টিসিবি সক্রিয় হবে না?
বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তা এখনও সন্তোজনক পর্যায়ে আসেনি। পণ্যমূল্য এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। এখনও ওঠানামা চলছে দামের ৰেত্রে। পণ্যমূল্য বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ৰমতার মধ্যে আনার ব্যাপারে মহাজোট সরকারের একটা অঙ্গীকার রয়েছে।
এই অঙ্গীকার সাধারণ মানুষকে খুশি করে, তাদের মনে বিশেষ আশার সৃষ্টি করে। দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার এই লৰ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে, যাতে মানুষ আশান্বিত হয় এবং সেসব উদ্যোগের কিছু কিছু সুফলও মানুষ পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মানুষ প্রত্যাশা করে অতীতের মতো যখন-তখন যে কোন পণ্যের মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা এবার বন্ধ হবে, বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি এবার বন্ধ হবে। সরকারও বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে নানা পদৰেপের কথা ঘোষণা করে। বিশেষ করে টিসিবিকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়। টিসিবিকে সক্রিয় ও বিশেষভাবে কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তার কথা সরকারী পর্যায়ে একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু আজও টিসিবি কাঙ্ৰিত পর্যায়ে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, টিসিবিকে যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল সংস্থাটি সেই উদ্দেশ্য সফল করতে পারছে না তার প্রমাণ মানুষ দেখেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব পাকিসত্মানের ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে টিসিবির যাত্রা শুরম্ন হয়। সেই সময় স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধবিধ্বসত্ম দেশে রাষ্ট্রপতির আদেশবলে প্রতিষ্ঠিত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাটি বিরাট দায়িত্ব পালন করেছিল। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা, বাজার যাতে স্থিতিশীল থাকে সে উদ্দেশ্যে আমদানি করা পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্যাদির দাম ও সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি রাখা এসব গুরম্নত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল সংস্থাটির ওপর। তখন দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। অর্থনীতি বিপর্যসত্ম প্রায়। তখন অনেক কিছুর সুযোগও ছিল সীমাবদ্ধ। সেই অবস্থায় সংস্থাটি তার ওপর অর্পিত এসব গুরম্ন দায়িত্ব পালনে যে সমর্থ হয়েছে তা স্বীকার করতেই হবে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতির সময় বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ এ ধরনের গুরম্নত্বপূর্ণ কাজে এই প্রতিষ্ঠানটি যে ভূমিকা রেখেছে তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় একে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এটি এখনও বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার ৰেত্রে কাঙ্ৰিত ভূমিকা রাখতে পারবে।
কিন্তু টিসিবিকে সেভাবে গড়ে তোলা হয়নি। এখন প্রতিষ্ঠানটি যে অবস্থায় রয়েছে তাতে তাকে নতুনভাবে শক্তিশালী করতে হবে, বলীয়ান করতে হবে। টিসিবি সক্রিয় হোক হয়ত স্বার্থবাদী কোন কোন মহল চাইবে না, চাইবে না পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে সক্রিয় বাজারের একটা দুষ্ট চক্র, কিন্তু সাধারণ মানুষ চাইবে টিসিবিকে সক্রিয় করা হোক, বাজারের পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি যথাযথ ভূমিকা রাখুক। এজন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে, অতিমাত্রায় মুক্তবাজার ঘেঁষা নীতি গ্রহণের ব্যাপারে যে প্রবণতাটি আমাদের দেশে অনেককাল ধরে কাজ করছে সরকারকে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে দৃঢ়তার সঙ্গে। বাজারে স্বার্থ দেখতে হবে কিছু ব্যবসায়ীর বা ব্যবসায়ী কোন গোষ্ঠীর নয়, সাধারণ লৰ-কোটি দরিদ্র, সীমিত আয়ের মানুষের স্বার্থটা দেখতে হবে সবার আগে। সেজন্য টিসিবিকে কার্যকর করতে হবে, প্রয়োজনে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি, বিপণন, পরিস্থিতি তদারকির ব্যবস্থা করতে পারে সেরকম যোগ্য করে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিসিবিকে কার্যকর করার ব্যাপারে গত এক বছরে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়েছে এমন দেখা যাচ্ছে না। সরকারের একটি বছর পেরিয়ে দ্বিতীয় বছর চলছে। মানুষ এখনই পণ্যমূল্য স্থিতিশীল পর্যায়ে দেখতে চায়। সে কাজ করতে গেলে টিসিবির দিকে নজর দিতেই হবে। অতীতের অভিজ্ঞতাও এটাই বলে। মানুষ এখন শক্তিশালী কার্যকর টিসিবি দেখতে চায়। সরকারকে এখন এই লৰ্যেই পদৰেপ নিতে হবে_ দেশবাসী এটাই দেখতে আগ্রহী।
No comments