ঈদের ছুটি দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত আজ
ঈদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি দ্বিগুণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় নেয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হতে পারে। তবে বিষয়টি মন্ত্রিসভার আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়নি বলে জানা গেছে। প্রস্তাব অনুসারে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাৎসরিক ২০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি থেকে ৬ দিন কেটে নিয়ে দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে ৩ দিন করে যুক্ত করে ঈদের ছুটি বৃদ্ধি করা হবে। এ ছুটির সঙ্গে কাউকে ঐচ্ছিক ছুটি দেয়া হবে না। এছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীরা ঈদের ছুটি ভোগ করে বিধায় তাদের প্রধান দুইটি ধর্মীয় উৎসবে সরকারি ছুটির সঙ্গে দু’দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটি দেয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সোমবার প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকেই নেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ঈদের ছুটির সময় যানবাহনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ, দুর্ঘটনা বৃদ্ধিসহ দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পরবর্তী ২-১ দিন কর্মচারীদের উপস্থিতি কম থাকে। তা সত্ত্বেও অফিসের ইউটিলিটি সার্ভিস, লিফট, গাড়ি চালু রাখতে হয়। ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও প্রয়োজনীয় জিনিসের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। এজন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর ও আজহার তিন দিনের ছুটির সঙ্গে নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন রেখে বাকি ৬ দিন দুই ঈদের সঙ্গে তিন দিন করে সমন্বয় করা হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা ঈদের ছুটি ভোগ করে বিধায় তাদের প্রধান দুইটি ধর্মীয় উৎসবের সরকারি ছুটির সঙ্গে দু’দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটি দেয়া হবে। ফলে বিভিন্ন পর্বের জন্য বিদ্যমান ছুটির ভারসাম্য বজায় থাকবে। এতে যানবাহনের ওপর চাপ, যানজট ও দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ছুটি যেন আরও দীর্ঘায়িত না হয়, সেজন্য দুই ঈদের সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করারও প্রস্তাব করা হয় সারসংক্ষেপে। এর আগে ৬ জুন ঈদের ছুটি দ্বিগুণ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবে সম্মতি না দিয়ে এর সঙ্গে অন্য ধর্মীয় উৎসবের ছুটি বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রস্তাব পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৬ বা ২৭ জুন বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তবে ২৬ জুন ঈদ ধরে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। ঈদের আগে সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ অফিস ২২ জুন। ২৩ জুন শবেকদর। ২৪ জুন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি, ২৫ থেকে ২৭ জুন ঈদের ছুটি এবং মাঝে ২৮ ও ২৯ জুন অফিস খোলা। ৩০ জুন শুক্রবার ও ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। অর্থাৎ ২৮ ও ২৯ জুন অফিস বন্ধ থাকলে ২৩ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৯ দিন ছুটি কাটিয়ে ২ জুলাই থেকে অফিস শুরু হবে। গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের ছুটি বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত বছর ঈদের ছুটি বাড়িয়ে তা আবার সাপ্তাহিক ছুটি শনিবারের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। তখন অনেকেই বদলি ছুটির পরিবর্তে নৈমিত্তিক ছুটির সঙ্গে সরকারি ছুটি সমন্বয়ের তাগিদ দেন। বিশ্বের অনেক দেশেই ধর্মীয় বা জাতীয় উৎসবে দীর্ঘ ছুটি দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ঈদে ছুটি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মাত্র তিন দিন ছুটি থাকায় একসঙ্গে প্রচুর লোক ঢাকা ও বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঘরমুখো মানুষ নানা হয়রানির মুখে পড়ে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইনোভেশন টিম থেকে ঈদের ছুটি দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়। প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে ঈদুল ফিতরের ছুটি থাকে সাত দিন। ঈদুল আজহার ছুটি থাকে ১০ দিন। চীনে বসন্ত উৎসবে সরকারি ছুটি থাকে টানা সাত দিন। অক্টোবর মাসেও ছুটি আছে এক সপ্তাহের। মালয়েশিয়া, ব্রাজিলসহ অনেক দেশেই দুই ছুটির মাঝের কর্মদিবসগুলোকে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
No comments