স্মরণ- কবি কাজী কাদের নেওয়াজ
শিক্ষাবিদ ও কবি কাজী কাদের নেওয়াজ ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালেবপুরে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে।
তিনি বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স (১৯২৩), বহরমপুর কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (১৯২৯) পাস করেন। ১৯৩২ সালে তিনি বিটি (বর্তমানে বিএড) পাস করে সাব ইন্সপেক্টর অব স্কুল পদে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান। ’৪৭-এ দেশ বিভাগের পর কাজী কাদের ঢাকায় এসে প্রথমে নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পরে দিনাজপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন (১৯৫১)। তিনি ১৯৬৬ সালে অবসর গ্রহণ করে মাগুরার মুজদিয়া গ্রামে বসবাস করেন আমৃত্যু। একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন।কাজী কাদের নেওয়াজ অল্প বয়সেই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিকাশ, শিশু সাথী, ভারতবর্ষ, বসুমতী, শুকতারা, পাঠশালা, রামধনু, শীশমহল, মৌচাক, প্রবাসী, সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হতো। সাহিত্যের সব শাখায়ই তার বিচরণ ছিল। তবে কবিতাই ছিল তার চর্চার প্রধান ক্ষেত্র। তিনি রবীন্দ্র ভাববলয়ের কবি হলেও বিষয়ে, বিন্যাসে, আঙ্গিকে ও প্রকাশনৈপুণ্যে তার কাব্য স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। কবিতায় তিনি সত্য, সুন্দর আর সুনীতিকে আহ্বান করেছেন। ‘ছান্দসিক কবি’ হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন। প্রেম, প্রকৃতি ও স্বদেশ তার কবিতার বিষয়বস্তু। সহজ-সরল ভাবমাধুর্যে রচিত তার কাহিনীধর্মী ও নীতিকথামূলক শিশুতোষ রচনার সংখ্যা অনেক। সাহিত্যচর্চার ধারাকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় সুসংগঠিত রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেম ও প্রকৃতি তার কবিতায় মনোজ্ঞভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
কাজী কাদের নেওয়াজের গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলি হলো : মরাল (১৯৩৬), দাদুর বৈঠক (১৯৪৭), নীল কুমুদী (১৯৬০), মণিদীপ, কালের হাওয়া, মরুচন্দ্রিকা, দু’টি পাখি দু’টি তারা (১৯৬৬), উতলা সন্ধ্যা প্রভৃতি। তিনি প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, শিশুসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৩) এবং মাদার বক্শ পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
No comments