মরুঝড় by মোহিত কামাল

আর শুনুন, আসার পূর্বে গোসল করে আসবেন। আজ থেকে প্রতিদিন খাওয়ার পর এবং শোয়ার পূর্বে ওরাল ওয়াশ নেবেন, টুথ ব্রাশ করবেন। মুখের হাইজিন রাখতে যে জানে না, সে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে গর্দব শ্রেণীর মানুষ।
নারীদের কাছে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জানেন? রুস্তম বলল, এখন জানলাম।
জেনে ভালো করেছেন। জীবনচর্চায় বিষয়টি ভুলে থাকলে চলবে না।
ভুলে যাব না। মনে রাখব। তবে বিষয়টি কেবলই কি পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য, নারীদের জন্য নয়?
হ্যাঁ। নারীদের জন্য আরও বেশি প্রয়োজন, নারীরা তা জানে। পুরুষরা জানে না।
ওঃ! ভাবল বধূকলি কি জানে বিষয়টি? মনে হয় জানে। ওর মুখ থেকে সুঘ্রাণ ছাড়া কখনো দুর্গন্ধ পাওয়া যায়নি। ভেবে বলল, ঠিকই বলেছেন, মেয়েরা সব জানে।
দুবাই কলি জবাব দিল, নতুন বোধের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। এখন বলুন বেডের ওপর বসবেন, নাকি বাথরুমের সার্কিট ঠিক করবেন?
সার্কিট কি সত্যি সত্যিই নষ্ট?
অবশ্যই নষ্ট। না হলে কি বেডরুমে ঢোকার অনুমতি পাওয়া যেত?
কেউ কি যাচাই করে দেখে গেছে? নষ্ট বলে সার্টিফাই করেছে?
হ্যাঁ। অন্দরমহলে নারী সিকিউরিটি রয়েছে। সরেজমিনে দেখেশুনে তারা রিপোর্ট পাঠিয়েছে। সার্কিট ঠিক হলো কিনা, আবার এসে দেখবে।
বাথরুমের দিকে এগোনোর পূর্বে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে একবার তাকাল শোয়ার জন্য নির্ধারিত খাটের দিকে। খাট না বলে এটাকে ছোটখাট একটা টেনিসকোর্ট বললে ভুল হবে না। এত সুন্দর খাট! বেডকাভার, বালিশ, মাথার দিকে ঝোলানো এত সুন্দর ঝোলানো পর্দা! পূর্বে দেখার সৌভাগ্য হয়নি রুস্তমের। মুহূর্তের জন্য চোখ ভরে তুলে নিল সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্রের প্রতিটি অণু। তারপর এগিয়ে গেল বাথরুমের দিকে।
সত্যি সত্যিই বাল্ব জ্বলছে না। নতুন বাল্ব লাগিয়েও জ্বালানো যায়নি বাল্ব।
কোথায় সমস্যা? সুইচবোর্ড খোলার জন্য বোর্ডের দিকে এগোতে গিয়ে নজরে এল পুরো বাথরুমের দৃশ্য :
বাথরুমের শাওয়ার জোন থেকে ড্রাই জোনের দূরত্ব কল্পনাতীত বেশি। ড্রাই জোনে দেয়াল জুড়ে বসানো রয়েছে বড় আয়না। ফলে বাথরুমের মধ্যে শ্বাসবদ্ধ অনুভব থাকার সুযোগ নেই, স্পেসটি এমনিতে বড়। আয়নার কারণে আরও বেশি এক্সটেনডেড মনে হচ্ছে। এমন পরিবেশে ড্রেস চেঞ্জ করাও সুবিধেজনক, বুঝতে অসুবিধে হল না রুস্তমের। শাওয়ার জোন আলাদা করার জন্য সলিড ওয়াল পার্টিশন নেই। হিঞ্জডডোরে ফাইবার গ্লাস ব্যবহারের কারণে আভিজাত্যের উগ্রতা নেই, আছে শান্তসৌম্য মন সঁপে দেওয়ার মতো নির্মল ঘরোয়া আকর্ষণ। বাথরুম দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেলেও শঙ্কা কেটে গেল না। ‘লাইট সংযোগ ঠিক করতে পারব তো?’ এমনি একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন গেঁথে আছে করোটিতে। প্রশ্ন ঠুকে থাকার কারণ হচ্ছে বৈদ্যুতিক ত্রুটি শর্টসার্কিটের জন্য ঘটেনি, উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ সংযোগে গোলযোগ তৈরি করলে সেই ত্রুটি সারাতে অনেক বেশি সময় লাগার কথা। সমস্যা খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকার কথা। ভাবনার চাকায় ঘুরতে থাকার কারণে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যাচ্ছে না রুস্তমের চেহারায়। টের পেয়ে দুবাই কলি বলল, বাথরুমে কেউ নজরদারি করতে গোপনে ফাঁদ পেতে নেই। ইজি হোন। কাজে ব্যর্থ হবেন না আপনি, নিশ্চিত থাকুন।
ব্যর্থ হব না, কীভাবে বুঝলেন?
কারণ, লাইনটি ডিসকানেক্ট করেছি আমি। সংযোগটাও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কানেক্ট করে দেব আমি। আপনার ব্যর্থতার সম্ভাবনা জিরো। আমার স্বার্থেই সফল হতে হবে আপনাকে। আপনাকে সফল দেখতে চাই আমি। ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।
আমার সফলতা দেখে আপনার কী লাভ?
কী লাভ, শোনার প্রয়োজন নেই আপনার। তবে শুনে রাখুন, আমি হচ্ছি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মালিক। সুইসব্যাংকে প্রতিমাসে আমার নামে কত টাকা জমা হচ্ছে, জানি না আমি। প্রতিমাসে বিভিন্ন ব্যবসা থেকে লাভের অঙ্ক অটোমেটিক ঢুকে যায় আমার এ্যাকাউন্টে। ওই এ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কেবল আমারই জানা। আমার সিগনেচারে পরিচালিত হয় এ্যাকাউন্ট। আমার ধনবান বাবা তার সব সন্তানের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন।
এতসব শোনাচ্ছেন কেন আমাকে? লোভ দেখাচ্ছেন? অসৎ কোনো কাজ করাতে প্ররোচিত করছেন?
সৎকাজের লোকের অভাব আছে?
পাল্টা প্রশ্ন শুনে ভয় পেয়ে গেল রুস্তম। অসৎ কাজ করা মানে আইন লঙ্ঘন করা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। এই দীক্ষার বটবৃক্ষের বীজ রোপিত হয়ে গেছে বুকের মাটিতে। সেই বটগাছের ছায়া দখল করে আছে দেশের কলি। দুবাই কলির জায়গা কোথায় সৎ ছায়ায়? অসৎ ছায়া পড়ুক নিজ জীবনে, চায় না সে। তবে দেশের কলি যদি অসৎ হয়, শৌর্যের সঙ্গে যদি সত্যি সত্যি জড়িয়ে যায়, শূন্য ছায়ায় কি বসবে দুবাই কলি? তেমন কোনো চিন্তা কি স্থান দেওয়া উচিত কল্পনায়?
উদিত চিন্তার উদগীরণে বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মন। নিজেকে প্রশ্ন করে, ‘লোভী হয়ে যাচ্ছি আমি?’
মানুষকে ডোবায় লোভ, জানে রুস্তম। অপ্সরী দুবাই কলির বেপরোয়া আচরণের মূল উদ্দেশ্য কী, এখনো খোলামেলা হয়নি। রহস্যের ঘূর্ণি-ক্রমশ বাড়ছে। আদিরস যে মূল বিষয় নয়, এখনো শিওর হতে পারছে না। এই মেয়ের আচরণের মূল শেকড় কোথায়? এত দুঃসাহসী হলো কেন সে? নানা প্রশ্নের ঝড় আবারও বেগবান হচ্ছে। ঝড় মাথায় নিয়ে শান্ত গলায় জানতে চাইল, আর কতক্ষণ থাকতে হবে আমায়? আর কী কী করতে হবে আমাকে?
যতক্ষণ আমি রাখব ততক্ষণ থাকবেন, অসুবিধা আছে?
আছে। আপনার ঘরে এতক্ষণ কেন কাটালাম, জবাবদিহী করতে হবে না আমাকে?
কতক্ষণ কাটালেন কেউ খোঁজ রাখবে না।
কখন ঢুকলাম, কখন বের হলাম, নোট থাকবে না গেটে?
থাকবে। থাকুক। তাতে ক্ষতি নেই। কেউ আপনাকে সন্দেহ করবে না। আমার সঙ্গে অবৈধ কিছু ঘটবে, কল্পনায়ও স্থান দেবে না কেউ?
কল্পনায় স্থান দেবে না কেন? আপনার কাজিন তো বাংলাদেশের আরেক রুস্তমের সঙ্গে ভেগে গেছে, বলেছিলেন। পূর্বের অভিজ্ঞতা দিয়ে মেপে দেখবে না কেউ বর্তমান রুস্তমের অন্য কোনো সংযোগের কথা?
যুক্তিটি ফেলে দেওয়ার মতো না। জানে দুবাই কলি, তবুও বলল, অন্য কোনো সংযোগ কী হতে পারে; অনুমান করতে পারছেন? প্রশ্ন করে খিলখিল করে হেসে ওঠে দুবাই কলি। হাসতে হাসতে সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে টুকটাক কাজ করে সুইচ টিপ দিল। বাথরুমের বাল্ব জ্বলে উঠেছে। দুবাই কলি বলল, আপনি সফল। বাল্ব জ্বালাতে পেরেছেন। পারেননি?
পারি। এখন আমি জ্বালাইনি। আপনি জ্বালিয়েছেন।
আমি যা জ্বালাতে পারি, মেয়ে হয়ে, ছেলে হয়ে পারেন না আপনি?
ডিসকানেক্টেড সুইচবোর্ড দেখান। চেষ্টা করে দেখি, পারি কিনা।
গুড। এই তো লাইনে এসেছেন। ধরুন আমার দেহে একটা সার্কিট-ব্রেক হয়েছে। ঠিক করতে পারবেন না সার্কিটটি?
প্রশ্নের গভীরতা অনুভব করে কেঁপে উঠল রুস্তম। অস্বাভাবিক প্রশ্নের ধার এবং শান অনুভব করে মনে নতুন প্রশ্নের উদয় হলো, মেয়েটি সুস্থ তো? দুর্গের জীর্ণ কেল্লার মতো চুরচুর করে ভেঙে যেতে থাকল নিজের অহংকার। সততার দেয়ালে ফাটল টের পেতে থাকল রুস্তম। ভেতরে ঘূর্ণায়মান লোভী দানবটি ক্রমাগতভাবে চাপ দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইল। লোভাতুর জ্যান্ত আকাক্সক্ষার গোপন ঘরে মশাল জ্বলে উঠল দপ করে। হঠাৎ মনে হলো মরে গেছে সেÑ শ্মশানেও জ্বলন্ত বাঁশের খোঁচা খাচ্ছে হঠাৎ পুড়তে শুরু করা নিজের শবদেহে।
নীরবতা ভেঙে দুবাই-কলি বলল, আমার তৃষিত বুকে লুকিয়ে আছে কিংবদন্তি বিষণœতা, বিষণœতার অপঘাতে নিভে যেতে পারে চারপাশের আলো, আমার শতভুজ সত্তার পাপড়ি ঝরে যেতে পারে বিকাশের পূর্বেই। এমন পরিস্থিতি হলে খুলে দেখবেন না দেহের সার্কিট? জ্বালিয়ে দেবেন না আমার অন্ধকার ঘর? অবৈধ পথে নয়, বৈধ পথে জীবনবাজি রেখে দাঁড়াবেন না আমার পাশে?
কলির প্রশ্ন শুনে, সমস্যার গভীরতা না বুঝেও, থেমে যেতে থাকল মনভুবনে বইতে থাকা উচ্ছৃঙ্খল ঝড়, খরস্রোতা খালে প্রায় ভাঙতে বসা সাঁকোটি আবার দাঁড়িয়ে গেল পূর্বের অবস্থানে, ফুঁসে ওঠা জল রূপ নিল শান্ত পুকুরে। উড়ে গেল মন-উঠোনে জমতে থাকা নির্লজ্জ ক্লেদ, জঞ্জাল। পরিচ্ছন্ন মনে সাহস নিয়ে বলল, দাঁড়াব। বৈধ পথে জীবনবাজি রেখে দাঁড়াব আমি আপনার পাশে।
ধন্যবাদ আপনাকে। দেখেই বুঝেছিলাম, পাশে দাঁড়াবেন আপনি। তাই আপনার পাসপোর্টটি প্রয়োজন আমার। আশা করি আগামী সপ্তাহে আবার আসবেন, পাসপোর্ট নিয়ে আসবেন। আসবেন তো? কী বলেন? দ্বিতীয় শর্তটিও পূরণ করবেন তো?
রুস্তম জবাব দিল, আসব। পূরণ করব।
সায় দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে টের পেল বুকের ঘরে বটগাছের শীতল ছায়া পালিয়ে গেছে। খরখরে রোদ্দুর জেগে উঠছে। ওই রোদ্দুরে কেউ বসে জিরোতে পারবে না, আশ্রয় নিতে পারবে নাÑআশ্রয়হীন হয়ে যাবে কি নিজেও? প্রশ্ন নিয়ে তাকাল বাথরুমের বাল্বের দিকে। আলো ছড়াচ্ছে বাল্ব। আলো ঝলমলে বাথরুমের শুকনো জোনের দেয়াল-আয়নায় পাশাপাশি ফুটে আছে রুস্তম আর দুবাই-কলি। চোখ নামিয়ে নিল আয়না থেকে। মনের মধ্যে নতুন ভাবনার মোচর টের পেল বধূকলি তবে দাঁড়াবে কোথায়? কোন ছায়ায়? শৌর্যকে ঘিরে কি নতুন ছায়ার আশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে সে?
আবারও মোচড় টের পাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে বুক। ভাঙা বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে দুবাই কলির সামনে।
দুবাই কলি হেসে উঠল। হাসির দাপট থেকে যেন প্রতিধ্বনিত হতে থাকল লক্ষ কলির হাসি...
রুমের বাইরে কেউ আসার সংকেত হচ্ছে ভিতরে। কে এল এখন! দুই নারী কেয়ারটেকার তো এখানে আসার কথা না অনুমতি ছাড়া। তবে কি এসেছেন আম্মিজান? প্রশ্নটি ধড়ফড়িয়ে উঠল বুকের ঘরে। বাথরুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে বাইরের করিডরের দিকে তাকাল কলি। দেখল লম্বা কেয়ারটেকার মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে সিগনাল-সুইচ অন করে। কাছে গিয়ে কলি প্রশ্ন করল, কী? কেন এসেছেন?
আম্মিজান আসবেন আপনার রুমে। জানাতে এলাম।
জানাতে নাকি সতর্ক করতে এসেছেন?
দুটোই।
অসতর্ক হওয়ার মতো কোনো কাজ হচ্ছে না আমার ঘরে। সতর্ক হওয়ারও প্রয়োজন নেই। আম্মিজানের হাউসগবর্নেন্সদের জানিয়ে দিন কথাটা। আমার ঘরে সাড়ে তিন হাত ভূমির আদলে টাচ দেওয়া রয়েছে। এ রকম মাটির ঘরে কোনো অন্যায় ঘটবে না, বুঝেছেন?
জি। বুঝেছি।
জানিয়ে দিন কথাটা।
জানিয়ে দেব।
ফিরে যাওয়ার পূর্বে দুবাই কলি বলল, যত ধরনের ফল দিয়ে ধনাঢ্য মেহমানদের আতিথিয়তা দেওয়া হয়, সব এ্যারেঞ্জ করে আনুন। লিভিং রুমের টেবিলে পরিবেশন করুন। আর সবচেয়ে উন্নতমানের খোরমা খেজুর দিতে ভুলবেন না। কথা শেষ করে রুস্তমের কাছে ফিরে এল কলি।
ঝড় উঠেছিল ঘরে। রুস্তমের মনে হয়েছিল ক্রাইম সিকিউরিটি দল ঢুকে পড়েছে অন্দরমহলে, ধরে নিয়ে গর্দান কর্তন করবে কিংবা শরীরের উর্ধাংশ মাটিতে পুঁতে ইট মেরে মেরে নিভিয়ে দেবে রক্তাক্ত জীবন প্রদীপ। চোখে ধোঁয়াশা লাগছে। ধোঁয়াশাচ্ছন্ন চোখে মনে হলো ভূত হয়ে ফিরে আসছে দুবাই কলি। মনে হলো আবার সার্কিট ব্রেক হয়েছে। কার? ঘরের বিদ্যুতবাতির ? নাকি দুবাই কলির দেহের? অন্ধকার মনে হচ্ছে চারপাশ। চক্কর খেয়ে মাথা ঘুরে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল রুস্তম।
মনোজগতের অন্ধকার ছিঁড়ে ঠিক এই সময় ভেসে এলো দুবাই কলির কণ্ঠস্বর, ভয়ের কিছু নেই। আম্মিজান আসছেন। সন্দেহের বশে নয়। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বিষয়ে খোঁজ নিতে আসছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলবেন হয়তবা, আসুন। লিভিং রুমে বসুন।
মনে হচ্ছিল ভূত হয়ে ফিরে আসছে কলি। কথা শুনে ভুল ভেঙে গেল। অন্ধকার ফুঁড়ে পালিয়ে গেল ভূত-ঝড়। তবে আম্মিজান আসার খবর শুনে এখানে এসে অকারণে খরচ করা সবুজ সময়টাকে ফিরে পেতে ইচ্ছা হলো না। ভয় জড়িত কণ্ঠে বলল, আমাকে কি কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে?
মুখোমুখি হতে হলে হবেন? পরীক্ষা দিতে ভয় পাচ্ছেন কেন? কোনো ধরনের নকল করেছেন? কলির হাতের আঙুল স্পর্শ করেছেন?
ঢোক গিলে বলল, না।
তাহলে পরীক্ষা দিন। ফেল করবেন না। পরীক্ষা দিলেও জিতবেন আপনি। আপনার জিত মানে আমারও জিত। অর্জন করবেন এ-গ্রেডের রেজাল্ট। তালগাছ আমারই থাকবে।
এবার রুস্তমের মনে হলো কাঁধে বন্দুক তাক করে ট্রিগারে আঙুল রেখে দাঁড়িয়ে আছে দুবাই কলি। আদিজলে ভাসা তার উদ্দেশ্য নয়; উদ্দেশ্য আহত রুস্তমের চিৎকার শোনা, রুস্তমকে রক্তাক্ত করে বিজয়োল্লাস করা।

ফলের ঝুড়ির দিকে তাকিয়ে আছে রুস্তম। খাচ্ছে না। হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে একটা খোরমা খেজুর। কলি হাতে তুলে নিয়েছে কাটা নাশপাতি লেবু। কলির হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল রুস্তম। মনে পড়ে গেল নিজেদের বাড়ির জঙ্গলে শরবতি লেবুর কথা। দেশের কলিও কি শরবতি লেবু হয়ে মনোরঞ্জন করছে, শৌর্যের আহারে পরিণত হয়েছে, এত ছোট ছেলে কি শুষে নিতে পারবে শরবতি লেবুর তাজা রস? নাকি দুবাই কলির মতো ঝড়ের তাণ্ডব বুকে নিয়ে শৌর্যও দেশের কলির দিকে তাক করেছে গুলিভরা পিস্তল? বুলেটের আঘাতে কি তবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে বধূকলির দেহ?
চমকে বাস্তবে ফিরে রুস্তম দেখল, দুবাই কলি দ্রুততার সঙ্গে মাথায় পরে নিয়েছে স্কার্ফ। অর্থাৎ মায়ের সামনে কমে যাবে তার দুরন্তপনা। বোঝার বাকি রইল না রুস্তমের।

বি.দ্র.- এ উপন্যাসটি বই হয়ে বেরিয়ে গেছে। তাই এখন থেকে এ পাতায় আর প্রকাশিত হবে না।

No comments

Powered by Blogger.