কদরের রাত্রি নামুক আমলের জায়নামাজে
চলছে নাজাতের শেষ দশক। এসব দিনে আল্লাহর অনুগত বান্দারা পাবে মুক্তির সুসংবাদ। বান্দার সব ধরনের পাপ পঙ্কিলতা দূর করে দেবেন মহান আল্লাহ। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দেয়া হবে কবরবাসীকে। এটা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তার বান্দার জন্য বিশেষ করুণা। তবে শুধু মুক্তিই নয়, নাজাতের দিনগুলোতে আরও বিশেষ নিয়ামত রয়েছে। শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের কারণে প্রতিটি বিজোড় রাতেরই বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তবে লাইলাতুল কদরের কোনো নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা করা হয়নি। এটা আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য রহস্যময় করে শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাতে খোঁজার জন্য বলেছেন। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনা হল রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হল পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হল ঊনত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হল একুশ তারিখ। পঞ্চম হল তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের ওপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হল বেশি করে দোয়া করা খোদার দরবারে কান্নাকাটি করা। আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি? তিনি বললেন, বলবে- ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ তিরমিজি নবী করিম (সা.) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোনো রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরিফে মা আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সাহরি গ্রহণ করতেন।
লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর।’ (বোখারি) এবং রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা বেশি। যেমন হাদিসে এসেছে, ‘যে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে চায় সে যেন শেষ সাত দিনে তালাশ করে।’ (বোখারি ও মুসলিম) এ রাত হাজার মাসেরও চেয়েও উত্তম। আল্লাহতায়ালা এ রাতকে সব রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, [সূরা আদ-দুখান : ২-৩] কোরআনের অপর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আমি লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল করেছি। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল প্রভুর অনুমতিক্রমে মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে আসেন। এ রাতজুড়ে কল্যাণ বয়ে যায় সূর্যোদয় পর্যন্ত। (সূরা কদর) কোরআন হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের জন্য শুধু ২৭ তারিখের রাতের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয়। শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাতেই এ মহিমান্বিত রাতের সন্ধান করা উচিত। আল্লাহওয়ালাদের এ রাতের সন্ধানের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত আমল হচ্ছে ইতেকাফ করা। ইতেকাফ পালনকারীরা সুনিশ্চিতভাবেই লাইলাতুল কদরের সন্ধান পেয়ে থাকেন। কারণ তাদের প্রতিটি রাতই আমলের জায়নামাজে ভোর হয়।
লেখক : শাইখুল হাদিস, দারুল হাবিব মাদ্রাসা, মিরপুর ঢাকা
লেখক : শাইখুল হাদিস, দারুল হাবিব মাদ্রাসা, মিরপুর ঢাকা
No comments