এসপ্তাহের সেরা বই- নিউইয়র্ক টাইমসের

জেমস পেটারসনের বই মানেই শ্বাসরুদ্ধকর কোন কাহিনীর আবর্তন। পাঠকের চিত্তে ভেসে ওঠে এ্যাকশন, রোমাঞ্চ ও রহস্যজট খোলার নিপুণ চিত্র। পাঠকের একাগ্রতা ধরে রাখে অবিরাম।
প্রাইভেট সিরিজের প্রতিটি বই-ই অর্জন করেছে অসম্ভব জনপ্রিয়তা, হয়েছে বেস্ট সেলার। এই বছরের শুরুতে জেমস পেটারসন হাজির হন ‘প্রাইভেট বার্লিন’ বইটি নিয়ে। যথারীতি বাজিমাত। বইটিতে রহস্য উদ্ধার, সমস্যা সমাধান, রোমাঞ্চ, এ্যাকশনের সাথে সাথে প্রাধান্য পেয়েছে ইতিহাস। স্নায়ুযুদ্ধ এবং বার্লিন দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার আগে ও পরে মানুষের জীবনধারা কেমন ছিল তা যেমন তুলে ধরা হয়েছে তেমনি এই দুটি ঘটনা মানুষের জীবনের ওপর কী রকম প্রভাব বিস্তার করেছিল তার আখ্যানও করা হয়েছে। ক্রিস স্নেইডারের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই ঘটানার সূত্রপাত। ক্রিস স্নেইডার প্রাইভেট বার্লিনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ প্রতিনিধি। জটিল সব রহস্য উদ্ধারে তার জুড়ি মেলা ভার। রহস্য উদ্ধারের পদ্ধতির নিজস্ব স্টাইলটি সে সব সময় গোপন রাখতেই পছন্দ করে। প্রাইভেটের সব থেকে কঠিন তদন্তগুলোর ভার স্নেইডারের ওপরই বর্তায়। আর এর ফলে তার শত্রুর সংখ্যাও অগণিত। হঠাৎ যখন স্নেইডারকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন প্রাইভেট বার্লিনের জন্য সবেচেয়ে বিপজ্জনক তদন্ত হিসেবে দেখা দেয় এই কেসটি। ম্যাটি এঞ্জেল প্রাইভেট বার্লিনের আরেকজন শীর্ষ প্রতিনিধি। সুশ্রী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ম্যাটি এঞ্জেল ক্রিসের সাবেক স্ত্রীও। ম্যাটি ক্রিসকে খোঁজার কাজে ব্যাপৃত হয়ে পড়ে। প্রথমেই সে চিহ্নিত করে তিনজন ব্যক্তিকে, যাদের সাথে ক্রিসের শত্রুতা ছিল। একজন হচ্ছে বিলিয়নের যে তার স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করেছে। আরেকজন ফুটবল খেলোয়াড় যে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত এবং অন্যজন হচ্ছে নাইটক্লাবের মালিক যার সাথে রাশিয়ান গু-াদের সম্পর্ক আছে। এই তিনজনের জন্যই ক্রিস স্নেইডার ছিল হুমকিস্বরূপ। এদের তিনজনই চেয়েছিল স্নেইডারের মৃত্যু। তাই সন্দেহের তীর এই তিনজনের দিকেই চলে যায়। ম্যাটি রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বিপজ্জনক জায়গাগুলোতে ছুটে যায়। জানতে পারে স্নেইডারের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু চরম সত্য যেগুলো সম্পর্ক থাকাকালীন ছিল অজানা। এই অজানা সত্যগুলো জানার পরই ম্যাটি বুঝতে পারে ক্রিস স্নেইডার কী ভয়াবহ বিপদের মুখে আছে। বইটির প্রতিটি পর্বে ছড়িয়ে আছে টান টান উত্তেজনারকর কিছু ঘটনা। হৃদয়গ্রাহী এই বইটি তাই উঠে এসেছে নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলারের তালিকায়।

সাসপেক্ট
রবার্ট ক্রেইসের ‘সাসপেক্ট’ বইটি নিউইয়র্ক টাইমসের এই সপ্তাহের বেস্ট সেলার। এলএপিডি পুলিশ অফিসার স্কট জেমস ও ম্যাগি নামক এক কুকুরকে ঘিরেই বইটির কাহিনী এগিয়ে গেছে। স্কট জেমসের জীবনে আট মাস আগে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনা জীবনটাকে ওলটপালট করে দেয়। তার চোখের সামনেই বন্ধু স্টিফেনেইকে আততায়ীরা খুন করে ফেলে। তাকেও মেরে ফেলা হচ্ছিল প্রায়। কিন্তু সে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও ওই ঘটনা তার মনে গভীর রেখাপাত করে। আংশিকভাবে বিপর্যস্ত স্কট কাজের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু জার্মানী শেপার্ড ম্যাগির সাথে দেখা হওয়ার পরপরই দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসতে থাকে। ম্যাগি ইরাক ও আফগানিস্তানে তিনটি ট্যুরে বিস্ফোরক অনুসন্ধান করেছে। কিন্তু স্কটের মতোই ম্যাগির চোখের সামনেই তার রক্ষণাবেক্ষণকারীর মৃত্যু ঘটে। স্কট ও ম্যাগির জীবনের ট্র্যাজিডি প্রায় একই। স্কট স্টেফিনির মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দায়ী মনে করত। কেননা স্টেফিনির মৃত্যুর আগে সে নিজের জান বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিল। ম্যাগিও আফগানিস্তানে তার রক্ষণাবেকক্ষণকারী যখন আততায়ী দ্বারা মারা গেল সেই যন্ত্রণা অনুভব করল। দু’জনের মানসিক যন্ত্রণা যেন একাকার হয়ে মিশে যেতে লাগল। দু’জনেই হয়ে উঠল পরম বন্ধু। তাদের দু’জনকে যখন অন্যরা সন্দেহের চোখে দেখত তখন তারা প্রমাণ করে যে তারাই সঠিক। এটি একটি চমৎকার গল্প। স্কট কখনই নিজেকে কুকুরের মালিক হিসেবে চিন্তা করেনি; কিন্তু সে শিখেছিল কিভাবে ম্যাগিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিভাবে তার সাথে কথা বলতে হয় এবং কিভাবে তাকে ভালবাসা দিতে হয়। আর ম্যাগিও শিখেছিল স্কটের মনোভাব। শারীরিক ভঙ্গিতে কী প্রকাশ পাচ্ছে তা। স্কটের কোন কষ্ট হলে ম্যাগি হৃদয়েও কান্নার রোল ওঠে। স্কট জেমসও ম্যাগিকে নিয়ে বইটির কাহিনী চমকপ্রদভাবে পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
হ্যাভেন ইজ ফর রিয়েল
স্বর্গ-নরক নিয়ে মানুষের মাঝে আছে অনেক জল্পনা-কল্পনা। স্বর্গ-নরকের অস্তিত্ব আছে কী নেই তা নিয়েও বহু বই রচিত হয়েছে। শিশু কল্টন জীবনরক্ষাকারী সার্জারি থেকে ফিরে এসে অবিস্মরণীয় কিছু কথা বলে যা প্রমাণ করে যে, সে স্বর্গ হতে ঘুরে এসেছে। হ্যাভেন ইজ ফর রিয়েল হচ্ছে একটি সত্য গল্প। ছোট্ট শহর নেবারস্ফার চার বছরের শিশু কল্টনকে যখন সার্জারির জন্য অচেতন করা হয় তখন সে স্বর্গে প্রবেশ করে অবচেতন অবস্থার মধ্য দিয়ে। সে বেঁচে যায়। তার বাবা ওয়েটিং রুমে তার জন্য প্রার্থনা করতে থাকে। বেঁচে ফেরার পর কল্টনের কথাবার্তা শুনে তার পরিবার প্রথমে অবিশ্বাস করলেও পরে সবকিছুই তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে আসলেই কল্টন স্বর্গ হতে ঘুরে এসেছে। কল্টন সাক্ষাৎ করেছিল তার অনাহুত বোনের সাথে যে জন্মের আগেই মারা যায়। এই ব্যাপারটি কল্টনের জানার কথা নয়। কিন্তু সে বলেছিল, আবার ত্রিশ বছর আগে মারা যাওয়া দাদার ব্যাপারেও সে কথা বলছিল যে ব্যাপারটিও কল্টনের পক্ষে জানা অসম্ভব। কল্টন একটি ঘোড়ার বর্ণনা দেয় যাতে শুধু জেশাস চড়ত। বর্ণনা দেয় ঈশ্বর ও তার চেয়ারের। একটি ছোট্ট শিশুর স্বর্গ দেখার অভিজ্ঞতা লেখক লিন ভিনসেন্ট চমৎকার ভাষায় তুলে ধরেছেন। বইটি পড়তে পড়তে কিছু কিছু বিষয় অলৌকিক মনে হলেও আবার অবিশ্বাস করতেও কষ্ট হবে। এক কথায় স্বর্গ দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত এই বইটি অসাধারণ।
মোঃ আরিফুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.