নির্যাতনের কবলে নারী

নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। এখানে ওখানে নারীর ওপর নানা ধরন ও মাত্রার নির্যাতন চলে পত্র-পত্রিকার পাতায় মাঝেমধ্যেই প্রকাশিত খবর থেকে সেটা বোঝা যায়।
কিশোরী-যুবতী যেমন নির্যাতিত বা লাঞ্ছিত হচ্ছে তেমনি অনেক শিশু বালিকাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । জীবনের ভালমন্দ বা কোনকিছুই যে বয়সে বোঝার কথা নয়, বোঝা সম্ভবও নয়; সেই শিশুবয়সই, সরলমনা কোন কোন বালিকাও দৃর্বৃত্ত-নরাধম পুরুষের লোভে পাশবিকতার শিকার হচ্ছে। এর চেয়ে অপরাধ আর কি হতে পারে। এর চেয়ে দুঃখ ও লজ্জার আর কি হতে পারে।
অনেক নারী বখাটেদের হাতে লাঞ্ছনা ও অপমানের শিকার হন। কোন তরুণীকে বিয়ে করতে চাইলে সে অসম্মতি জানালে বখাটে-দুর্বৃত্তরা এ্যাসিড ছুড়ে মারে তরুণীর দেহে। পাশাপাশি ঘটে যৌতুকের জন্য স্বামীগৃহে স্ত্রীর নির্যাতনের ঘটনা। তুচ্ছ কারণে স্ত্রীর লাঞ্ছিত বা নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে মাঝে মধ্যেই। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি রাজধানীতে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় পারিবারিক ঝগড়ার সময় এক গৃহবধূকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে তার স্বামী। এছাড়া উত্তরা এলাকায় এক গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলেই পুলিশের সন্দেহ। দুটি খবরই প্রকাশিত হয়েছে বুধবারের জনকণ্ঠে।
বিশ্ব এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে মানুষ সভ্য হয়ে উঠছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও চলেছি সামনে। আমাদের এই অগ্রযাত্রা একা শুধু পুরুষের নয়; নারী-পুরুষের সম্মিলিত সহযোগিতার মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলা। আমাদের উন্নয়ন বাস্তবে, কাজের ক্ষেত্রে আমরা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলছি। কিন্তু অনেকেই ঘরে নারীর স্বাধীনতা, নারীর মর্যাদা দিতে রাজি নয়। এ অবস্থা সমাজের সবস্তরেই। উন্নত বিশ্বসহ বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তুচ্ছ কারণে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারী। তাদের যেমন নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তেমনি দমন করেও রাখা হচ্ছে। নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে প্রকৃতপক্ষে সর্বাত্মক উন্নয়নকেই বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আজ ঘরেবাইরে নারী তার নিজের যোগ্যতায় উঠে আসছে। পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করছে বিভিন্ন পেশায়। তারা যেমন ঘরের কাজে তেমনি বাইরের কাজেও নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করছে। তাই নিজেদের স্বার্থেই, আমাদের অগ্রগতিকে বাধাহীন করতে নারীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সামান্য যৌতুকের জন্য অথবা অন্য যেসব কারণে নারীর প্রতি নির্যাতন করা হয়, তা বন্ধের জন্য আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্র আরও কঠোরতা প্রয়োজন। নারী নির্যাতনের কঠিন শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সঙ্গে প্রয়োজন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো। নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যে প্রভু আর ভৃত্যের নয়; তা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের সচেতনতা এবং আইনের নিশ্চিত প্রয়োগের মধ্য দিয়েই নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব। অপরাধী যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনবে। সেই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধও এ ক্ষেত্রে আজ জরুরী। তা না হলে বিশ্বের অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের স্বপ্নের স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। উন্নয়নসহযোগী নারীর অংশগ্রহণ সর্বস্তরে যেন সমানভাবে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.