ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার নেই ত্রাণ নেই, অরণ্যে কাটছে দিন
খাদ্য নেই, বাসস্থান নেই। তিগ্রস্তদের দিন কাটছে পোড়া ভিটায়। আর রাত কাটছে অরণ্যে দলবদ্ধ হয়ে আগুন জ্বালিয়ে। ক্ষুধা নিবারণে আখ, কলা ও বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে তারা দিন অতিবাহিত করছে।
ষড়যন্ত্রের অনলে ছাই হওয়া বাঘাইহাটের ১২টি গ্রামের অন্তত দুই হাজার নিরীহ উপজাতীয়র গত তিন দিন কেটেছে এভাবেই।বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালার সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে সামান্য ত্রাণ পৌঁছেছে সোমবার দুপুর বারোটায়। তাতে কিছুই হয়নি তিগ্রসত্মদের। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নত ত্রাণ পৗঁছালেও তা গ্রহণ করেনি পাহাড়ীরা। সোমবার দুপুর নাগাদ দেখা গেছে, এ সকল ত্রাণসামগ্রী সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। বিতরণকারীদের পক্ষে বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তিগ্রসত্মরা ত্রাণ নিতে এসে অভিযোগ তুলেছেন বাঙালীরা তিগ্রসত্ম হয়নি তাদের ত্রাণ দিলে উপজাতীয়রা এই ত্রাণ গ্রহণ করবে না। তিগ্রসত্ম উপজাতীয়দের প েবলা হয়েছে, যাদের কোন তি হয়নি এবং যারা অগি্নসংযোগ করে লুটপাট করেছে তাদের ত্রাণ দিলে আমরা ত্রাণ নেব না। এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে ঘটনাস্থল গঙ্গারামমুখ, ডিপি পাড়া, সীমানা পাড়া ও হাজাছড়ার বিভিন্ন স্থানে দলবদ্ধ হয়ে অপো করছে তিগ্রসত্ম অসংখ্য উপজাতীয় নারী-পুরম্নষ। বেলা তিনটা নাগাদ ঘটনাস্থল এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এবং তিগ্রসত্মদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের করম্নণ আর্তির কথা। গঙ্গারাম এলাকার হাজাছড়া গ্রামের সাবেক হেডম্যান শোভারা চাকমা, সুপ্রকাশ চাকমা, কানাইয়া চাকমা বলেন, গত তিন দিন থেকে এ গ্রামের সকলেই না খেয়ে আছে, বনের আলু খেয়ে কতণ ুধা নিবারণ করা যায়। এখন কোন ত্রাণ সাহায্য পায়নি তারা। গায়ের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। সেনাবাহিনী ও বাঙালীরা একদিকে আগুন লাগিয়েছে অন্যদিকে লুটপাট করেছে বলে তাদের অভিযোগ। এই গ্রামের কালাবি চাকমা বলেন, আমার ঘর পোড়েনি, তবে শুধু ঘর আছে আর কিছু নেই, বাঙালীরা সব কিছুই লুটপাট করে নিয়ে গেছে। স্বপন চাকমা, মলেন্দ্র চাকমা, শানত্মি বিকাশ চাকমা বলেন, সেনাবাহিনীর লোকেরা যখন ব্রাশফায়ার শুরম্ন করে তখন আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়েছি। এ সুযোগে বাঙালীরা ঘরবাড়িতে আগন লাগায় এবং গরম্ন-ছাগল হাঁসমুরগি লুটপাট করে নিয়ে যায়। উত্তর গঙ্গারামের ধাক্কালা চাকমা বলেন, গত রবিবার রাতেও এ গ্রামে সেনা টহল এসেছে। আমরা ভয়ে সরে গেছি, দেখেছি সেনা সদস্যরা বেনেট দিয়ে পালিত শূকরটিকে হত্যা করেছে।
ডিপি পাড়ার শান্তিময় চাকমার আর্তনাদ ॥ ডিবি পাড়ার শানত্মিময় চাকমা বলেন, ডিপি পাড়ার আর্মি ক্যাম্পের পাশেই আমার বাড়িটি। কদিন থেকে এলাকার পরিস্থিতি ভালনা। ঘটনার দিন (২০ ফেব্রুয়ারি ) আমি প্রয়োজনের তাগিদে দীঘিনালায় গিয়েছিলাম। যাবার সময় সেনা ক্যাম্পে বলেছিলাম পরিস্থিতি ভাল যাচ্ছে না। কিছু হলে আমরা ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নেব। খবর পেয়ে অরণ্যের পথে বাড়ির পাশে এসে দেখি যে সেনা সদস্যরাই আমার বাড়িতে গুলি চালাচ্ছে এবং অগি্নসংযোগ করছে। এর চেয়ে বেইমানি আর কী হতে পারে। ভেবেছিলাম শানত্মিচুক্তি হয়েছে আমরা সুখে থাকব। এ জন্য তিন লাখ টাকা খরচ করে একটি বাড়ি বানিয়েছি, সেই বাড়িটি হিংসার আগুনে ছাই হয়ে গেল। অপরদিকে সীমানা পাড়ার বাঙালী আক্তার হোসেন, মাসুদা বেগম, আনোয়ারা বেগমরা বলেন, পাহাড়ীরা আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে ,আমরা তাদের বিচার চাই।
অনিশ্চয়তায় ১৫ পরীক্ষার্থী ॥ এদিকে তিগ্রসত্ম এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গঙ্গারামের বারোটি গ্রামের অন্তত ১৫ এসএসসি পরীক্ষার্থী এই ঘটনার কারণে পরীায় ভাল ফল করতে পারবে না। হাজাছড়া গ্রামের পরীক্ষার্থী অমর বিকাশ, নিকোলাষ চাকমা, রূপন চাকমা, কলেন্যা চাকমাসহ ৮ পরীক্ষার্থীর বই পুস্তক হিংসার আগুনে ছাই হয়েছে। তাদের ফলাফল কী হবে _ এই প্রশ্ন সকলের। একই অবস্থা গঙ্গারামমুখ ডিপি পাড়াসহ তিগ্রসত্ম সকল এলাকার পরীক্ষার্থীর। এলাকাবাসীর ধারণা অনত্মত ১৫ পরীক্ষার্থী তাদের ফল ভাল করতে পারবে না। এদিকে বাঘাইছড়ি দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ির সুশীল সমাজের প থেকে দেয়া রবিবারের ত্রাণ সামগ্রী সকলের জন্য কিছুই হয়নি। ১০০ কেজি চাল, ২৫ কেজি তেল, ৩৫ কেজি লবণ, সামান্য পরিধেয় বস্ত্র ও নতুন পুরনো ত্রিশ বসত্মা কাপড় এবং কিছু ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। বাসস্থানের অভাব আর ক্ষুধার জ্বালায় কাতর এ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে আকুতি জানিয়েছে তিগ্রসত্ম এলাকার হেডম্যান কার্বারী ও জনপ্রতিনিধিরা।
No comments