এমিলি ফিরলেন, এনামুল নন

কিছুদিন আগে তাঁর মুখে ছিল এনামুলের মুগ্ধতার গল্প। সেই গল্পের ইতি টেনে সবাইকে চমকে দিয়েছেন নতুন করে এমিলি অধ্যায় শুরু করে। অভিজ্ঞ এ স্ট্রাইকার এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ছয়জনকে রেখে কাল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ২৬ জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছেন নিকোলা ইলিয়েভস্কি।বড় অদ্ভুত বাংলাদেশের এ মেসিডোনিয়ান কোচ। তাঁর মতিগতি আন্দাজ করা বড় কঠিন। ভালো-মন্দের বিবেচনা বোধটাও মিলতে দেন না আর দশজনের সঙ্গে। দিন পনেরো আগে তিনি হুট করে এনামুল হককে ডাকেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে।


দেখেশুনে বেশ খুশি, যেন এ রকম এক স্ট্রাইকারকেই খুঁজছিলেন কোচ। জাতীয় দলের বাইরে থাকা এনামুল হকের ব্যাপারে কোচের মুখে গুণকীর্তন শুনে সবার ধারণা জন্মেছিল, এ স্ট্রাইকার ফিরছেন জাতীয় দলে। কিন্তু পরশু তাঁর ফেরা নাকচ করে দিলেন কোচ ভারী শরীরের কারণে, 'তার শরীরের ওজন বেড়ে গেছে আর গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে মাঝেমধ্যে মাত্র ১০-১৫ মিনিট করে খেলেছে। এ রকম ফুটবলার জাতীয় দলে নেওয়া যাবে না।'
একেবারে হিসাবের বাইরে গিয়ে নিয়েছেন জাহিদ হাসান এমিলিকে। অবশ্যই বড় চমক! গত ২০ জুলাই জাতীয় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মানিকগঞ্জে খেপ খেলতে যাওয়ার অপরাধে দুই স্ট্রাইকার এমিলি ও মিঠুন গত তিন মাস ফুটবলাঙ্গনে কাটিয়েছেন ব্রাত্য হয়ে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে একই অবস্থা হয়েছে মিডফিল্ডার জাহিদ হোসেনেরও। তাঁদের প্রসঙ্গ উঠলেই কোচ বলতেন, 'ধরে নাও, তারা লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে।' সেই তিনিই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে অবিশ্বাস্যভাবে গ্রিন কার্ড দেখালেন এমিলিকে! 'তাকে আসলে আমার দরকার। স্ট্রাইকিং জোনে এমিলির মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দরকার, তার পায়ে ড্রিবল আছে, মাথায় বুদ্ধি আছে'_এই হলো কোচের সনদ, গত জুলাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে ঢাকায় প্রথম গোলদাতার জন্য। সুবাদে এ অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার অন্তর্দহন শেষ করে আগামী ডিসেম্বরে দিলি্লতে অনুষ্ঠেয় সাফ ফুটবলের স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। সুযোগ থাকলে আরেক স্ট্রাইকার মিঠুন চৌধুরীকেও ফিরিয়ে আনতেন, আনছেন না আক্রমণভাগে বাঁ দিকে কোচের হাতে কিছু ভালো বিকল্প থাকায়। সুতরাং এবার না হলেও আগামীতে হতে পারে, বন্ধ দুয়ার যে খুলে গেছে এমিলিকে দিয়েই। তবে জাহিদের জন্য এখনই নয়, শৃঙ্খলার ব্যাপারে কঠোর ইলিয়েভস্কি।
মিঠুন ও জাহিদ ছাড়াও গত জুলাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশ দল থেকে বাদ পড়েছেন ওয়ালি ফয়সাল, জিয়া, মোনায়েম খান রাজু ও মোহাম্মদ রবিন। প্রথম তিনজন ইনজুরিতে আর প্র্যাকটিসে দেরি করে ভাগ্য-বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন রবিন। এসব শূন্যস্থান পূরণের জন্য নিজের হাতে গড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে প্রমোশন দিয়েছেন ছয়জনকে। তাঁরা হলেন ডিফেন্ডার রায়হান ও তপু, মিডফিল্ডার শাহেদ এবং ফরোয়ার্ড লাইনে ওয়াহেদ, মালেক ও অনিক। বাংলাদেশ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টের বাছাই পর্ব পেরোতে না পারলেও কোচ বরাবরই এ দল নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কারণ দলটা স্ট্র্যাটেজি মেনে খেলতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে। ডাক পাওয়া ওই পাঁচজন হলো কোচের চোখে সেরা, 'তারাই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের আসল ফুটবলার। তাদের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে জাতীয় দলকে আরো শক্তিশালী করবে। তবে শাহেদ ও মালেকের ভালো সম্ভাবনা আছে মূল একাদশে জায়গা করে নেওয়ার।' এ ছাড়াও বেশ কিছুদিন পর জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে আবার জায়গা করে নিয়েছেন ইমন বাবু, মোবারক ও ইয়ামিন মুন্না।
প্রাথমিক দলের প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে। আজ প্রথম প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলবে তারা শেখ জামাল ধানমণ্ডির সঙ্গে। তবে কোচ চাইছেন বিদেশি শক্তিশালী দলের মুখোমুখি হতে। বাফুফে চেষ্টা করছে। ওই ম্যাচগুলোতে নাকি বেরিয়ে আসবে দলের খুঁত। তারপর সেগুলো সারিয়ে ইলিয়েভস্কি তৈরি করবেন সপ্তম সাফ ফুটবলের জাতীয় দল।

২৬ সদস্যের প্রাথমিক দল
২৬ সদস্যের প্রাথমিক দল : মামুন খান, বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, শহীদুল আলম সোহেল, নাসিরুল ইসলাম নাসির, তপু বর্মণ, সুজন, মামুন মিয়া, আরিফুল ইসলাম, রায়হান হাসান, রেজাউল করিম, ইয়ামিন মুন্না, প্রাণতোষ দাস, মেজবাবুল হক মানিক, ইমন বাবু, শাহেদুল আলম, মামুনুল ইসলাম, আশরাফ মাহমুদ লিঙ্কন, আবদুল বাতেন কোমল, মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, শাকিল আহমেদ, আতিকুর রহমান মিশু, তৌহিদুল আলম, ওয়াহেদ আহমেদ, অনিক, আবদুল মালেক, জাহিদ হাসান এমিলি।

No comments

Powered by Blogger.