কাঁদছে হুমায়ূনের কুতুবপুর গ্রাম

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাঁর জন্মস্থান নেত্রকোনোর কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কথা ভেবে এখানেই হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। সেই বিদ্যাপীঠে এখন শোকের ছায়া। কাঁদছে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ পুরো গ্রামের মানুষ।


মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাবার স্মরণে স্কুলটির নামকরণের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। পরে সে ভাবনা থেকে সরে এসে একাত্তরের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্কুলটির নাম রেখেছিলেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। ১৯৯৬ সাল থেকে এই বিদ্যাপীঠ যাত্রা শুরু করে।
স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের নকশা করা এই বিদ্যাপীঠ সব দিক থেকেই অনন্য—স্থাপত্যে, পাঠদানের রীতিতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণপ্রাচুর্যে। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগসম্পন্ন এই বিদ্যাপীঠটি সরকারি করার জন্য জীবদ্দশায় বহু চেষ্টা করেছেন, তবে তা আর হয়নি। হাল ছেড়ে তিনি নিজেই এর খরচের জোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বিদ্যাপীঠের ভবিষ্যত্ নিয়েও কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করলেন।
হুমায়ূনের মৃত্যুশোকে শোকাহত তাঁর পরিবারের সদস্যরা। চাচা আলতাফুর রহমান জানালেন, হুমায়ূন সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল এখানে এসেছিলেন। দেখভাল করেছেন সাড়ে তিন একর জমির ওপর গড়ে তোলা বিদ্যাপীঠের।
আজ শুক্রবার বিদ্যালয়ে ছুটি থাকলেও সকাল থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। বিদ্যাপীঠে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের শোক। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানালেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদ অন্তিম শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম নেত্রকোনার কুতুবপুরে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তাঁরা তিন ভাই ও তিন বোন। অন্য দুই ভাই হলেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব।

No comments

Powered by Blogger.