উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা-অনন্য সাফল্যে অভিনন্দন

সাফল্যের সিংহ দরজা অতিক্রম করে উচ্চশিক্ষার নতুন ভুবনে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়া সাত লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীকে সমকাল পরিবারের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বিশেষভাবে অভিনন্দন সর্বোচ্চ ফল জিপিএ ৫ পাওয়া ৬১ হাজার ১৬২ জন শিক্ষার্থীকে। তাদের অনন্য কৃতিত্ব পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে করেছে গর্বিত।


এ ধারায় তারা পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য নব নব সাফল্য অর্জন করবে, এ প্রত্যাশা থাকবে। এ বছরের পরীক্ষায় পাসের হারে রেকর্ড হয়েছে, জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাতেও রেকর্ড। দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশে পরীক্ষক ও শিক্ষা বোর্ডগুলো দেখিয়েছে দক্ষতা। এসবই প্রত্যাশিত। প্রথমবারের মতো বাংলা প্রথমপত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালু হয়েছে এবং আটটি শিক্ষা বোর্ডে এ বিষয়ে পাসের হার ৯৯.০৪ শতাংশ। এ ফল অন্য বিষয়গুলোতে এ পদ্ধতি চালু করার কাজ সহজ করে দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করতেই পারি যে, পাসের হারও পেঁৗছে যাবে প্রায় শত ভাগে। আমরা যেমন স্কুলের নিম্ন শ্রেণীতে ড্রপ আউট বা ঝরে পড়া দেখতে চাই না, তেমনি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যারা কলেজ পর্যায়ে পেঁৗছায় তারাও যেন এ পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে সেটাও নিশ্চিত করা চাই। নরসিংদীর হাওয়া আক্তার জুঁই এ ক্ষেত্রে সবার প্রেরণা হতেই পারেন।
আমাদের অনেক প্রত্যাশা পূরণ হয়ে চলেছে। আবার যা প্রত্যাশিত নয়_ বরাবরের মতো সেটাও ঘটে চলেছে। ক্যাডেট কলেজগুলো প্রতি বছর অসাধারণ ফল করে। রাজধানী ঢাকা এবং কয়েকটি বড় শহরের প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোর ফলও হয় নজরকাড়া। এ কৃতিত্বের জন্য তারা প্রশংসিত হবেই। তারা একটি মানদণ্ড স্থির করে দিয়েছে এবং সেখানে পেঁৗছানোর জন্য চলে নিরন্তর সাধনা। আশার কথা যে, অপেক্ষাকৃত ছোট জেলা শহর নরসিংদীর স্বল্প পরিচিত 'আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ' জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। কিন্তু এটা ব্যতিক্রম। প্রত্যন্ত শহর, বন্দর ও গ্রামে ছড়িয়ে থাকা কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের ফল এখনও সাধারণ মানের। বলা যায় যে, শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটছে শহর ও গ্রামের সর্বত্র, কিন্তু মানের সমতার বিচারে ব্যবধান দুস্তর। এটা কাটিয়ে ওঠার কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাদের সবার সামনে। পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নিবিড় পরিশ্রমই এর মূলে। শ্রেণীকক্ষ ও পাঠ্যবইয়ের প্রতি তাদের মনোযোগ যত বাড়তে থাকবে, ফল তত ভালো হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রশংসনীয়, এমন অভিমত সবাই দিচ্ছেন। একই সঙ্গে রয়েছে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির তাগিদ। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করার লক্ষ্য অর্জন করার প্রধান শর্ত হচ্ছে তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তরফে আরও সক্রিয়তা থাকা চাই। টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জনকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম হোসেন সরকার বলেছেন, সাফল্যের পূর্বশর্ত স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা। শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের যেমন এসব গুণ থাকতে হবে, একইভাবে তা প্রত্যাশিত সমাজের কাছ থেকেও। এভাবে চলতে পারলেই কেবল উচ্চ মাধ্যমিক স্তর অতিক্রমকারী শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানলাভের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।
 

No comments

Powered by Blogger.