কেউ খোঁজ রাখে না
গ্রামে পাকবাহিনী প্রবেশ করেছে শুনে প্রাণভয়ে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে মন্নাফ মিয়াও মা-বাবার সঙ্গে পালাতে থাকে। বাড়ির পাশে ব্রপুত্র নদের আলগড়া খেয়াঘাটে পৌছে।
একাত্তরের পাক বাহিনীর বুলেটে সে আহত হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে অনেক বছর। সব পরিবর্তন হয়েছে। হয়নি মন্নাফ মিয়ার ভাগ্যের পরিবর্তন। সে এখন ভিা করে সংসার চালায়। অর্থাভাবে ঘরের চাল বেড়া মেরামত করতে পারে না। কাগজ দিয়ে কোন রকমে স্ত্রী, সনত্মান নিয়ে রাত্রিযাপন করে। হতদরিদ্র আহত মন্নাফ মিয়ার বাড়ি ভৈরব পৌর এলাকার জগনাথপুরে লক্ষ্মীপুর উত্তরকান্দা গ্রামে। পিতার নাম মৃত গনি মিয়া।গ্রামবাসীরা জানায়, ভৈরব শহরকে করায়ত্ত করার জন্য সেদিন পাকিসত্মানী বাহিনী জল, স্থল ও আকাশপথে বন্দরকে ঘিরে বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় বোমার আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাতে শুরম্ন করে অসহায় মানুষ। পলায়নরত শত শত মানুষ ব্রহ্মপুত্র নদ পার হওয়ার জন্য সমবেত হয় আলগড়া খেয়াঘাটে। এ সময় আলগড়া খেয়াঘাটের পাশর্্ববতর্ী পানাউলারচরে হেলিকপ্টার থেকে অবতরণকারী পাক সেনারা ময়মনসিংহ-ভৈরব রেললাইন ধরে ভৈরব শহরের দিকে আসতে থাকে। রেললাইন থেকে আলগড়া খেয়াঘাটে শত শত মানুষকে একত্রে জমায়েত হতে দেখে তারা নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় গুলিতে নিহত হয় বহু নারী-পুরম্নষ, শিশু ও বৃদ্ধ। সেদিনের পাকসেনাদের গুলিতে আহত হয় বালক মন্নাফ মিয়া। হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় কাজ করতে অসুবিধা হয়। ফলে দেশ স্বাধীন হলেও মন্নাফের যুদ্ধ থামেনি। জীবনযুদ্ধে সে পরাসত্ম। এখনও প্রতিদিন তার খাবার যোগাতে যুদ্ধ করতে হয়। বর্তমানে তার বয়স ৫৫ বছর। স্ত্রী সনত্মান নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাছে। অসহায় এই মন্নাফ মিয়া যে ঘরটিতে বাস করে তার চারদিকে কাগজের বেড়া। চাল জরাজীর্ণ। টাকার অভাবে থাকার ঘরটি পর্যনত্ম মেরামত করতে পারে না সে। ভিা করে সংসার চালাতে হয় তাই বৃষ্টি আসলে অন্যর ঘরের বারেন্দায় আশ্রয় নিতে হয়। মন্নাফ মিয়া জনকণ্ঠকে বলে, পাকবাহিনী আমার যে তি করেছে সেই কষ্ট এখনও ভোগ করছি। আমার জন্য তো আর দেশ স্বাধীন হয়নি। যাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে তারা সুখে আছে । কথা গুলো বলতে গিয়ে মন্নাফ মিয়ার দু্থচোখ বেয়ে অশ্রম্ন গড়াতে থাকে। একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু বলে, হায়রে, পাকবাহিনীর বুলেটে আমি পঙ্গু হলাম। কেউ আমার খোঁজ রাখে না।
_কাজী ইসফাক আহমেদ বাবু, ভৈরব
No comments