বাড়তি-কমতির নিয়ম by ফসিহ বণিক
ফড়িয়ারা কি সব ভেগে গেল? নাকি ঈশ্বর ভয়ে কাতর হয়ে তারা সবাই এখন বোচকায় মুড়িমুড়কি বেঁধে, লোটা-কম্বল নিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছে? তা না হলে গত কিছুদিন থেকে কারওয়ানবাজারে আলু ছাড়া তরিতরকারির দরদামে নিত্য তেজিভাব উধাও হয়ে বৃষ্টিভেজা কাকের মতো জবুথবু দশা প্রাপ্তি আদৌ সম্ভব কিনা এ নিয়ে অনেকের মতো আপনিও
গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে পারেন। এমন অবস্থা কিছুদিন আগে মোটা চাল নিয়ে হয়েছিল। হঠাৎ করে দেখা গেল সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিক্রির জন্য চাল বোঝাই করা ট্রাকগুলোর সামনে ক্রেতার ভিড় নেই। জানা গেল, বাজারে মোটা চালের দাম সরকারি বিক্রি মূল্যের চেয়ে কম হওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তখন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন এবং এতে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যারা দিন আনে দিন খায় তারা কিন্তু চালের দাম কমে যাওয়ায় খুশিই হয়েছিল। উৎপাদক কৃষক যারা কম দামে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে না বলে শঙ্কিত হওয়ার যথার্থ কারণ ছিল। একই পণ্যের মূল্য নিয়ে ভোক্তা এবং উৎপাদকের বিপরীতমুখী অবস্থান অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে থাকে। তবে তরিতরকারির দামে নিম্নগতি আসলে এসবের দাম ইতিমধ্যে বেজায় বেড়ে যাওয়ার অবস্থান থেকে স্বাভাবিক ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য বাজারের স্বাভাবিক ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া। মোটা চালের দাম যদি সাধারণ শ্রমিকদের নাগালের মধ্যে থাকে, তরিতরকারি ক্রয় যদি সামর্থ্যের মধ্যে থাকে এবং মাছ পাতে নেওয়ার মতো অবস্থায় থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক পুষ্টি লাভে সমর্থ হবে। এক সময় শেয়ারবাজার যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠেছিল তেমনিভাবে খাদ্যপণ্য, তরিতরকারির দামও রকেটগতিতে ওপরের দিকে উঠতেই থাকবে বলে যারা ধরে নিয়েছিলেন, তারা এসব পণ্যের দাম কিছুদিন থেকে কমে যাওয়ায় আশ্চর্য হতেই পারেন। আসলে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি স্বাভাবিক নিয়মেই হ্রাসকে ডেকে আনে। এটাই স্বাভাবিক। এটা না ঘটলেই বুঝতে হবে, এখানে আস্বাভাবিক কিছু ঘটছে। আর তখনই সিন্ডিকেটের প্রশ্ন সামনে চলে আসে।
নিয়ন্ত্রণহীন বাজার বা আকাশচুম্বী বাজার আর যাই হোক সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির লক্ষণ নয়। মানুষের কাছে পণ্যসেবা পেঁৗছে দেওয়ার জন্য তো বাজার। পণ্যের দাম যদি ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে একটা সময়ে পড়বেই। বিশেষত খাদ্যপণ্য ও তরিতরকারির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে অধিকাংশ মানুষের আয়ের প্রায় পুরোটাই চলে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। তখন অন্যান্য পণ্য কেনার মতো তাদের সামর্থ্যই আর অবশিষ্ট থাকে না। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো তো আর যুক্তরাষ্ট্রের মতো লাগামহীনভাবে ক্রেডিট বিতরণ করে না এবং সবার পকেটে তো ক্রেডিট কার্ড নেই যে মানুষ ধারের টাকায় ঘি খাবে।
সুতরাং মোটা চালের দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকদের অখুশি হওয়ার কারণ ঘটলেও সরকার সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা এখনও সরকারের ভর্তুকির অর্থেই লাভের মুখ দেখতে পারেন। আমরা দিলে দোষ হবে কেন!
তরিতরকারির দাম কমে যাওয়ায় বাজারে এক ধরনের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায়। বাজারের ওপর ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণটা আর একটু শিথিল করা গেলে কৃষকরা এখনকার চেয়েও বেশি অর্থ হাতে পেত এবং ভোক্তারাও কিছুটা ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারতেন স্থায়ীভাবে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা স্বাভাবিক পুষ্টি প্রাপ্তির পর্যায়ে উন্নতি হবে। মানুষ একই টাকা নিয়ে খাদ্যপণ্য ছাড়াও আরও পণ্য কেনার সামর্থ্য অর্জন করবে। অন্যান্য পণ্যের বিক্রিও বাড়বে। বাজার আরও গতিশীল হবে।
নিয়ন্ত্রণহীন বাজার বা আকাশচুম্বী বাজার আর যাই হোক সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির লক্ষণ নয়। মানুষের কাছে পণ্যসেবা পেঁৗছে দেওয়ার জন্য তো বাজার। পণ্যের দাম যদি ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে একটা সময়ে পড়বেই। বিশেষত খাদ্যপণ্য ও তরিতরকারির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে অধিকাংশ মানুষের আয়ের প্রায় পুরোটাই চলে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। তখন অন্যান্য পণ্য কেনার মতো তাদের সামর্থ্যই আর অবশিষ্ট থাকে না। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো তো আর যুক্তরাষ্ট্রের মতো লাগামহীনভাবে ক্রেডিট বিতরণ করে না এবং সবার পকেটে তো ক্রেডিট কার্ড নেই যে মানুষ ধারের টাকায় ঘি খাবে।
সুতরাং মোটা চালের দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকদের অখুশি হওয়ার কারণ ঘটলেও সরকার সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা এখনও সরকারের ভর্তুকির অর্থেই লাভের মুখ দেখতে পারেন। আমরা দিলে দোষ হবে কেন!
তরিতরকারির দাম কমে যাওয়ায় বাজারে এক ধরনের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায়। বাজারের ওপর ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণটা আর একটু শিথিল করা গেলে কৃষকরা এখনকার চেয়েও বেশি অর্থ হাতে পেত এবং ভোক্তারাও কিছুটা ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারতেন স্থায়ীভাবে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা স্বাভাবিক পুষ্টি প্রাপ্তির পর্যায়ে উন্নতি হবে। মানুষ একই টাকা নিয়ে খাদ্যপণ্য ছাড়াও আরও পণ্য কেনার সামর্থ্য অর্জন করবে। অন্যান্য পণ্যের বিক্রিও বাড়বে। বাজার আরও গতিশীল হবে।
No comments