পাঠককে অভিনন্দন, আসুন, মাথা উঁচু করে দাঁড়াই by মতিউর রহমান
প্রথম আলোর আজকের সংখ্যাটি বর্ষ ১৪, সংখ্যা ১। আমরা পেরিয়ে এলাম ১৩টি বছর। প্রিয় পাঠক, আমাদের সকৃতজ্ঞ শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। প্রিয় পাঠক, আপনি জেনে খুশি হবেন যে আজ প্রথম আলো ছাপা হয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার কপি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা নতুন রেকর্ড। আন্তর্জাতিক জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়েলসন গত মার্চ-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করেছিল।
তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন প্রথম আলো পড়েন প্রায় ৫৩ লাখ পাঠক। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার প্রথম আলো পড়ে থাকেন এক কোটি ২৪ লাখ জন। এটা মার্চ-এপ্রিল মাসের হিসাব; এর পরে প্রথম আলোর প্রচারসংখ্যা আরও বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এর বাইরে আছে অনলাইন ও ই-পেপার মিলে আরও প্রায় ১৩ লাখ পাঠক। প্রথম আলোর এই বিপুল প্রচারসংখ্যার কারণে যেকোনো খবর ছাপা হলে তার প্রতিক্রিয়া হয় ব্যাপক। ইতিবাচক খবরে নতুন আশাবাদ তৈরি হয় মানুষের মধ্যে। কোনো অভাব-অভিযোগ ছাপা হলে অনেক ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়। মানবিক খবর ছাপা হলে পাঠকেরা এগিয়ে আসেন স্ব-উদ্যোগে। আবার কোনো ছোটখাটো ভুল হলে তার প্রতিক্রিয়াও হয় বিরাট। ভুল করলে আমরা তাই সঙ্গে সঙ্গে ভুল স্বীকার করি এবং সংশোধনী ছাপিয়ে দিই। আমাদের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা থাকে নির্ভুল পত্রিকা বের করার।
পাঠকই প্রথম আলোর প্রাণ। আমরা জানি, আমাদের প্রিয় পাঠকেরা এই কাগজটাকে তাঁদের পরিবারের অপরিহার্য সদস্য বলে মনে করেন। এখানেই প্রথম আলোর পাঠকদের অনন্যতা। সত্যি, আপনাদের কাছে আমাদের ভালোবাসা আর ঋণের কোনো শেষ নেই।
প্রথম আলোর পাঠকেরা ভালো কাজে, মানবিক উদ্দেশ্য সাধনে খুবই উদ্দীপিত থাকেন, অন্যদের অনুপ্রাণিত করেন। বাংলাদেশের জনগণ ইতিহাসের নানা বাঁকে বারবার প্রমাণ করেছেন, তাঁরা একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন; তাঁরা ভাষার অধিকার, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র জয় করে আনতে পারেন। আজও তেমনি দেখতে পাই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে, ভূমি আর নদী দখলের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাস আর দুর্নীতি প্রতিরোধে, নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায়, রাজনৈতিক অপরাধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অসংগতির বিরুদ্ধে বদলে যাওয়ার মিছিলে নাগরিকেরা কীভাবে সক্রিয় হন, জোট বাঁধেন। প্রথম আলো এবং বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যম এসব সংগ্রামে মানুষের পাশে আছে, থাকবে। সর্বশেষ, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও আমরা দেখলাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও শুভবুদ্ধির পক্ষে মানুষের ঐক্যের শক্তি কত সুন্দর, কত বিশাল হতে পারে।
প্রথম আলোর পাঠকেরাই আমাদের সাহায্য করেছিলেন, আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন বন্যাদুর্গত, শীতার্ত বা সিডর-আইলা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। না চাইতেই আপনারা অর্থ ও ত্রাণসাহায্য হাতে প্রথম আলোর কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন। আপনাদের সেই প্রেরণা থেকেই আমরা মাদকের বিরুদ্ধে, এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি অব্যাহতভাবে। হতদরিদ্র পরিবারের অদম্য মেধাবীদের পাশে রয়েছে প্রথম আলো। একইভাবে জড়িয়ে পড়েছি গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগসহ নানা সামাজিক-সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে। প্রথম আলোর পাঠকদের সংগঠন বন্ধুসভার তরুণ সদস্যরা সারা দেশে সারাক্ষণ সক্রিয় রয়েছেন বিচিত্র ইতিবাচক কাজে।
বদলে যাওয়া আর বদলে দেওয়ার এই কর্মযজ্ঞের মধ্যে আমরা কিন্তু সামান্যতম সময়ের জন্যও ভুলে যাই না আমাদের প্রধানতম কাজ—সত্য ও সুন্দর করে প্রতিদিন কাগজটাকে বের করা, বস্তুনিষ্ঠ খবর পেশাদারি দক্ষতার সঙ্গে আপনাদের সামনে হাজির করা, বিভিন্ন বিষয়ে মত-ভিন্নমত প্রকাশ করা, আপনার সময়টাকে আনন্দপূর্ণ ও আলোকিত করতে নানা রকমের আয়োজন প্রকাশ করে যাওয়া।
যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু আমাদের সমকালীন ইতিহাস থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষ আমাদের পথ দেখাচ্ছে। অন্যায় দেখে মাথা গুঁজে থাকার, মুখ গুঁজে থাকার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন সময় হয়েছে অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর। এখন সময় এসেছে একসঙ্গে আওয়াজ তোলার। সেটা যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, অপশাসনের বিরুদ্ধে, তেমনি নিজের মধ্যে থাকা উদ্যোগহীনতা, ভীরুতা ও আপসের বিরুদ্ধেও।
১৩ বছর আগে প্রথম আলো যখন আমরা বের করেছিলাম, আমাদের স্বপ্ন ছিল একটা সত্যিকারের ভালো কাগজ, বড় কাগজ করা। আমরা নিরপেক্ষ, সাহসী, স্বাধীন সাংবাদিকতা করব। সেই ব্রত থেকে আমরা সরে যাইনি, বরং আমরা নতুন আশায় নতুন স্বপ্নে আজ আরও বেশি করে প্রণোদিত বোধ করছি। আমরা প্রথম আলোর প্রচারসংখ্যা ৫ লাখ নয়, ৭ লাখ, ৯ লাখ ছাড়িয়ে যাবে, সেই স্বপ্ন দেখি।
নানা সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। শিক্ষার হার বাড়ছে। মেয়েরা এগিয়ে আসছেন। মানুষের আয়ু বেড়েছে, কমেছে দারিদ্র্য। সামগ্রিক অর্থনীতির রেখাও ঊর্ধগামী হয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, অদূর ভবিষ্যতে এই প্রচারসংখ্যা অর্জন অসম্ভব কোনো স্বপ্ন নয়।
আমাদের আরেকটা বড় স্বপ্নের কথা আমরা আজ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই—বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে; গণতান্ত্রিক, সহনশীল ও উদার হবে—সব মিলিয়ে গড়ে উঠবে একটা আলোকিত বাংলাদেশ। একটা উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বপরিমণ্ডলে গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে আমাদের স্বদেশ। শিক্ষা-দীক্ষা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য—সর্বত্র আমরা এগিয়ে যাব। স্বপ্ন না থাকলে আমরা এগোব কী করে? নানা দুঃসংবাদ সত্ত্বেও স্বপ্নের কথাই আমরা বলব। আর, এ দেশের লড়াকু গণতন্ত্রপ্রিয় শুভবাদী মানুষই আমাদের স্বপ্ন সফল করে তুলবে।
আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যার ৮৮ পৃষ্ঠাজুড়ে প্রকাশিত লেখাগুলোর মাধ্যমে আমরা সেই স্বপ্নই রচনা করতে চেয়েছি। আমরা বলতে চাই, আসুন, মাথা উঁচু করে বাঁচি। আসুন, একটা স্বপ্নময় সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি প্রিয় স্বদেশের জন্য। সবাই মিলে বদলে দিই আমাদের বর্তমানকে, আলোকিত করে তুলি আমাদের ভবিষ্যৎকে।
পাঠকই প্রথম আলোর প্রাণ। আমরা জানি, আমাদের প্রিয় পাঠকেরা এই কাগজটাকে তাঁদের পরিবারের অপরিহার্য সদস্য বলে মনে করেন। এখানেই প্রথম আলোর পাঠকদের অনন্যতা। সত্যি, আপনাদের কাছে আমাদের ভালোবাসা আর ঋণের কোনো শেষ নেই।
প্রথম আলোর পাঠকেরা ভালো কাজে, মানবিক উদ্দেশ্য সাধনে খুবই উদ্দীপিত থাকেন, অন্যদের অনুপ্রাণিত করেন। বাংলাদেশের জনগণ ইতিহাসের নানা বাঁকে বারবার প্রমাণ করেছেন, তাঁরা একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন; তাঁরা ভাষার অধিকার, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র জয় করে আনতে পারেন। আজও তেমনি দেখতে পাই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে, ভূমি আর নদী দখলের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাস আর দুর্নীতি প্রতিরোধে, নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায়, রাজনৈতিক অপরাধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অসংগতির বিরুদ্ধে বদলে যাওয়ার মিছিলে নাগরিকেরা কীভাবে সক্রিয় হন, জোট বাঁধেন। প্রথম আলো এবং বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যম এসব সংগ্রামে মানুষের পাশে আছে, থাকবে। সর্বশেষ, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও আমরা দেখলাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও শুভবুদ্ধির পক্ষে মানুষের ঐক্যের শক্তি কত সুন্দর, কত বিশাল হতে পারে।
প্রথম আলোর পাঠকেরাই আমাদের সাহায্য করেছিলেন, আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন বন্যাদুর্গত, শীতার্ত বা সিডর-আইলা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। না চাইতেই আপনারা অর্থ ও ত্রাণসাহায্য হাতে প্রথম আলোর কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন। আপনাদের সেই প্রেরণা থেকেই আমরা মাদকের বিরুদ্ধে, এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি অব্যাহতভাবে। হতদরিদ্র পরিবারের অদম্য মেধাবীদের পাশে রয়েছে প্রথম আলো। একইভাবে জড়িয়ে পড়েছি গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগসহ নানা সামাজিক-সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে। প্রথম আলোর পাঠকদের সংগঠন বন্ধুসভার তরুণ সদস্যরা সারা দেশে সারাক্ষণ সক্রিয় রয়েছেন বিচিত্র ইতিবাচক কাজে।
বদলে যাওয়া আর বদলে দেওয়ার এই কর্মযজ্ঞের মধ্যে আমরা কিন্তু সামান্যতম সময়ের জন্যও ভুলে যাই না আমাদের প্রধানতম কাজ—সত্য ও সুন্দর করে প্রতিদিন কাগজটাকে বের করা, বস্তুনিষ্ঠ খবর পেশাদারি দক্ষতার সঙ্গে আপনাদের সামনে হাজির করা, বিভিন্ন বিষয়ে মত-ভিন্নমত প্রকাশ করা, আপনার সময়টাকে আনন্দপূর্ণ ও আলোকিত করতে নানা রকমের আয়োজন প্রকাশ করে যাওয়া।
যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু আমাদের সমকালীন ইতিহাস থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষ আমাদের পথ দেখাচ্ছে। অন্যায় দেখে মাথা গুঁজে থাকার, মুখ গুঁজে থাকার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন সময় হয়েছে অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর। এখন সময় এসেছে একসঙ্গে আওয়াজ তোলার। সেটা যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, অপশাসনের বিরুদ্ধে, তেমনি নিজের মধ্যে থাকা উদ্যোগহীনতা, ভীরুতা ও আপসের বিরুদ্ধেও।
১৩ বছর আগে প্রথম আলো যখন আমরা বের করেছিলাম, আমাদের স্বপ্ন ছিল একটা সত্যিকারের ভালো কাগজ, বড় কাগজ করা। আমরা নিরপেক্ষ, সাহসী, স্বাধীন সাংবাদিকতা করব। সেই ব্রত থেকে আমরা সরে যাইনি, বরং আমরা নতুন আশায় নতুন স্বপ্নে আজ আরও বেশি করে প্রণোদিত বোধ করছি। আমরা প্রথম আলোর প্রচারসংখ্যা ৫ লাখ নয়, ৭ লাখ, ৯ লাখ ছাড়িয়ে যাবে, সেই স্বপ্ন দেখি।
নানা সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। শিক্ষার হার বাড়ছে। মেয়েরা এগিয়ে আসছেন। মানুষের আয়ু বেড়েছে, কমেছে দারিদ্র্য। সামগ্রিক অর্থনীতির রেখাও ঊর্ধগামী হয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, অদূর ভবিষ্যতে এই প্রচারসংখ্যা অর্জন অসম্ভব কোনো স্বপ্ন নয়।
আমাদের আরেকটা বড় স্বপ্নের কথা আমরা আজ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই—বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে; গণতান্ত্রিক, সহনশীল ও উদার হবে—সব মিলিয়ে গড়ে উঠবে একটা আলোকিত বাংলাদেশ। একটা উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বপরিমণ্ডলে গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে আমাদের স্বদেশ। শিক্ষা-দীক্ষা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য—সর্বত্র আমরা এগিয়ে যাব। স্বপ্ন না থাকলে আমরা এগোব কী করে? নানা দুঃসংবাদ সত্ত্বেও স্বপ্নের কথাই আমরা বলব। আর, এ দেশের লড়াকু গণতন্ত্রপ্রিয় শুভবাদী মানুষই আমাদের স্বপ্ন সফল করে তুলবে।
আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যার ৮৮ পৃষ্ঠাজুড়ে প্রকাশিত লেখাগুলোর মাধ্যমে আমরা সেই স্বপ্নই রচনা করতে চেয়েছি। আমরা বলতে চাই, আসুন, মাথা উঁচু করে বাঁচি। আসুন, একটা স্বপ্নময় সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি প্রিয় স্বদেশের জন্য। সবাই মিলে বদলে দিই আমাদের বর্তমানকে, আলোকিত করে তুলি আমাদের ভবিষ্যৎকে।
No comments