ভোট চুরির জন্য খালেদা জিয়া না’গঞ্জে সেনা চেয়েছিলেন : শেখ হাসিনা

যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া মাঠে নেমেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাসিক নির্বাচনে তারা সেনাবাহিনী চেয়েছিলেন। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দরকার কি? খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী যেন ভোট ‘চুরি’ করে তাদের জিতিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীকে কেন তিনি ভোট চুরির কাজে ব্যবহার করতে চান? সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় নির্বাচনের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে মাঝরাতে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন।


এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসাবেন—এ আশায় তিনি ক্ষমতায় থাকতে ৯ জনকে ডিঙ্গিয়ে জেনারেল মইনকে সেনাপ্রধান করলেন। কিন্তু এটা করেও তার শেষ রক্ষা হলো না। আজ কোন আশায় আবার সেনার কথা বলা হচ্ছে।
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে দলের আলোচনায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আমাদের দুজন প্রার্থীর একজন এক লাখের ওপর ভোট পেয়েছেন। আরেকজন পেয়েছেন লাখের কাছাকাছি। আর তার (খালেদা জিয়ার) প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৭শ’ ভোট। তার ক্যান্ডিডেটের এত দুরবস্থা হলো কেন? নিজ দলের প্রার্থীর ভোটের অবস্থা দেখে বেগম জিয়ার চেতনা আসা উচিত মন্তব্য করেন। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন নাসিক নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছিল। ওই বৈঠকে সেনাবাহিনীর কোনো প্রতিনিধিকে তো ডাকা হয়নি। পরে হঠাত্ করে সেনা মোতায়েনের জন্য চিঠি দেয়া হলো। সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারপ্রধানের নির্দেশ ছাড়া সেনাবাহিনীর ব্যারাকের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন যা যা চেয়েছে, তার সবরকম ব্যবস্থাই করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটেনি।
টকশোতে আলোচনাকারীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০০১ সালের পর এমএ সাইদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে তিনি নিজেই সরাসরি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীকে (বেগম জিয়া) দু’তিনবার সেনা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন কিন্তু তখন সেনা মোতায়েন করা হয়নি। সেটা কি তিনি (বেগম জিয়া) ভুলে গেছেন? আজ যারা সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলে এত চেঁচাচ্ছেন, তখন তো কেউ সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলে চিত্কার করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তিনি (বেগম জিয়া) যে মাঠে নেমেছেন, জনগণ তা গ্রহণ করেনি। জনগণের জবাব তিনি ওই নির্বাচনে পেয়ে গেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে দৃঢ়তা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই এ বিচারের পক্ষে রায় দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, রামেন্দু মজুমদার, এমএ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।
এদিকে গতকাল নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ জেল হত্যা দিবস পালন করেছে। এ উপলক্ষে সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদসহ জাতীয় নেতাদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে গণরায় দিয়েছে। দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই এ বিচার চায়। এটা এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে মানুষ অভিশাপ থেকে মুক্তি পান। এ বিচার করে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করতে হবে।
বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী করেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং ২১ আগস্টের খুনিদের বাঁচাতে তিনি মাঠে নেমেছেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, তা তার (বেগম জিয়ার) পছন্দ নয়। মানুষ অশান্তিতে থাকলে তার ভালো লাগে। কারণ মানুষ অশান্তিতে থাকলে তিনি শান্তিতে থাকেন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সবার আগে সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত হেনেছেন। হাজার হাজার সেনাসদস্যকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে হত্যা করেছেন। তার আমলে সেনাবাহিনীতে ১৮ বার ক্যু হয়েছে। ওই ক্যুতে শেষ পর্যন্ত জিয়া নিজেও নিহত হন। তারপর থেকে হত্যা-ক্যুর রাজনীতি চলতে থাকে। আমি ১৯৮১ সালে দেশে এসে প্রথম এর প্রতিবাদ করি। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সংগ্রাম করি।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার স্ত্রী ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির হাতে রক্তেভেজা পতাকা তুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেন। জঙ্গিদের মদত দিয়েছেন। আজ সেই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তিনি মাঠে নেমেছেন।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে গ্রেনেড হামলা হতে পারে না।
বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, তাদের রক্তের পিপাসা এখনও মেটেনি। পিপাসা মেটাতে তারা একের পর এক মানুষ হত্যা, খুনখারাবি চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য এসব অন্যায়ের বিচার করতেই হবে।
নাসিক নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শতকরা সত্তর শতাংশ ভোট পড়েছে। মানুষ উত্সবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়—নারায়ণগঞ্জই তার প্রমাণ।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দাবি করেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সম্পদ আর ভোট চুরি করতে ক্ষমতায় আসে না। জনগণের ভোটের অধিকার যাতে জনগণের নিজের হাতে থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমরা ক্ষমতায় আসি। আমরা ক্ষমতায় থাকলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে মানুষকে প্রতিটি দিন আতঙ্কে কাটাতে হয়।
বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের রক্ষায় তিনি এখন মাঠে নেমেছেন। কিন্তু তিনি তাদের রক্ষা করতে পারবেন না। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই।
সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সঙ্গিনের খোঁচায় পবিত্র সংবিধান অপবিত্র করা হয়েছে। আমরা সেই সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জনগণের ক্ষমতায়ন ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে কেউ যাতে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেই রক্ষাকবচ সংবিধানে যুক্ত করেছি।
তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, লুটেরা, জঙ্গিবাদের মদতদাতা, যুদ্ধাপরাধীরা আর যাতে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, তার জন্য জনগণকেই সজাগ থাকতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে যার যার ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.