কবিতা উৎসব হতে পারে সম্প্রীতির সেতু by নুরুল করিম নাসিম
পৃথিবীর অন্য কোন দেশে কবিতা নিয়ে এত
মাতামাতি, এতটা পাগলামি এবং এ রকম উৎসব হয় কি-না আমার জানা নেই। সুনীলের
লেখা কবিতা সারা বিশ্বে কিংবা অন্য কবিদের লেখায়ও এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই।
অন্য কেউ এ বিষয়ে লেখেননি। সুনীল লিখেছেন, আমেরিকার আইওয়া কৃষি অঞ্চলে
বছরব্যাপী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কবিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, সেখানে
বছরব্যাপী ওয়ার্কশপ হয় কবি ও কবিতার ওপর, ব্যস এইভাবে হৈ হুল্লোরের ভেতর
দিয়ে কেটে যায় কবিতার দিন রাত্রি।
কিন্তু প্রতিবছর দু’দিন, কোন বছর তিনদিন কবিতা পাঠ, কবিতার ওপর সেমিনার, কবিতা আবৃত্তি, এসব কার্যক্রম বাংলাদেশই দেখা যায়। ভারতের বাংলাভাষী প্রদেশে কলকাতা আগরতলা, ত্রিপুরা, শিলচরে এরকাম বিশাল ও ব্যাপক কবিতা উৎসব হয় না বলেই শুনেছি। জাতীয় কবিতা উৎসব দীর্ঘ তিন দশক ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভাষা দিবস ফেব্রুয়ারির ১ম ও ২য় দিন। কোলকাতা থেকে ২০/২২ জন কবি, কখনও আরও বেশি, আমন্ত্রিত হয়ে ঢাকার এই কবিতা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন প্রতিবছর।
এক বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় এবং প্রতিবারই ছোটখাটো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সফলভাবে পুরোটা উৎসব উৎরে যায়। যে কোন সংগঠনে সমস্যা থাকে, বৈরী বাতাস বইতে থাকে কখনও কখনও। তাছাড়া সমালোচনা করার লোকের অভাব নেই। আমরা ভাল লাগাটা প্রথমে দেখতে পাই না, দেখতে চাইও না। খারাপ জিনিসগুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে ভালবাসি আমরা। যাইহোক, এবছর ১ ফেব্রুয়ারি ও ২ ফেব্রুয়ারি পাবলিক লাইব্রেরির পাশে উন্মুক্ত মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় কবিতা অনুষ্ঠান, ২০১৩। এবারের সেøাগান ছিল : কবিতা উৎসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।
প্রথম দিন শীতের উজ্জ্বল সোনালি রোদের সকালে ১০টায় শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
আমাদের দেশের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। এবারের বাইরে থেকে কোন প্রধান অতিথি ছিলেন না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তা নাহলে তাঁরই প্রধান অতিথির আসনটি অলঙ্কিত করার কথা ছিল।
র্যালি, পতাকা উত্তোলন ইত্যাকার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বাঙালীর অন্যতম কবিতা উৎসব শুরু হয়।
কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজি প্রথমে বক্তব্য রাখেন, তারপর বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার আসলাম সানী।
ভারতের বয়োজ্যেষ্ঠ কবি আশিষ সান্যাল ভারতীয় কবিদের পক্ষ থেকে চমৎকার সম্প্রীতিময় একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
প্রথম পর্ব শেষ হয় সাড়ে বারোটায়, অতঃপর শুরু হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। রাত দশটা প্রর্যন্ত অবিশ্রান্ত এই কবিতা পাঠ বেশ কয়েকটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি পর্বে একজন কবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি পর্বে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা ন্যূনতম ৪০/৪৫ জন তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত প্রবীণ কবিবৃন্দ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন দর্শকরা বেশ আনন্দে বসায়ে বিচিত্র সব কবিতা উপভোগ করেন।
যখন কবিতা পাঠ শেষ হয়ে যাচ্ছে, একটা মৃদু ককটেলের শব্দটি এস সির কাছে শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, মানুষ এখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের রুখে দাঁড়াতে শিখেছে।
শেষ পর্বে, কবিতার আবৃত্তির আয়োজন ছিল। দেশের নবীন-প্রবীণ বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান আবৃত্তিকার এতে অংশগ্রহণ করেন। এ পর্বে সভাপতি করেন মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্র পরিচালক নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
পরদিন, ২ ফেব্রুয়ারি, প্রাজ্ঞ ও তাৎপর্যময় একটি সেমিনার আয়োজন করা হয় সকাল ১০টায়। গতবারের মতো এবারও প্রায় শূন্য দর্শকের উপস্থিতিতে বেশ দেরিতে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে পেপার উপস্থাপন করেন, শিশুসাহিত্যিক সাংবাদিক আখতার হুসেন। কথা-সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরসহ অনেকে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় পর্বে আরেকটি সেমিনার, শুরু হয় ১টায়, সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান। বিকেলে আবার কয়েকটি পর্বে বিভক্ত সমাপনী কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান হয়। সবাই বেশ উপভোগ করেন এই বিদায়ী পর্বের কবিতাপাঠ।
সেদিন বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে একুশে বইমেলার বিকেলে ৩টায় উদ্বোধন হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধান অতিথি। জাতীয় কবিতা উৎসবে যে অসংখ্য কবি ভারত থেকে এসেছিলেন, গতবারের মতো এবারেও তারা শোকেসের মতো মঞ্চে শোভা পেয়েছেন, এদেশের তরুণ কবিদের সঙ্গে তাঁদের কোন আলাপ-পরিচয় সংলাপ বিনিময় ও আড্ডা হয়নি। আয়োজকরা নিজেদের নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন, ব্যবস্থাপনায়, চমৎকার যোগসূত্রতা ছিল না, জাতীয় পরিষদের কর্মী ও ভলান্টিয়ার সঙ্কট প্রকট ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলো কবিতা পরিষদের আয়োজকরা লক্ষ্য রাখলে অনুষ্ঠান ভাল ও সুন্দর হবে।
এত টাকা ব্যয় করে এমন একটি অনুষ্ঠান মাঠে মারা গেলে কবিতাপ্রেমী যে কেউর কাছে খারাপ লাগে। যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের অধিকাংশ গতবারেও এসেছে কবিতা পাঠের আসরে। প্রতিবছর নতুন কিছু প্রতিনিধিত্বমূলক কবিরা এলে আমাদের ভাল লাগবে। এবার একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেল, বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রবীণ নবীন ও প্রতিনিধিত্বমূলক কবিদের জাতীয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। আশাকরি আগামী অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে পরিপূর্ণতা দেবে।
কবিতা সম্প্রীতি ও সংযোগের সেতু হিসেবে আজকের এই সংঘাতময় সন্ত্রাসক্লান্ত পৃথিবীতে কবিদের ভেতর বিভাজন থাকতে নেই, সবাই সম্প্রীতি ও ভালবাসার আলোকে আলোকিত হয়ে উঠবে এটাই আমাদের কাম্য।
কিন্তু প্রতিবছর দু’দিন, কোন বছর তিনদিন কবিতা পাঠ, কবিতার ওপর সেমিনার, কবিতা আবৃত্তি, এসব কার্যক্রম বাংলাদেশই দেখা যায়। ভারতের বাংলাভাষী প্রদেশে কলকাতা আগরতলা, ত্রিপুরা, শিলচরে এরকাম বিশাল ও ব্যাপক কবিতা উৎসব হয় না বলেই শুনেছি। জাতীয় কবিতা উৎসব দীর্ঘ তিন দশক ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভাষা দিবস ফেব্রুয়ারির ১ম ও ২য় দিন। কোলকাতা থেকে ২০/২২ জন কবি, কখনও আরও বেশি, আমন্ত্রিত হয়ে ঢাকার এই কবিতা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন প্রতিবছর।
এক বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় এবং প্রতিবারই ছোটখাটো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সফলভাবে পুরোটা উৎসব উৎরে যায়। যে কোন সংগঠনে সমস্যা থাকে, বৈরী বাতাস বইতে থাকে কখনও কখনও। তাছাড়া সমালোচনা করার লোকের অভাব নেই। আমরা ভাল লাগাটা প্রথমে দেখতে পাই না, দেখতে চাইও না। খারাপ জিনিসগুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে ভালবাসি আমরা। যাইহোক, এবছর ১ ফেব্রুয়ারি ও ২ ফেব্রুয়ারি পাবলিক লাইব্রেরির পাশে উন্মুক্ত মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় কবিতা অনুষ্ঠান, ২০১৩। এবারের সেøাগান ছিল : কবিতা উৎসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।
প্রথম দিন শীতের উজ্জ্বল সোনালি রোদের সকালে ১০টায় শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
আমাদের দেশের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। এবারের বাইরে থেকে কোন প্রধান অতিথি ছিলেন না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তা নাহলে তাঁরই প্রধান অতিথির আসনটি অলঙ্কিত করার কথা ছিল।
র্যালি, পতাকা উত্তোলন ইত্যাকার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বাঙালীর অন্যতম কবিতা উৎসব শুরু হয়।
কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজি প্রথমে বক্তব্য রাখেন, তারপর বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার আসলাম সানী।
ভারতের বয়োজ্যেষ্ঠ কবি আশিষ সান্যাল ভারতীয় কবিদের পক্ষ থেকে চমৎকার সম্প্রীতিময় একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
প্রথম পর্ব শেষ হয় সাড়ে বারোটায়, অতঃপর শুরু হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। রাত দশটা প্রর্যন্ত অবিশ্রান্ত এই কবিতা পাঠ বেশ কয়েকটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি পর্বে একজন কবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি পর্বে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা ন্যূনতম ৪০/৪৫ জন তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত প্রবীণ কবিবৃন্দ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন দর্শকরা বেশ আনন্দে বসায়ে বিচিত্র সব কবিতা উপভোগ করেন।
যখন কবিতা পাঠ শেষ হয়ে যাচ্ছে, একটা মৃদু ককটেলের শব্দটি এস সির কাছে শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, মানুষ এখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের রুখে দাঁড়াতে শিখেছে।
শেষ পর্বে, কবিতার আবৃত্তির আয়োজন ছিল। দেশের নবীন-প্রবীণ বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান আবৃত্তিকার এতে অংশগ্রহণ করেন। এ পর্বে সভাপতি করেন মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্র পরিচালক নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
পরদিন, ২ ফেব্রুয়ারি, প্রাজ্ঞ ও তাৎপর্যময় একটি সেমিনার আয়োজন করা হয় সকাল ১০টায়। গতবারের মতো এবারও প্রায় শূন্য দর্শকের উপস্থিতিতে বেশ দেরিতে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে পেপার উপস্থাপন করেন, শিশুসাহিত্যিক সাংবাদিক আখতার হুসেন। কথা-সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরসহ অনেকে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় পর্বে আরেকটি সেমিনার, শুরু হয় ১টায়, সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান। বিকেলে আবার কয়েকটি পর্বে বিভক্ত সমাপনী কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান হয়। সবাই বেশ উপভোগ করেন এই বিদায়ী পর্বের কবিতাপাঠ।
সেদিন বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে একুশে বইমেলার বিকেলে ৩টায় উদ্বোধন হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধান অতিথি। জাতীয় কবিতা উৎসবে যে অসংখ্য কবি ভারত থেকে এসেছিলেন, গতবারের মতো এবারেও তারা শোকেসের মতো মঞ্চে শোভা পেয়েছেন, এদেশের তরুণ কবিদের সঙ্গে তাঁদের কোন আলাপ-পরিচয় সংলাপ বিনিময় ও আড্ডা হয়নি। আয়োজকরা নিজেদের নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন, ব্যবস্থাপনায়, চমৎকার যোগসূত্রতা ছিল না, জাতীয় পরিষদের কর্মী ও ভলান্টিয়ার সঙ্কট প্রকট ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলো কবিতা পরিষদের আয়োজকরা লক্ষ্য রাখলে অনুষ্ঠান ভাল ও সুন্দর হবে।
এত টাকা ব্যয় করে এমন একটি অনুষ্ঠান মাঠে মারা গেলে কবিতাপ্রেমী যে কেউর কাছে খারাপ লাগে। যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের অধিকাংশ গতবারেও এসেছে কবিতা পাঠের আসরে। প্রতিবছর নতুন কিছু প্রতিনিধিত্বমূলক কবিরা এলে আমাদের ভাল লাগবে। এবার একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেল, বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রবীণ নবীন ও প্রতিনিধিত্বমূলক কবিদের জাতীয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। আশাকরি আগামী অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে পরিপূর্ণতা দেবে।
কবিতা সম্প্রীতি ও সংযোগের সেতু হিসেবে আজকের এই সংঘাতময় সন্ত্রাসক্লান্ত পৃথিবীতে কবিদের ভেতর বিভাজন থাকতে নেই, সবাই সম্প্রীতি ও ভালবাসার আলোকে আলোকিত হয়ে উঠবে এটাই আমাদের কাম্য।
No comments