জেলহত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী-যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা থেকে খালেদা জিয়ার সরে আসা উচিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচনই প্রমাণ করে, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে খালেদা জিয়ার অবস্থান জনগণ গ্রহণ করেনি। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা থেকে তার সরে আসা উচিত। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী 'ভোট চুরি' করে তার প্রার্থীকে জিতিয়ে দেবে। সেখানে সেনা মোতায়েন না হওয়ায় সংবিধানের লঙ্ঘন কিংবা ব্যত্যয় হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, জাতির জনকের প্রতিকৃতিসহ ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, পবিত্র ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মোনাজাত ও আলোচনা সভাসহ দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই জন প্রার্থীর মধ্যে একজন বিজয়ী ও আরেকজন দ্বিতীয় হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ১ লাখ ৮০ হাজার ও আরেকজন ৭৮ হাজার ভোট পেয়েছেন। অথচ তার (খালেদা জিয়া) প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৭শ' ভোট। ওই নির্বাচনে জনগণের জবাব তিনি পেয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তার প্রার্থীর এ দুরবস্থ্থা হলো কেন? ভোটের এ
অবস্থা দেখে খালেদা জিয়ার চেতনা আসা উচিত। উনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছেন। জনগণ তা গ্রহণ করেনি। এটা দেখে তিনি যেন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চিন্তা ছেড়ে দেন।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে কী এমন ঘটনা ঘটল যে, সেনা মোতায়েন করতে হবে? সেনা মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকেও হঠাৎ চিঠি দিয়ে দেওয়া হলো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন যে বৈঠক করল, সেখানে তো সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিকে ডাকেনি কিংবা আলোচনাও করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা সরকারপ্রধান সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকেন। সরকারপ্রধানই সিদ্ধান্ত নেবেন সেনাবাহিনী ব্যারাকের বাইরে যাবে কি-না। কোথাও সেনা মোতায়েন করতে হলেও তার অনুমতি নিতে হয়। এমন একটি সময় নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ব্যস্ত ছিলেন, দেশের বাইরে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন টক শোসহ বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অনেককে টক শোতে দেখি_ কেন সেনা মোতায়েন হলো না তা নিয়ে যেন টিভি ভেঙে ফেলছেন।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় মাঝরাতে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। খালেদা জিয়া আশা করেছিলেন, সেনাবাহিনী এসে 'ভোট চুরি' করে তার প্রার্থীকে জিতিয়ে দেবে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব কি ভোট চুরি করা? তিনি কেন সেনাবাহিনীকে ভোট চুরির কাজে ব্যবহার করতে চান? তিনি বলেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসাবেন_ এ আশায় খালেদা জিয়া এর আগেও ক্ষমতায় থাকতে ৯ জনকে ডিঙিয়ে জেনারেল মইনকে সেনাপ্রধান করলেন। ইয়াজউদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ও ফখরুদ্দীনকে প্রধান উপদেষ্টা করা হলো। তারা তো তাকে ক্ষমতায় আনতে পারেননি। এগুলো করেও উনার শেষ রক্ষা হলো না। আজ আবার কোন আশায় তিনি সেনাবাহিনীর কথা বলছেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন পরিচালনায় সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের নির্বাহী সহযোগিতা দিয়েছে। পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য দেওয়া হয়েছে। সংবিধানেই বলা হয়েছে_ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় যা যা সহযোগিতা প্রয়োজন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে সেটাই দেবে। সরকার সে অনুযায়ীই কাজ করেছে। কাজেই সেখানে সেনা মোতায়েন না করায় সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটেনি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২০০৩ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে এমএ সাঈদ নিজেই সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সেনা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তখন সেনা মোতায়েন করা হয়নি। সেটা কি তারা ভুলে গেছেন? আজ যারা সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলছেন, তখন তো কেউ এ কথা বলে চিৎকার করেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে চেয়েও পারেননি। যুদ্ধাপরাধী ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদেরও তিনি রক্ষা করতে পারবেন না। বাংলার মাটিতে এদের বিচার হবেই।
বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের রক্তের পিপাসা এখনও মেটেনি। পিপাসা মিটাতে তারা একের পর এক মানুষ হত্যা ও খুনখারাবি চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য এসব অন্যায়ের বিচার করতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সবার আগে সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত হেনেছেন। দেশকে খুনিদের রাজত্বে পরিণত করেছেন। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছেন। জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির হাতে রক্তেভেজা পতাকা তুলে দিয়েছেন।
সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সঙ্গিনের খোঁচায় পবিত্র সংবিধান অপবিত্র করা হয়েছে। আমরা সেই সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জনগণের ক্ষমতায়ন ফিরিয়ে এনেছি। ভবিষ্যতে কেউ যেন জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, তার রক্ষাকবচও সংবিধানে যুক্ত করেছি।
দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটেরা-জঙ্গিবাদের মদদদাতা, যুদ্ধাপরাধীরা আর যেন জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, তার জন্য জনগণকেই সজাগ থাকতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে যার যার ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে। সরকার-প্রতিশ্রুত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক, সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার পূরণেও জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এবং আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
জেলহত্যা দিবস পালিত :সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের জেলহত্যা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং পরে বনানী গোরস্তানে জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে দলীয় প্রধান হিসেবে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে বনানী কবরস্থানে পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতেও অংশ নেন তিনি। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ মন্ত্রিপরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা তার সঙ্গে ছিলেন।
পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন সেখানে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছে।
চার নেতা হত্যাকারীর বিচার এ বছরই শুরু হবে :সৈয়দ আশরাফ
বনানী কবরস্থানে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বহু প্রতীক্ষিত জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার এ বছরই শুরু হবে। ইতিমধ্যে এ বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এ বিচার শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জেলহত্যার শিকার সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জেলহত্যার বিচার কিংবা তদন্ত করতে আলাদা কমিশনের দরকার নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় চার নেতা হত্যার বিচারও হবে।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বিচার দেশের জনগণই করবে। লিবিয়ায় গাদ্দাফি নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে এই মন্ত্রী বলেন, গাদ্দাফিও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার বিচার সে দেশের জনগণ করেছে।
আরও কর্মসূচি :দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ 'জেলহত্যা দিবস ও জাতীয় চার নেতা' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। দলীয় সভাপতি এমএ জলিলের সভাপতিত্বে সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এমএ করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
চেতনায় একাত্তর ফাউন্ডেশন চার নেতা হত্যার বিচার দাবি ও তাদের স্মরণে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত শোভাযাত্রা করেছে। শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে গোলাম কুদ্দুছ, নিশান সাবের প্রমুখ বক্তৃতা করেন। বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পথনাটক ও গণসঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই জন প্রার্থীর মধ্যে একজন বিজয়ী ও আরেকজন দ্বিতীয় হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ১ লাখ ৮০ হাজার ও আরেকজন ৭৮ হাজার ভোট পেয়েছেন। অথচ তার (খালেদা জিয়া) প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৭শ' ভোট। ওই নির্বাচনে জনগণের জবাব তিনি পেয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তার প্রার্থীর এ দুরবস্থ্থা হলো কেন? ভোটের এ
অবস্থা দেখে খালেদা জিয়ার চেতনা আসা উচিত। উনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছেন। জনগণ তা গ্রহণ করেনি। এটা দেখে তিনি যেন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চিন্তা ছেড়ে দেন।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে কী এমন ঘটনা ঘটল যে, সেনা মোতায়েন করতে হবে? সেনা মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকেও হঠাৎ চিঠি দিয়ে দেওয়া হলো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন যে বৈঠক করল, সেখানে তো সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিকে ডাকেনি কিংবা আলোচনাও করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা সরকারপ্রধান সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকেন। সরকারপ্রধানই সিদ্ধান্ত নেবেন সেনাবাহিনী ব্যারাকের বাইরে যাবে কি-না। কোথাও সেনা মোতায়েন করতে হলেও তার অনুমতি নিতে হয়। এমন একটি সময় নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ব্যস্ত ছিলেন, দেশের বাইরে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন টক শোসহ বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অনেককে টক শোতে দেখি_ কেন সেনা মোতায়েন হলো না তা নিয়ে যেন টিভি ভেঙে ফেলছেন।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় মাঝরাতে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। খালেদা জিয়া আশা করেছিলেন, সেনাবাহিনী এসে 'ভোট চুরি' করে তার প্রার্থীকে জিতিয়ে দেবে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব কি ভোট চুরি করা? তিনি কেন সেনাবাহিনীকে ভোট চুরির কাজে ব্যবহার করতে চান? তিনি বলেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসাবেন_ এ আশায় খালেদা জিয়া এর আগেও ক্ষমতায় থাকতে ৯ জনকে ডিঙিয়ে জেনারেল মইনকে সেনাপ্রধান করলেন। ইয়াজউদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ও ফখরুদ্দীনকে প্রধান উপদেষ্টা করা হলো। তারা তো তাকে ক্ষমতায় আনতে পারেননি। এগুলো করেও উনার শেষ রক্ষা হলো না। আজ আবার কোন আশায় তিনি সেনাবাহিনীর কথা বলছেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন পরিচালনায় সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের নির্বাহী সহযোগিতা দিয়েছে। পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য দেওয়া হয়েছে। সংবিধানেই বলা হয়েছে_ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় যা যা সহযোগিতা প্রয়োজন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে সেটাই দেবে। সরকার সে অনুযায়ীই কাজ করেছে। কাজেই সেখানে সেনা মোতায়েন না করায় সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটেনি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২০০৩ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে এমএ সাঈদ নিজেই সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সেনা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তখন সেনা মোতায়েন করা হয়নি। সেটা কি তারা ভুলে গেছেন? আজ যারা সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলছেন, তখন তো কেউ এ কথা বলে চিৎকার করেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে চেয়েও পারেননি। যুদ্ধাপরাধী ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদেরও তিনি রক্ষা করতে পারবেন না। বাংলার মাটিতে এদের বিচার হবেই।
বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের রক্তের পিপাসা এখনও মেটেনি। পিপাসা মিটাতে তারা একের পর এক মানুষ হত্যা ও খুনখারাবি চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য এসব অন্যায়ের বিচার করতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সবার আগে সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত হেনেছেন। দেশকে খুনিদের রাজত্বে পরিণত করেছেন। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছেন। জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির হাতে রক্তেভেজা পতাকা তুলে দিয়েছেন।
সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সঙ্গিনের খোঁচায় পবিত্র সংবিধান অপবিত্র করা হয়েছে। আমরা সেই সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জনগণের ক্ষমতায়ন ফিরিয়ে এনেছি। ভবিষ্যতে কেউ যেন জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, তার রক্ষাকবচও সংবিধানে যুক্ত করেছি।
দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটেরা-জঙ্গিবাদের মদদদাতা, যুদ্ধাপরাধীরা আর যেন জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, তার জন্য জনগণকেই সজাগ থাকতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে যার যার ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে। সরকার-প্রতিশ্রুত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক, সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার পূরণেও জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এবং আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
জেলহত্যা দিবস পালিত :সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের জেলহত্যা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং পরে বনানী গোরস্তানে জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে দলীয় প্রধান হিসেবে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে বনানী কবরস্থানে পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতেও অংশ নেন তিনি। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ মন্ত্রিপরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা তার সঙ্গে ছিলেন।
পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন সেখানে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছে।
চার নেতা হত্যাকারীর বিচার এ বছরই শুরু হবে :সৈয়দ আশরাফ
বনানী কবরস্থানে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বহু প্রতীক্ষিত জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার এ বছরই শুরু হবে। ইতিমধ্যে এ বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এ বিচার শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জেলহত্যার শিকার সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জেলহত্যার বিচার কিংবা তদন্ত করতে আলাদা কমিশনের দরকার নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় চার নেতা হত্যার বিচারও হবে।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বিচার দেশের জনগণই করবে। লিবিয়ায় গাদ্দাফি নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে এই মন্ত্রী বলেন, গাদ্দাফিও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার বিচার সে দেশের জনগণ করেছে।
আরও কর্মসূচি :দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ 'জেলহত্যা দিবস ও জাতীয় চার নেতা' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। দলীয় সভাপতি এমএ জলিলের সভাপতিত্বে সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এমএ করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
চেতনায় একাত্তর ফাউন্ডেশন চার নেতা হত্যার বিচার দাবি ও তাদের স্মরণে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত শোভাযাত্রা করেছে। শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে গোলাম কুদ্দুছ, নিশান সাবের প্রমুখ বক্তৃতা করেন। বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পথনাটক ও গণসঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।
No comments