানের সাথেও উত্তেজনা বাড়বে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর অস্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো সৃষ্টির কারণে পূর্ব এশিয়ায় এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। কোরীয় উপদ্বীপ ও তাইওয়ান প্রণালীকে ঘিরে উত্তেজনা, দীর্ঘ দিনের ােভ না কমে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আগামীতে চীনের উত্থান নিয়ে ভয়, জাতীয়তাবাদের বিস্তৃতি এবং এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন এই ােভ আরো বাড়িয়ে দেবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও আন্তঃনির্ভরশীলতা পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর এই ােভ  যে কমাতে পারবে না তা  বোঝা যায় জাপান-চীন, জাপান-কোরিয়া, চীন-কোরিয়া, ভারত-চীন এবং ভিয়েতনাম-চীনের মধ্যে জটিল সম্পর্ক থেকে।

আঞ্চলিক প্রবণতা পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে দু’টি বলয়ে ঠেলে দিতে পারে। একটি বলয়ের কেন্দ্রে থাকবে চীন। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক কারণে চীনের দিকে ঝোঁক প্রবণতা তৈরি হবে। নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার করবে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯৫ সাল থেকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহৎ শক্তিগুলো, যেমন : জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতÑ যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ক্রমাগত সরে এসে চীনকে তাদের বৃহৎ ব্যবসায়ী অংশীদার হিসেবে বেছে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক রেখেই কিন্তু এই নির্ভরতা তৈরি হচ্ছে। সম্পর্কের এই ধরন ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিরাজ করবে। তবে, চীনে উদার রাজনীতির বিস্তার, সামরিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হলেÑ প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগ কমার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিরাপত্তা সম্পর্ক রায় নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হওয়ায়  চীনের এখন এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় এফডিআই (সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ) যোগানদাতা। কিন্তু কোনো কারণে এই প্রবৃদ্ধি তিগ্রস্ত বা দীর্ঘ মন্দার শিকার হলে, তা গুরুতর আঞ্চলিক টানাপড়েন ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া ঐক্যবদ্ধ কোরিয়া এবং তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে আরেকটি প্রভাববলয় সৃষ্টির নতুন প্রবণতা সৃষ্টির আরেকটি চলক হতে পারে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি এখন এশিয়ার দিকে সরে এসেছে। প্রাচীনকালে ভূমধ্যসাগর, বিংশ শতাব্দীতে আটলান্টিকের মতো একবিংশ শতাব্দীতে বাণিজ্য পথ হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পানি-পথগুলোতে মার্কিন নৌবাহিনীর বর্তমান আধিপত্য, চীনের ব্লু-ওয়াটার নেভির শক্তি বৃদ্ধির ফলে তা খর্ব হবে। তখন নৌপথের নিরাপত্তা রা ও স্বাধীনভাবে চলাচল নিরাপদ রাখার জন্য কোন শক্তি অধিকতর কার্যকরÑ সেই প্রশ্নও সামনে চলে আসবে।

সামষ্টিক পর্যায়ে আগামী দশকগুলোতে এশিয়ার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে চার ধরনের ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটতে পারে : ১। আইনভিত্তিক সহযোগিতা ও নীরব প্রতিযোগিতায় বর্তমান আন্তর্জাতিক মিশ্র ব্যবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের জোটব্যবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। এটা হবে চীনের ক্রমাগত সামরিকীকরণ, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক মতা সামাল দেয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য নিরাপত্তা ইস্যুগুলো প্রশমনের জন্য। এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত শক্তি অর্জন করবে এবং অর্থনৈতিক সমন্বয় কেবল এশিয়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত হবে। ২। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাওয়া এবং তুলনামূলক শক্তিধর দেশগুলোর গতিশীল অবস্থানের কারণে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে বর্তমান শক্তির ভারসাম্যে টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্নতার দিকে এগিয়ে গেলে বা অর্থনৈতিক নিম্নগতি সৃষ্টি হলে পূর্ব-এশিয়ার সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে, তখনো যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে যাবে। এ ধরনের আঞ্চলিক ব্যবস্থা হতে পারে ‘শত্র“তার জন্য উর্বর’ ত্রে। এশিয়ার কিছু দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে পারে। এটা হবে মার্কিন নিরাপত্তা বলয়ের পরিপূরক। ৩। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে পূর্ব এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক গণতান্ত্রিক সঙ্ঘ সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের ব্যবস্থা সৃষ্টির পূর্বশর্ত হলো চীনে উদার রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন। এটা হবে এমন এক বহুমাত্রিক ব্যবস্থা যেখানে ছোট ছোট দেশগুলোর স্বশাসন রতি হবে। এমন ব্যবস্থার উদ্ভব হলেও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে অব্যাহতভাবে ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তাকারী’ হিসেবে ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। ৪। বেইজিংকে ঘিরে চীনকেন্দ্রিক এক নতুন ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটতে পারে। এর ফলে ভিন্ন ধরনের ‘পূর্ব এশীয় ব্যবস্থার’ সৃষ্টি হবে। এটা হবে অঞ্চলজুড়ে চীনের প্রভাব বলয় বিস্তৃত হওয়ার কারণে। চীনকে কেন্দ্র করে কোনো এশীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার অর্থ হলো, এশিয়াকে কেন্দ্র করেই এই মহাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন। এর মধ্যে আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিকতাবাদের ঠাঁই হবে না।

আগামী দশকগুলোতে উত্থানের জন্য ভারতের অনেক উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে। জাপানের অবস্থা হতে পারে পতনোন্মুখ। ফলে চীনকেন্দ্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। তখন চীনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান এশীয় মিত্রদের সামর্থ্য বা সদিচ্ছা কেমন হয়, তা-ও দেখার বিষয়। পাল্টা ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অংশগ্রহণ জোরদার করতে হতে পারে, যা চীনের সাথে সরাসরি সঙ্ঘাত সৃষ্টি করবে।
       

No comments

Powered by Blogger.